নির্বাচন পূর্ব অস্থিরতার জন্য রামু বৌদ্ধ বিহারে আগুন


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:০৪ অপরাহ্ন, ১১ই জানুয়ারী ২০২৪


নির্বাচন পূর্ব অস্থিরতার জন্য রামু বৌদ্ধ বিহারে আগুন
গ্রেফতারকৃত যুবক মো. আবদুল ইয়াছির শাহজাহান। ছবি: জনবাণী

কক্সবাজারের রামু সদরের বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ‘নির্বাচন পূর্ব অস্থিরতার জন্য পরিকল্পিত নাশকতা’ দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অগ্নিসংযোগকারি যুবক গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে নাশকতার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। গ্রেফতার করা যুবক বিএনপির সক্রিয় কর্মী এবং ২৮ অক্টোবরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নাশকতায় সক্রিয় অংশ গ্রহণের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।


পুলিশ বলছে, বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগের আগে এই যুবক যে ফোন নম্বরটি ব্যবহার করে ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগকে বিভ্রান্ত করেছে ওই ফোন সিমও উদ্ধার করা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম।


আরও পড়ুন: মেরিন ড্রাইভে পর্যটকের জন্য ছাদখোলা বাসের উদ্বোধন


গ্রেফতার যুবক মো. আবদুল ইয়াছির শাহজাহান (২২) রামু উপজেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নের পূর্ব মেরুংলা এলাকার আবদুল করিমের ছেলে। আবদুল করিম ওই ইউনিয়নের বিএনপির নেতা বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।


সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, গত ৫ জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে রামু উপজেলা সদরের চেরাংঘাটাস্থ রাখাইন সম্প্রদায়ের দেড়শ বছরের পুরানো কাঠের তৈরী ‘উসাইচেন বৌদ্ধ বিহারে (বড় ক্যাং) আগুন দেয়া হয়। আগুনে বিহারটির কাঠের সিঁড়ির অংশ পুঁড়ে গেলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়নি। ঘটনার পর বিহারের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে একটি নিদিষ্ট ফোন নম্বর থেকে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করে জানানো হয় ঈদগড় বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে দ্রুত গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হয় ফায়ার সার্ভিস। গাড়িটি জোয়ারিয়ানালা অতিক্রম করার পর একই ফোন নম্বর থেকে আবারও ফোন আসে। জানতে চাওয়া হয় কতদূরে রয়েছেন এবং তাড়াতাড়ি আসতে বলা হয়। 


অবস্থান ফোনের ব্যক্তিকে জানিয়ে দ্রুত যাওয়ার হচ্ছে বলে জানানো হয়। কিন্তু ঈদগড় বাজারে পৌঁছার পর কোথাও আগুন দেখা যায়নি। এসময় নম্বরটিতে ফোন করা হলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিস ফিরে আসে। আগুন দেয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে বিদ্যুৎ বিভাগেও ফোন করা হয় একই নম্বরটি থেকে। জানানো হয় রামু বড় ক্যাং এ আগুন লেগেছে বিদ্যুৎ বন্ধ না করলে আগুন ব্যাপকতা বাড়বে। বিদ্যুৎ বিভাগ কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। একই সময়ে বিহারে প্রবেশ আগুন দেয়া হয়েছি।


পুলিশ সুপার জানান, সিসিটিভির ফুটেজ, ফোন নম্বর সহ নানা সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে শনাক্ত করা হয় এই যুবককে। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেফতার করা হয় এই যুবককে। পরে ঘটনাস্থলে এসে যুবকের দেয়া তথ্য মতে উদ্ধার করা হয় সীমটিও।


পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, যে ফোন নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে তার ভিন্ন কারও নামে রেজিষ্ট্রাড করা। নম্বরটি দীর্ঘদিন সচল থাকলেও ঘটনার দিনই ব্যবহার হয়েছে। যেখান থেকে ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগে ফোন করা হয়েছে। মুলত পূর্ব পরিকল্পনা মতে কেবল নাশকতায় ব্যবহারের জন্য এই সীমটি নেয়া হয়েছে। বিএনপির এই কর্মী বিভিন্ন সময় নাশকতার মুলক ঘটনা ঘটিয়েছে আসছে। যা সে নিজেই তার ফেসবুকে আপলোডও করেছে। রামুতে বিহারের ঘটনাটিও পরিকল্পিত। মুলত নির্বাচন পূর্ব সম্প্রদায়িক ঘটনা সূত্রপাত, বিদেশীদের মনযোগ আকর্ষণ এবং নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতার জন্য এমন ঘটনাটি ঘটানো হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শাহজাহান।


আরও পড়ুন: রামু বৌদ্ধ বিহারে ‘অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের’ আগুন


এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মামলার আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলেই জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত কিনা বা কারা জড়িত।


২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৩০টি বাড়িত হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার ঘটনায় পুলিশের করা ১৮টি মামলার ৯ বছরে বিচার হয়নি।



আরএক্স/