সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া বালুর ঘাটে অভিযানে আটক ২


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:১১ অপরাহ্ন, ৩রা মার্চ ২০২৪


সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া বালুর ঘাটে অভিযানে আটক ২
ছবি:: জনবাণী

পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মানদী থেকে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমান ড্রেজারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হতো বালু। সেখানে সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দেওয়া হতো বাধা৷ বালু উত্তোলন করার ভিডিও করার সময় ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ধারন করা ভিডিও ডিলেট করিয়ে মেমোরি কার্ড ভেঙে ফেলতেন বালু উত্তোলনকারীদের সদস্যরা। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলতে তাদের কার্যক্রম। চোখ থাকতেও যেন দেখছিলেন না প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়েই চলতে দেওয়া হতো বালু তোলার কার্যক্রম। তবে ধরা খেতে হল নৌ পুলিশের হাতে। 


অনেক চেষ্টার পর লক্ষীকুন্ডা নৌ পুলিশের অভিযানে বালু উত্তোলনের সময় হাতেনাতে ধরা পরলো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক রানা সরদারের দুইজন আত্মীয় । রানা সরদার ও তার ভাতিজা সাগর সরদারের নেতৃত্বে এক যুগ ধরে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন তারা। আটকৃতরা হলেন মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার বাউশিয়া পশ্চিম নয়াকান্দি এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মো. শাহজালাল (৪০) ও একই এলাকার মৃত চান মুন্সির ছেলে মোঃ জালাল উদ্দিন (৫৭)।


আরও পড়ুন: পাবনা র‍্যাবের অভিযানে পণ্য পরিবহনের ৬ চাঁদাবাজ গ্রেফতার


এসময় বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার ও বাল্কহেডসহ ৮৫ লাখ টাকার মালামাল জব্দ করা হয়েছে। 


রবিবার (৩ মার্চ) রাত আনুমানিক সোয়া একটার দিকে উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়াঘাট এলাকার জৈনক উজ্জলের বাড়ির পশ্চিমপাশে পদ্মানদী থেকে তাদের আটকসহ মালামাল জব্দ করা হয়। 


স্থানীয় ও নৌপুলিশ সুত্রে জানা যায়, শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ায় উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়াঘাট এলাকায় পদ্মানদীতে পানি কমে গেছে। এই সুযোগে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে নিয়ে উত্তোলন করতেন বালু। বালু উত্তোলনের ফলে এলাকার রাস্তাঘাটে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে৷ স্থানীয়রা কেউ কিছু বলতে গেলে দেওয়া হতো নানা হুমকি ধামকে। অনেকেই বাধা দিতে গেলে দেওয়া হয়েছে মামলা। করা হয়েছে মারধর। 


বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতেন রানা সরদারের সন্ত্রাসীরা। পরে অবশ্য টাকা দিয়ে তাদের ম্যানেজ করে নিতেন। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চললেও দেখার কেউ নেই। 


জানাযায় ভালো উত্তোলন করা শত শত স্তুপ রয়েছে সাড়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায়। স্তূপে চাপা পড়ে শিশুসহ বেশ কয়েকজন মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে টনক নড়েনি কোন প্রশাসনের কর্মকর্তার। নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়েই চলতে দিতেন এ সকল অবৈধ বালুর ঘাট। 


তবে শেষ রক্ষা হলো না বিষয়টি লক্ষ্মীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির নজরে আসলে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের ভাইয়ের ছেলে সাগর সরদারকে ডেকে চুরি করে নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন না করার জন্য সতর্ক করা হয়। এরপরও বালু উত্তোলন অব্যহত থাকে। 


লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মোঃ এমদাদুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে আসছিল এমদাদুল হক রানা সরদারের লোকজন। প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট এলাকায় ভ্রাম্যমানভাবে নৌকাতে ড্রেজার ও বালু চোষক লাগিয়ে বালু উত্তোলন করতেন তারা। নৌপুলিশ নদী এলাকায় গেলেই বালু উত্তোলনকারীরা ঈশ্বরদী সিমানা ছেড়ে লালপুরের দিকে চলে যায়। এই কারণে তাদের সহজেই আটক করা সম্ভব হচ্ছিল না।


কিন্তু রবিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সাঁড়ার পদ্মানদীতে চুরি করে বালু উত্তোলন করাকালে দুইজনকে আটক করা হয়। সেই সময় বালু ভর্তি একটি বাল্কহেড ও একটি বালু চোষক জব্দ করা হয়। বাল্কহেড ও বালু চোষকের বাজার মুল্য প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।


লক্ষ্মীকুন্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মো. এমদাদুল হক আরো জানান, আটককৃত ড্রেজার ও বাল্ক হেড সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার ও তাঁর ভাতিজা সাগর সরদারের বলে জানা গেছে। এর আগে সাগর সরদারকে ডেকে বালু উত্তোলন না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। দুইজনকে আটকসহ ড্রেজার ও বালু চোষক জব্দ করা হলে সাগর সরদার সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য নৌপুলিশকে মোবাইলে অনুরোধ করেছে। জব্দকৃত মালামালসহ আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য ঈশ্বরদী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। নৌপুলিশের এই অভিযান অব্যহত থাকবে।


আরও পড়ুন: পাবনায় মা-‌ছে‌লেকে হত্যা, গ্রেফতার ৩


এই বিষয়ে সাগর সরদার জানান, আটককৃতরা তার লোক না। জব্দকৃত মালামালও তার না। তিনি সাঁড়াঘাটে বালুর ব্যবসা করেন না। তিনি আড়মবাড়িয়াতে বালুর ব্যবসা করেন।


এ বিষয়ে সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ইমদাদুল হক রানা সরদার জানান, আটককৃতরা তার লোক না। জব্দকৃত মালামালও তার ভাড়া করা না। বালু উত্তোলনের বিষয়ে তাঁকে জড়িয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা। কিছু কুচক্রী মহল সুবিধা না পাওয়ার কারণে এমন কুৎসা রটাচ্ছেন। আর যে সকল সাংবাদিকদের আমি নিয়মিত মাসোয়ারা দিতাম তারাই আজকে আমার বিরুদ্ধে নিউজ প্রচার করছে। বিষয়টি দুঃখজনক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


আরএক্স/