টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ডুবতে বসেছে কলাচাষিদের ভাগ্য


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, ১০ই জানুয়ারী ২০২৪


টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ডুবতে বসেছে কলাচাষিদের ভাগ্য
কলা বাগান। ছবি: সংগৃহীত

এক বছর মেয়াদি ফসল কলা। বারো মাস লাভের অংক কষে কৃষকের ফল দাঁড়াচ্ছে লোকসানের ঘরে। বাগানেই পেকে পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কলা। স্তুপ করে রাখা হচ্ছে বাগানের পাশে। মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য কলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে গবাদি পশুও। 


কলার দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকের কপালে চিন্তা খেলা করছে। ভাবাচ্ছে চাষিদের। চাষে ভাটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। নিরবে কাঁদছেন কৃষক। তাঁদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। 


আরও পড়ুন: শ্রীনগরে আগাম ধানের চারা রোপণ শুরু


ঘাটাইল উপজেলার আয়তনের একতৃতীয়াংশই হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বারোমাসি এ ফসলের ফলন হয়েছে বাম্পার। 


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর কলার চাষ হয়েছে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এখানকার কৃষকের ফলানো কলা পুষ্টির চাদিহা মেটায় রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের। 


এদিকে কলার বাজার পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক। চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।


উপজেলার পাহাড়ী সাত ইউনিয়ন সাগরদীঘি, দেওপাড়া, ধলাপাড়া, লক্ষিন্দর রসুলপুর, সন্ধানপুর ও সংগ্রামপুর এসব এলাকার কৃষকদের প্রধান অর্থকরি ফসল হচ্ছে কলা। সাগরদীঘি এলাকায় কলার ২০ জন বড় চাষি রয়েছেন। অধিকাংশ চাষিই চাষ করেন সাগরকলা। তাদের একজন নাসির সিকদার। তিনি জানান, এ বছর ৮৫ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। গত বছর কলার যে ছড়া বিক্রি হয়েছে ৫২০ টাকায়, এ বছর একই ধরনের ছড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫০ টাকায়। তিনি বলেন, লাভ নয়, আসলের ঘর থেকে লোকসান হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। ২৯ বছর ধরে কলা চাষের সঙ্গে জড়িত তিনি। তাঁর ভাষ্য, কলার বাজারে এমন ধ্বস এর আগে দেখেননি। 


কৃষক আব্দুল কাদের জানান, এ বছর তিনি ১০১ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। কলা ব্যবসায়িরা তাদের জানিয়েছেন গার্মেন্টে এখন আর নাকি নাস্তার সঙ্গে কলা দেওয়া হয়না। আর কিছুদিন আগে হরতাল এবং অবরোধের কারণে সঠিক সময়ে তারা কলা বিক্রি করতে পারেননি। তাই কলা বাগানে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর ভাষ্য, গরু-ছাগলেও কলা খাচ্ছ না। সব মিলিয়ে প্রায় তাঁর ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।


আরও পড়ুন: শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশাছন্ন আবহাওয়ায় আলু চাষীদের করণীয়

 

কথা হয় কলা ব্যবসায়ি হারুন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় সব গার্মেন্টে টিফিন বন্ধ রয়েছে। কলার বড় একটা চালান আমরা গার্মেন্টে দিতাম, এখন আর তা হচ্ছে না। ঢাকার পাইকারী বাজারেও খুব একটা টান নেই কলার। কলার দাম গত বছর এই দিনে যা ছিল এ বছর তার অর্ধেকে নেমে এসছে। 


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, টাঙ্গাইল জেলায় মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলা হচ্ছে কলা চাষের জন্য বিখ্যাত। কলা এমন একটা ফল যা সারা বছরই লাগে। প্রকৃতপক্ষে আমরা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। বাজারটা নির্ভর করে সাধারণত মার্কেটিং পলেছির উপর। কৃষকদের বাঁচানোর জন্য বাজার নিয়ন্ত্রনের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। 


আরএক্স/