সমুদ্রে বিপন্ন প্রাণীর মৃত্যু বাড়ছে


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


সমুদ্রে বিপন্ন প্রাণীর মৃত্যু বাড়ছে
ছবি: জনবাণী

সমুদ্রে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর মৃত্যু বাড়ছে। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে একে একে ভেসে আসছে এসব প্রাণী। মাত্র ৩ দিনে উপক‚লে দেখা মিলেছে ৩ টি মৃত ডলফিন, ১ টি মৃত পরপইস ও ১ টি কচ্ছপ।


সর্বশেষ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে একটি এবং ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিনের দেখা মিলেছে।


আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার ফিরে যাবেন মিয়ানমারের ৩৩০ জন নাগরিক


খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত ডলফিন ২ টির নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) কর্মকর্তারা। এরপর সৈকতের বালিয়াড়িতে ডলফিন ২টি মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।


তিনি জানান, সোনারপাড়া সৈকতের পাওয়া গেছে মৃত ইরাবতি ডলফিন। যা ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি। ইনানী সৈকতে মৃত পাওয়া ডলফিনটি ইন্দো প্যাসিফিক হ্যাম্পব্যাক ডলফিন। ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক ডলফিনের বৈজ্ঞানিক নাম ঝড়ঁংধ পযরহবহংরং, এটি স্বতন্ত্র সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী। যা এর পিছনে একটি কুঁজ এবং একটি দীর্ঘ, সরু চঞ্চু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।  ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক ডলফিন বাসস্থানের ক্ষতি, জল দূষণ, উপকূলীয় উন্নয়ন, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং এর পরিসরের মধ্যে সামুদ্রিক যানবাহনের বৃদ্ধির কারণে হুমকির সম্মুখীন। ধারণা করা হচ্ছে আবাসস্থলের অবক্ষয় এবং মাছ ধরার যাওয়া ট্রলার-জাহাজ বা জালে দুর্ঘটনাজনিতভাবে আটকা পড়ে আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এটি মারা গেছে।


এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হিমছড়ি সৈকতে মৃত ভেসে আসে আরও একটি ইরাবতী ডলফিন।


বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবারের ডলফিনটি দুই সপ্তাহ আগে শরীরে রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মারা পড়েছে। ৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ডলফিনটির ওজন ১০০ কেজি। শুক্রবারের ২ টি সহ ৩ টি ডলফিন  উপকূলে ঘোরাঘুরির সময় ডলফিনটি জেলেদের জালের রশিতে আটকে শ্বাস নিতে পারেনি। এতেই ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।


বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে একটি মৃত পরপইস।


বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড.  তৌহিদা রশীদ বলেন, এটি বোরির  স্পেসিমেন মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মৃত পরপইস বা শুশুকটি ওজনে মাত্র ৩ দশমিক ৮৮ কেজি। এটি একটি সদ্য প্রসবকৃত বাচ্চা পরপইস হতে পারে।


বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কক্সবাজারে পরপইস উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম। এটি ইংরেজিতে ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো পরপইস একটি ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে, নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষে, শব্দ ও জলদূষণে এবং বাঁধ, পোতাশ্রয়সহ অন্যান্য নির্মাণ কাঠামোর কারণে এদের জীবন হুমকিতে পড়েছে। এর কারণে এটি মারা যেতে পারে।


বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে এসেছে। বোরির বিজ্ঞানীদের ধারণা, ১০ থেকে ১২ দিন আগে কচ্ছপটি মারা গেছে। এ নিয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি মা কচ্ছপ মারা পড়েছে।


জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, অলিভ রিডলি প্রজাতির এই মা কচ্ছপ সৈকতের বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসার সময় জেলেদের জালে আটকা পড়ে কিংবা অন্য কোনো ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এটির পেটে ১০২টি ডিম পাওয়া গেছে।


আরও পড়ুন: ঘুমধুম সীমান্তে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী


গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল।


এছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।


আরএক্স/