ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ভাষা সৈনিক দবিরুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী আজ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ভাষা সৈনিক দবিরুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী আজ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ভাষা সৈনিক এ্যাড. দবিরুল ইসলামের জন্মশতবার্ষিকী আজ। ১৯২২ সালের ১৩ মার্চের এই দিনে তিনি তৎকালীনঠাকুরগাঁও মহকুমার ঐতিহ্যেবাহীবামুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে তিনি এক অবিস্মরনীয় নাম। কিংবদন্তি এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতিই শুধু নন তিনি  আওয়ামীলীগেরপ্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদেরও একজন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর স্বাধীকার আন্দোলনে পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পরে ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত দবিরুল ইসলাম। তিনি সর্ব প্রথম ছাত্রনেতা হিসেবে জেলখানায় বন্দি হন। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রামে ঠাকুরগাঁওয়ের দবিরুল ইসলাম বারবার কারারুদ্ধ হয়ে নির্যাতনের শিকারে অকালেই প্রাণ হারিয়েছেন।

বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা রাখা দবিরুল ইসলাম তখন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহপাঠি। ১৯৪৯ থেকে ৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জেলা সুদুর ঠাকুরগাঁওয়ে সেই সময় মাতৃভাষা সংগ্রামের সাথে জড়িত ছিলেন দবিরুল ইসলাম। ১৯৪৯ সালে ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা হলে নিজ জেলায় চলে আসেন দবিরুল ইসলাম। ওই বছরের ১৩ মার্চ পূর্ববঙ্গ বিশেষ ক্ষমতা অর্ডিন্যান্স বলে গ্রেফতার করে দবিরুল ইসলামকে। দিনাজপুর কারাগারে কারারুদ্ধ হন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষ সরকারি মুসলিমলীগ কর্তাদের ইঙ্গিতেই দবিরুল ইসলামের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এ সংবাদ শুনে দবিরুল ইসলামকে দেখতে দিনাজপুর ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তখন ১৪৪ ধারা জারি থাকায় বঙ্গবন্ধু তাঁর সাথে দেখা করতে পারেনি। কারাগারে ঘন্টা বাজিয়ে অকথ্য সেই নির্যাতনের কথা যে কেউ শুনলে আতকে উঠবে। এসব মনে হলে নিস্তব্দ হয়ে যান দবিরুল ইসলামের স্ত্রী আবেদা খাতুন।

এর পর ৫২ ভাষা আন্দোলনে এ্যাড. দবিরুল ইসলাম তৎকালীন দিনাজপুর জেলায় আসেন আইন পেশায়। তখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সক্রিয় ভাবে ভুমিকা পালন করায় তৎকালীন সরকার দবিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে রাখেন। সেই সময়ও তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৯৬১ সালের ১৩ জানুয়ারি অকালে ঝরে পড়েন দবিরুল ইসলাম। ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে এ্যাড. দবিরুল ইসলাম যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে এমএলএ নির্বাচিত হন। 

১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে ঢাকা এবং উত্তরাঞ্চলের সবকটি জেলায় ভাষা আন্দোলনসহ পাকিস্তান বিরোধী সবকয়টি আন্দোলনে তাঁর সাহসী ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এর আগে মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রাবস্থায় তিনি উত্তরাঞ্চলে ভূমিহীন কৃষকদের আন্দোলনেও শক্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

তাঁর সহপাঠী বামুনিয়া গ্রামের দেরেম আলী এ ব্যাপারে জানান, ‘দবিরুল ছোটকাল থেকেই খুব প্রতিবাদী টাইপের ছেলে ছিল।কোন অন্যায় ও জুলুম সহ্য করতে পারতোনা। সে যে একদিন অনেক বড় একজন নেতা হবে,তা আমরা ছোটবেলায় খুব বলাবলি করতাম'।সহপাঠীদের এই ভবিষ্যৎবাণী বৃথা যেতে দেননিদবিরুল ইসলাম।১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের নির্বাচনে খুব অল্প বয়সে বিপুল ভোটে এমএলএ নির্বাচিত হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এই ছাত্রনেতাদবিরুল ইসলাম।’

তৎকালীন সময়ে অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে তরুণ ছাত্রনেতাদবিরুলের খ্যাতি ছিল চারদিকে। দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বিএক্লাশের ছাত্র থাকা অবস্থায় ঢাকায়  গণতান্ত্রিক যুবলীগের সম্মেলনে তিনি যে আগুনঝরা বক্তব্য দিয়েছিলেন তাতে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য ছাত্রনেতাদের নজরে পড়ে যান দবিরুল ইসলাম; যার ফলে জেলে অন্তরীন থাকা অবস্থাতেও বঙ্গবন্ধু  তাঁকে ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি বানিয়েছিলেন।

'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ কর্মচারীদের নায্য আন্দোলন,পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন,যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন এ সবের পিছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন এই মেধাবী ও তেজোদীপ্তছাত্রনেতাদবিরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বদরুদ্দীন ওমর, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ও এম আর আখতার মুকুলের লেখা বিভিন্ন বইতে তাঁর অবদান তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে আমৃত্যু জেল-জুলুম ও নির্যাতন ভোগকারী এই অসীম অকুতোভয় সাহসী মানুষটি মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই ১৯৬১ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন।বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ঠাকুরগাঁও সফরে আসলে তাঁর প্রিয় বন্ধু ও সহচরকে স্মরণ রাখতে পাবলিক লাইব্রেরিচত্ত্বরে'দবিরুল ইসলাম স্মৃতি ফলক,বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীনএসডিও এবং আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে; যেটিআজোদবিরুল ইসলামের স্মৃতিকে বহন করে চলছে।

তিনি বৃহত্তর দিনাজপুরের তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার বালিয়াাডাঙ্গী থানার পাড়িয়া ইউনিয়নের বামুনিয়া গ্রামের ১৯২২ সালে ১৩ মার্চ এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ্যাড. দবিরুল ইসলামের ছোট ছেলে মো: আহসান উল্ল্যাহ ফিলিপের উদ্যোগে শহরে পোষ্টার ও ফেসটুন টাঙ্গানো হয়। অপরদিকে জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে সকালে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও এ্যাড. দবিরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর এলাকার গণমানুষের দাবী দেশমাতৃকার মহান এই ক্ষণজন্মা ছাত্রনেতার স্মরণে ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হোক,এতে তাঁর অবদানের প্রতি যেমন সম্মান জানানো হবে তেমনিভাবে সংগ্রামী মানুষের মাঝে তিনি যুগযুগ বেঁচে থাকবেন।

এসএ/