‘বঙ্গবন্ধু সকল যুগেই প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন’
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শুধু ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকেই অনুপ্রাণিত করেছিল তা নয়, বরং এই ভাষণ যুগে যুগে বিশ্বের সকল অবহেলিত, বঞ্চিত ও স্বাধীনতাকামী জাতি-গোষ্ঠীকে অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকবে। এ কারণেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিষ্টারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সকল যুগেই প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন। তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাঁর উদার, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে।’
সোমবার (১৪ মার্চ) বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ২য় তলায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় আগামী ২২ মার্চ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে ১০টি জেলার প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে (গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, নড়াইল, খুলনা, খুলনা মহানগর, বাগেরহাট ও পিরোজপুর) অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এই মার্চ মাস আমাদের মহান স্বাধীনতার মাস, এ মাসের ১৭ তারিখ টুঙ্গিপাড়ার এক অজপাড়াগায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন স্বাধীনতার মহানায়ক, স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ মাসেই ধ্বনিত হয়েছিল স্বাধীনতার অমর বাণী, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” স্বাধীনতা শব্দটি থেকে, বা স্বাধীনতার অর্থ থেকে বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করা সম্ভব না। চেষ্টা যে হয় নাই তা না। চেষ্টা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের পর। ২১ বছর আমরা জয় বাংলা বলতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই ১৯৭১ সালে গুটি গুটি পায়ে উদয় হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার লাল সূর্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৫৬ বছর বয়সের ২৩টি বছরই কেটেছে এই স্বাধীনতার সংগ্রামে, জেল খানার সেই নিভৃত কুটিরে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই বঙ্গবন্ধুকেই সপরিবারে শিকার হতে হয়েছিল ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হিংস্রতার ও বর্বরতার। ফিরে যাই ৭ই মার্চের ভাষণে, আপনারা জানেন, কি পরিস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই বিখ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন? ১৯৭০-এর ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু আকস্মিক এক বেতার ঘোষণায় ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান। ঐ দিন পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি থাকি আর না থাকি, বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি না থাকলেও আমার সহকর্মীরা নেতৃত্ব দেবেন। যে কোন মূল্যে আন্দোলন চালাইয়া যেতে হবে ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।” এই রকম নিলোর্ভ, নির্মোহ ছিল আমাদের জাতির পিতা! এ কঠিন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্সে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষকে চারটি শর্ত দিয়ে ভাষণের শেষাংশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
যুবলীগ চেয়ারম্যান ১৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য ১৭ই মার্চ দেশব্যাপী সকল মসজিদে দোয়া, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা, ১৮ মার্চ যুবলীগের সকল ইউনিটে যুবসমাবেশ ও আলোচনা সভা, ১৯ মার্চ দেশব্যাপী সকল ইউনিটে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তদান কর্মসূচি ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা। ২০ মার্চ দেশব্যাপী সকল ইউনিটে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২১ মার্চ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ নানা কর্মসূচি।
এসএ/