দেখা মিলবে তরুন ও নতুন মুখ
মন্ত্রিসভায় আসছে বড় রদবদল
আজাহারুল ইসলাম সুজন
প্রকাশ: ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, ১০ই জানুয়ারী ২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের ২৯৮ আসনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২২ জন, জাতীয় পার্টির ১১ জন, স্বতন্ত্র ৬২ জন ও অন্যান্য ৩ জন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবার সরকার গঠনের পালা। সবার চোখ এখন নতুন মন্ত্রিসভার দিকে। সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্র এবারের মন্ত্রিসভায় বাদ পড়ছেন কারা? নতুন মুখ হিসেবে কাদের দেখা যাবে মন্ত্রীসভায়? কে পাবেন কোন দপ্তরের দায়িত্ব? এনিয়ে চলছে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা।
আগেই বর্তমান মন্ত্রিসভার তিনজন প্রতিমন্ত্রীকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি আরও তিনজন প্রতিমন্ত্রী। ফলে তাদের দপ্তরে নিশ্চিতভাবে দেখা যাবে নতুন মুখ। বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে কেউ কেউ আবার ছিটকে পড়তে পারে। কেননা বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কয়েকজনের প্রতিও বিরক্ত দলীয় সভাপতি। তাদের বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি।
বঙ্গভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে সন্ধ্যা ৭টায় নতুন মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এর আগে বুধবার সকাল ১০ টায় শপথ গ্রহণ করেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ বাক্য পাঠ করাবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় এমন ব্যক্তিরাই প্রাধান্য পেতে পারেন, যারা সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
নতুন মন্ত্রিসভা কেমন হতে পারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা আছে, তা পূরণে যাদের যোগ্য মনে করবেন, তাদের সমন্বয়েই মন্ত্রীসভা গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রিসভায়ও স্থান পেতে পারেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ড. মো. হাছান মাহমুদ, আনিসুল হক, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তাজুল ইসলাম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নসরুল হামিদ, মো. শাহরিয়ার আলম, জুনাইদ আহমেদ পলক।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোয় কারা থাকবেন, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রণালয় নিয়ে শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েকজনের নাম। অর্থমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, জামালপুর-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নতুন মন্ত্রিসভায় আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন। আরেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনিও নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রিসভায় থাকবেন কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন আছে।
এছাড়া টেকনোক্র্যাট কোটায় দেখা যেতে পারে দু-একজন অর্থনীতিবিদকেও, যারা অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় কাজ করবেন। পাশাপাশি সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদিকও মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আলোচনা আছে, ড. সাদিককে শিক্ষা এবং সাজ্জাদুল হাসানকে বেসামরিক বিমান পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
এবারে মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে দেখা যেতে পারে। এছাড়া মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন সাতবারের নির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মির্জা আজম। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন, নাকি চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তা নিয়েও আলোচনা আছে।
অনেকে বলছেন, এবারের মন্ত্রীসভায় দেখা যেতে পারে বেশ কয়েকটি তরুণ মুখ। সে ক্ষেত্রে মাশরাফি বিন মর্তুজার নাম থাকতে পারে। আর সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপর।
সূত্র বলছে, ১৪ দলের শরিকদের মন্ত্রিসভায় না রাখার সম্ভাবনাই বেশি। জাতীয় পার্টিও এবার মন্ত্রিসভায় থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বুধবার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নিজেদের সংসদ সদস্যরা অংশ নিচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জি এম কাদেরের অফিসে আমরা বৈঠকে বসব। বৈঠকে আলাপ-আলোচনার করে শপথের বিষয়টি ঠিক করা হবে।
জেবি/এজে