শালবনে কুঠার বাহিনীর থাবা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৩০ অপরাহ্ন, ১৭ই জানুয়ারী ২০২৪


শালবনে কুঠার বাহিনীর থাবা
ছবি: জনবাণী

শাল বাংলাদেশের পরিচিত গাছ। গোড়া থেকে চারা গজায় বলে এই গাছকে গজারি নামে চেনে ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ। এ গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। অথচ শালবনে খুশি মনে চলছে কুঠারের আঘাত। কি দিন, কি রাত প্রতিনিয়ত শালবনে রক্ত ঝরছে।


স্থানীয়রা জানান, কুঠার বাহিনীর সঙ্গে নাকি সথ্য রয়েছে রক্ষকদের। দিনেও নাকি তারা চলে চোখ বন্ধ করে। প্রকৃতির আশীর্বাদে এ বৃক্ষের ওপর এখন আঘাত চলছে অতীতের ন্যায় জোরেশোরে। ঘাটাইল উপজেলার সংরক্ষিত বনের শাল-গজারি কাটার যেন উৎসব চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার কাভার্ডভ্যানের ভেতর থেকে ১০৫টি গজারিগাছের টুকরো জব্দ করে বন বিভাগ। ওই দিনই একটি মিনি ট্রাকভর্তি গজারি এবং আকাশমনির ২১৭ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়।


আরও পড়ুন: শৈত্য প্রবাহে পাবনায় জনজীবন বিপর্যস্ত 


বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসের তথ্যমতে, ঘাটাইল উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। ৯০-এর দশকে বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি আঘাত হানে প্রাকৃতিক এ বনে। দেশি বৃক্ষের স্থানে ক্রমে জায়গা দখল করে নেয় বিদেশি বৃক্ষ। বিলুপ্তির পথে প্রাকৃতিক অন্য সব গাছের সঙ্গে শাল-গজারিও। অবশিষ্ট যা ছিল, তাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর জন্য এলাকাবাসী দায়ী করলেন বন বিভাগের লোকসহ অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী এবং কাঠচোর চক্রকে।


একটা সময় কাঠচোর চক্র কেবল রাতে শালগাছ কাটত। কিন্তু সরেজমিন বন বিভাগের বটতলা ও ঝড়কা বিটের অন্তর্গত বগা, খাগরাটা, কুশারিয়া ও ছনখোলা এলাকায় দেখা যায়, লোকচক্ষুর আড়ালে


নয়, প্রকাশ্যে খুশি মনে এক শ্রেণির লোক নিষিদ্ধ বৃক্ষ কেটে যাচ্ছে। বটতলী ও ঝড়কা বিট অফিসের ছনখোলা ও কুশারিয়া এলাকা থেকে গত শনিবার একটি কাভার্ডভ্যানবোঝাই গজারি গাছ এবং মিনি ট্রাকবোঝাই গজারি এবং আকাশমনির জ্বালানি কাঠ জব্দ করে বন বিভাগ।


বন বিভাগের ওই দুই বিটের দায়িত্বে আছেন হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, কাভার্ডভ্যানটি বটতলী বিটের ছনখোলা এলাকা থেকে আটক করা হয়। তবে ভ্যানের চালক বা অন্য কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কাভার্ডভ্যানে গজারি গাছ ছিল ১০৫টি। একইদিন ঝড়কা বিটের কুশারিয়া এলাকা থেকে


মিনি ট্রাকবোঝাই গজারি এবং আকাশমনির জ্বালানি কাঠ আটক করা হয়। যাতে ২১৭ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ ছিল। এ ব্যাপারে আবদুল হালিম নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।


গাছসহ দুটি গাড়িই জব্দ করে ধলাপাড়া রেগু অফিসে রাখা হয়েছে। হেলাল উদ্দিন আরও জানান, ৩ জানুয়ারি বটতলী বিটের অধীনে বড় আকারের আরও সাত টুকরো গজারি গাছ আটক করা হয়। জানা যায়, শাল-গজারি বন সুরক্ষিত রাখতে ২০১৯- ২০ অর্থবছরে ঘাটাইল উপজেলায় সুফল প্রকল্প চালু করে সরকার।


বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, প্রাকৃতিক বন রক্ষায় বেলা কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মধুপুরের শালবন রক্ষায় হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে। রিট পিটিশনের জন্য আদালত একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। তথ্য-প্রমাণ পেলে ঘাটাইলের বন রক্ষায়ও একই কাজ করা হবে।


আরও পড়ুন: শীতের দাপটে কাঁপছে দেশ, তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে


শালবন উজাড় করে প্রকৃতি ধ্বংস করার বিষয়ে কথা হয় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার তিনি বলেন, 'শালবন হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। জীববৈচিত্র্যের ব্যালেঞ্চ (ভারসাম্য) রক্ষার জন্য শালবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের পক্ষে এ ধরনের শালবন সৃজন করা অনেকটাই অসম্ভব। তাই এ বন রক্ষার্থে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।'


গজারিগাছ জব্দ করার কথা স্বীকার করেন ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদ রহমান। তাঁর ভাষ্য, বন বিভাগের জনবল কম। এ গাছ রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।


আরএক্স/