তীব্র আবাসন সঙ্কটে নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, ৮ই মার্চ ২০২৪


তীব্র আবাসন সঙ্কটে নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
ফাইল ছবি।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীর তুলনায় হল সংখ্যা কম হওয়ায় আবাসন সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ২৯ শতাংশ। বাকি ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে সিট না পেয়ে নানা ভোগান্তিতে রয়েছে। ছেলেদের দুই হলের আসনের বিপরীতে ছাত্র সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫৩ জন। অপরদিকে মেয়েদের তিন হলের আসনের বিপরীতে ছাত্রী সংখ্যা ৩ হাজার ৬৯৬ জন। সম্প্রতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রায় ১ হাজার ৫শত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হয়েছেন। এতে আবাসন সংকট আরো বেড়েছে।


আরও পড়ুন: নোবিপ্রবির কৃষি বিভাগের ল্যাবে টিস্যু কালচার থেকে মাশরুম উৎপাদন


বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদ, দুটি ইনস্টিটিউট ও ৩৩ টি বিভাগে বর্তমানে ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসন সংখ্যা ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলে ৩৮০ টি,বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক উকিল হলে ৫৩০ টি, জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪৮০ টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৫৮৮ টি,হযরত বিবি খাদিজা হলে ৪৩০ টি। সব মিলিয়ে ৫টি আবাসিক হলে মোট আসন সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৪০৮ টি। হিসাব অনুযায়ী হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থী সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২৯ শতাংশ। বাকি ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে হলের বাইরে নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছেন।সম্প্রতি ক্যাম্পাসে নতুন ভর্তি হওয়া ১৮ তম ব্যাচের হাতেগোণা ১০-১৫ জন  শিক্ষার্থীর গণরুমে জায়গা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ তম,১৭ তম ব্যাচের ১৫ শতাংশের কম শিক্ষার্থী হল সুবিধা পাচ্ছে।  এছাড়া ২য় ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও ডাবলিং করে থাকছেন। আবাসন সংকট লাঘবে গত কয়েক বছরে মেয়েদের জন্য নতুন হল হলেও ছেলেদের জন্য কোনো হল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে মেয়েদের আবাসন সংকট অনেকটা কমলেও ছেলেদের ভোগান্তি কমেনি।


গত ৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হলেও সেই তুলনায় বাড়েনি আবাসনব্যবস্থা। আবাসন সংকটের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে মেস ও ভাড়া বাসায়। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নোয়াখালী শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মেস ও ভাড়া বাসায় থাকছে। এ সুযোগে নোয়াখালী শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে মেস বাণিজ্য। বিকল্প না থাকায় মেস মালিকরা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। কেউ দুয়েক মাসের জন্য উঠতে চাইলেও তাকে তিন থেকে পাঁচ মাসের টাকা জামানত দিতে হয়। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেও মেসের চড়া দামের খাবার বিল দিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। সাথে প্রতিনিয়ত লোডশেডিং, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তো আছেই। তা ছাড়া, নোয়াখালী শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে সোনাপুর নামক জায়গায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়।


আরও পড়ুন: নোবিপ্রবিতে তিন দিনব্যাপী বইমেলা শুরু


বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের এক অনাবাসিক শিক্ষার্থী অভি সূত্রধর সবুজ বাংলাকে বলেন,  প্রান্তিক পর্যায় থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। নোয়াখালী শহরে মেস ভাড়া অনেক বেশি। আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পক্ষে মাসিক ১৪০০-১৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকাটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই বলে স্বপ্ন ছিল হলে আমার একটি সুন্দর ঠিকানা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিন বছর চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় আজও আমাকে মাথা গোঁজার ঠিকানা করে দিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের দুঃখ না বোঝে তাহলে আর কিছু বলার নেই।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী শহরের অধিকাংশ মেসে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। শিক্ষার্থীরা ছুটিতে বাড়িতে গেলেই মেস থেকে ফোন, ল্যাপটপ, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস চুরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রীরা শহরে মেসে থাকায় প্রায়ই বখাটেদের ইভটিজিং এর শিকার হতে হচ্ছে।


আরএক্স/