সীমান্ত শান্ত: বিকট শব্দ নেই


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:২৪ অপরাহ্ন, ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


সীমান্ত শান্ত: বিকট শব্দ নেই
ছবি: প্রতিনিধি

কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলার, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন সীমান্তে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেলেও মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১ টা পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা শান্ত রয়েছে।


টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলমের সাথে আলাপকালে এমন বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।


টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় থেমে থেমে ব্যাপক গুলি ও মর্টার শেলসহ ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গিয়েছিল। তবে রবিবার থেকে গোলাগুলির শব্দের তীব্রতা কমতে শুরু করে। সোমবার সন্ধ্যার পরপর বেশ কয়েকটি গোলাগুলির শব্দের পর পুরো রাত থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত গোলাবর্ষণের কোন শব্দ শোনা যায়নি।


এ ইউপি সদস্য জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলির কোন শব্দ ভেসে আসেনি। তারপরও আতংক পুরোপুরি কেটে না যাওয়ায় জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে। সীমিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় বহনকারি নৌযান চলাচলও।


আব্দুস সালাম জানান, “নানা মাধ্যমে খবর পাচ্ছেন, মিয়ানমার অভ্যন্তরে মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াই চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংঘাতের পর মংডু শহরের আশপাশের এলাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্টি আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। ওই এলাকাগুলো রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হওয়ায় দেশটির সরকারি বাহিনীর হাতছাড়া হওয়া এলাকা পুনর্দখলে ব্যাপক সংঘাতের আশংকায় সেখানকার বাসিন্দারা প্রাণ বাঁচতে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটছে। অনেকে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া নদী ও খালে অবস্থান নিয়েছে। “


হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, সোমবার সকালে হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলেরডেইল সীমান্তে টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট বেশ কিছু গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। তবে সকালের পর থেকে রাতভর গোলাগুলির কোন শব্দ ভেসে আসেনি। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এখন কোনো ধরনের বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি-কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।


এদিকে গত এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকার শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এতে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুঘুমধুম, তুমব্রু ও বাঁইশফাড়ি এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে।


তবে মিয়ানমারের সংঘাত পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে গেছে সীমান্ত বাণিজ্য। টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর ও আকিয়াব বন্দর থেকে প্রতিমাসে আড়াইশতাধিক থেকে তিনশতাধিক কার্গো ট্রলারে করে বিভিন্ন ধরনের (দৈনিক ৮০ থেকে ১৫০ ট্রাক) পণ্যসামগ্রীক আনা-নেওয়া হলেও গত এক মাস ধরে এসেছে দৈনিক ২ থেকে ৩টি কাগো ট্রলার। এতে করে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।


সীমান্ত পরিস্থিতিতে নাফনদী ব্যবহার করে গভীর সাগরে যাওয়া টেকনাফের ৬ শতাতিক ট্রলারের মালিক ও জেলেদের জীবন যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। টেকনাফের কায়ুখালী, সাবরাং কয়েকটি ঘাট, শাহপরীরদ্বীপ ঘাট থেকে এসব ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যেতে। বিপাকে রয়েছেন চিংড়ি চাষীরাও।


জেবি/এসবি