হুইলচেয়ারে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন জ্যোতি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


হুইলচেয়ারে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন জ্যোতি

প্রত্যেকের সফলতার পিছনে থাকে কত না বলা গল্প। আজকে আমরা জ্যোতি নামক একজন ফ্রিল্যান্সারের গল্প শুনব। জ্যোতি আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো সুস্থ সবল নয়। মায়োপ্যাথি নামক রোগের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করে চলেছেন নিয়মিত। কিন্তু প্রবল ইচ্ছা আর ধৈর্যের মাধ্যমে তিনি সকল বাধা উপেক্ষা করে নিজের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করে চলেছেন। মায়োপ্যাথি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে সব সময় তাকে হুইলচেয়ারের সাহায্য নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। ঢাকায় তার মা, দাদা আর ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন। তার ছোট বোনও একই রোগে আক্রান্ত। অসুস্থতার জন্য এসএসসি পাস করার পর তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছেন।

যেভাবে শুরু হলো পথচলা: তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী হওয়ার সুবাদে শারীরিক অক্ষমদের নিয়ে কাজ করে এমন একটা সংগঠন (বি-স্ক্যান) এর সঙ্গে যুক্ত হন ২০১১ সালে। এই সংগঠনের মাধ্যমে তার বেশ কিছু শারীরিক অক্ষম মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হয়। যারা শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে নানা সেক্টরে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলেন। সে সকল মানুষদের গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হন জোত্যি। বিশেষ করে মুহাম্মদ জাহিদ, আকবার হোসাইন, শর্মী রয় তাদের মধ্যে অন্যতম, যাদের দেখে অনলাইনে কাজ করার আগ্রহ জন্মে।

বি-স্ক্যানের সঙ্গে টুকটাক লেখালেখির কাজ করে পার হয়ে যায় কয়েক বছর। তারপর ২০১৫ সালের দিকে বি-স্ক্যানের সাবরিনা আর সালমা নামক দুজনের সুপারিশে শাহ আলম নামক একজনের কাছে গ্রাফিক্সের অন্যতম সফটওয়ার এডোবি ফটোশপ শেখা শুরু করেন। এখান থেকেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের সঙ্গে পরিচয়।

এরপর তিনি ইউটিউব থেকে শেখা শুরু করেন। বিভিন্ন মেন্টরের ফ্রি ভিডিওগুলো দেখতেন ইউটিউব থেকেই। বিশেষ করে লার্ন উইথ সোহাগ ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগুলো দেখতেন। এ ছাড়া রিযওয়ানুর রহমান নামক একজন ডিজাইনারের কাছে কোর্স করেন।শারীরিক অসুস্থতার জন্য শেখায় ছিল অনেক গ্যাপ। এগুলো কাটিয়ে নিয়মিত প্র্যাক্টিস করা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। ইউটিউবের ফ্রি টিউটোরিয়াল, বিভিন্ন ফ্রি-পেইড কোর্স করেই ডিজাইন স্কিলকে করেছেন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে কাজ করার উপযুক্ত।

জীবন পরিবর্তনে ফ্রিল্যান্সিং: জ্যোতির ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ধারণা আসে বিভিন্ন গ্ৰুপে ফ্রিল্যান্সারদের শেয়ার করা পোস্ট, ভিডিও ইত্যাদি থেকে। এখান থেকেই তিনি মোটামুটি একটা ধারণা পান যে কীভাবে কি করতে হয়।

জ্যোতি হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী হওয়ায় নিয়মিত বাহিরে বের হতে পারেন না। যে কারণে খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। কিছুটা টাইম পাস করার জন্য শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। শুরুতে তার অনেক বেশি স্ট্রাগল করতে হয়েছে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি সাপোর্ট বা গাইড লাইন দেওয়া লোকের অভাবের কারণে। এরপর যখন দেখলেন এখন থেকে অল্প অল্প করে ইনকাম আসা শুরু করেছে তখন থেকে নিজের হাত খচরের পাশাপাশি শখ পূরণ করার জন্য শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে তিনি পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করা শুরু করলেন। সবকিছু দেখে জ্যোতির নিজের আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করল। আর এভাবেই ফ্রিল্যান্সিং হয়ে উঠল টাইম পাস থেকে ফুল টাইম পেশা।

তিনি বলেন, নিজের প্রতি কনফিডেন্স, বাস্তবতা মেনে সামনে আগানোর সাহস বলা যায় এই ক্যারিয়ারে ঢোকার পর পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ্।

সৃষ্টিকর্তার রহমত আর নিজের চেষ্টার জোরে অক্ষমতাকে পাশে রেখেই তিনি অন্য অনেকের চেয়ে ভালো অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। হোক অল্প উপার্জন কিন্তু জ্যোতি এখন বেকার না।

জ্যোতির মতে- স্কিল আর অর্থ মানসিক শক্তি বাড়ায়। অন্যদের বেলায় কেমন জানি না, তবে আমার বেলায় প্রমাণিত।

তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- একসময় অনেক স্বপ্ন ছিল কিন্তু দিন দিন অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে আর মনের শক্তি কমে যাচ্ছে তাই ওভাবে তেমন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই, তবে চেষ্টায় আছি আরেকটু ভালো কিছু করার।

নতুনদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা: জ্যোতির মতো যারা শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে এই সেক্টরে ভালো কিছু করার চিন্তা করছেন তাদের বলব- মনের জোর বাড়ান আর চেষ্টা করতে থাকেন। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত গ্ৰুপগুলোতে সময় দেন। সফল ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন। যেকোনো প্রয়োজনে বড়দের সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করেন। হয়তো সবাই আপনাকে সাহায্য করবে না, কিন্তু অনেকেই আপনাকে উদারভাবে সাহায্য করবে।

আর সুস্থ্য সবল মানুষদের জন্য বলব- আপনাদের সুস্থ সবল হাত, পা, চোখ দিয়ে চাইলেই যা ইচ্ছা করতে পারেন, এই ক্ষমতা অনেকেরই নাই। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এই রহমতকে কাজে লাগান, অলসতা না করে সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের আর পরিবারের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার চেষ্টা করেন।

নিজের প্রয়োজনে সাহায্য নেবেন, অন্যের প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। আসুন একসঙ্গে দেশের জন্য ভালো কিছু করি।

এসএ/