একক প্যানেল ও এক স্বতন্ত্রের নির্বাচনে কুবি শিক্ষক সমিতি


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩১ অপরাহ্ন, ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪


একক প্যানেল ও এক স্বতন্ত্রের নির্বাচনে কুবি শিক্ষক সমিতি
ফাইল ছবি।

প্রায় ১৪ মাস পর আবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষক সমিতি গঠনের জন্য নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা দল অংশ নিচ্ছে না। তবে প্রতিবার আওয়ামীপন্থী নীল দলের দুটি প্যানেল থাকলেও এবার বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকদের 'নীল দল' পূর্ন প্যানেল ঘোষণা করেছে।


নীল দল ঘোষিত প্যানেলে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, দুইটি সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন, অধ্যাপক মো: তোফায়েল হোসেন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক পদের বিপরীতে প্রার্থী হিসেবে আছেন মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান।


আরও পড়ুন: কুবির হাল্ট প্রাইজ অন ক্যাম্পাসে বিজয়ী 'টিম কার্গসমেরিন'


এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাছান, কোষাধ্যক্ষ পদে আছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদপ্রার্থী লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী মার্কেটিং বিভাগের মাহফুজুর রহমান।


এছাড়াও সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক ড. মো. শামিমুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, অর্থনীতি বিভাগের স্বর্ণা মজুমদার, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। 


শিক্ষক সমিতির ১৫ টি পদের বিপরীতে শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক পদে একের অধিক প্রার্থী রয়েছে। স্বতন্ত্র  হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হয়েছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: জিয়া উদ্দিন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমি এবার কোন সংগঠনের ব্যানারে নির্বাচন করছি না। তবে আমি বরাবরের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।'


নীল দলের একটি মাত্র প্যানেল কেন?

২০১৭ সাল থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নীল দলের দুইটি প্যানেল ঘোষণা হয়ে আসলেও প্রায় ৭ বছর পর একক প্যানেলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে নীল দল। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকীর দাবি তাকে সময় শেষ হওয়ার কথা বলে মনোনয়ন ফরম দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমি এবার প্যানেল দেয়ার জন্য নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সময় শেষ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে আমাকে ফরম দেয়নি। নীল দল এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ দুটোই আলাদা প্রেক্ষাপট। যারা আমাদের বঙ্গবন্ধু পরিষদ থেকেও নির্বাচন করছে সেটা তারা তাদের ব্যক্তিগত জায়গা থেকে করছে।'


এই বিষয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, 'আওয়ামীপন্থী দলে বিভক্তি থাকবে কেনো? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বঙ্গবন্ধু পরিষদের থেকে একটিই প্যানেল দেওয়া হয় এবং এবার আমাদের থেকেও এটাই করা হয়েছে৷ এটা আমাদের জন্য একটি ভালো লক্ষণ বলা যায়। এর ফলে আওয়ামীপন্থীদের একতা প্রকাশ পায়।'


এই বিষয়ে শিক্ষক সমিতিতে নীল দল থেকে সদস্য পদপ্রার্থী নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, 'আমরা নতুন শিক্ষক সমিতি মাননীয় শেখ হাসিনার যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের মিশন তার জন্য কাজ করবো। শিক্ষকদের সকল ন্যায্য দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির প্রয়োজন। আর এ জন্যই আমরা আওয়ামীপন্থী যে শিক্ষকেরা আছি তারা মিলে এইবার শুধু একটিই প্যানেল দিয়েছি।'


এই বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, 'বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতানৈক্য হয়েছে। তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংকট দেখা দিয়েছে। আর সে সকল সংকট কাটিয়ে যেনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা এবং গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে, তার জন্যই এবারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যারা তাদের থেকে শুধু একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।' 


সাদা দল কেন শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে  অংশগ্রহণ করছে না? 

কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল। বিষয়টি নিশ্চিত করে সাদা দলের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সুলাইমান তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এবারের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। জাতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের এই সিদ্ধান্ত।”


আরও পড়ুন:  দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও গঠিত হয়নি কুবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি


এই বিষয়ে  বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, 'আমরা এই নির্বাচনকে সমর্থন জানাচ্ছি। কিন্তু আমাদের থেকে কেউ নির্বাচনে যাচ্ছে না।'


উল্লেখ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর আয়োজিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ভণ্ডুল হয়। এরপর ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.কাজী ওমর সিদ্দিকী ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেনা বেগম শিক্ষক সমিতি-২০২২ এর কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি বরাবর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিক্ষক সমিতি নির্বাচনটি আয়োজনের আবেদন করেছিলেন৷  তৎকালীন কমিটি সে সময় নির্বাচন আয়োজন না করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়েছিল।


পরবর্তীতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিতে এযাবৎকালে দায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি সাধারণ সভা ডাকেন শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। সভা শেষে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে শিক্ষক সমিতির পক্ষে বিপক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালানো হয়। সেই গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে দুইশয়ের অধিক শিক্ষক শিক্ষক সমিতি গঠনের পক্ষে স্বাক্ষর দিলে ফেব্রুয়ারী মাসের ৭  শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা হয়। সভায় আগামী  ১৯ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়।


আরএক্স/