লবনাক্ত জমিতে সবজি চাষে সাবলম্বী দুই শতাধিক পরিবার


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:০৭ অপরাহ্ন, ২৪শে মার্চ ২০২৪


লবনাক্ত জমিতে সবজি চাষে সাবলম্বী দুই শতাধিক পরিবার
ছবি: প্রতিনিধি

বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া গ্রামে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার। এক সময় এই গ্রামে লবণাক্ততার কারণে শুধু বর্ষা মৌসুমে ধান উৎপাদন হতো। বছরের বাকিটা সময় দিনমজুরি দিয়েই সংসার চালাত স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু এখন সেখানে বছরব্যাপী উৎপাদিত হচ্ছে নানান ধরনের সবজি। এ বছরে তাদের উৎপাদিত সবজির বিক্রয় মূল্য হয়েছে ছয় কোটি টাকার বেশি।


স্থানীয় কৃষকরা জানান, এক সময় শুধু বর্ষা মৌসুমে বছরে একবার ধানচাষ হত। কিন্তু ধানচাষে তেমন লাভবান না হওয়ায় দশ বছর আগে মো. শাহাদাত হোসেন মাতুব্বর নামে এক কৃষক সবজি চাষ করে সফলতা পান। তার সাফল্য দেখে ধীরে ধীরে গ্রামের অন্যান্য কৃষক পরিবারও সবজি চাষে উৎসাহিত হন। এখন বছরব্যাপী গ্রাম জুড়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন তারা। গ্রামে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সবুজে সবুজে ভরে উঠছে মাঠ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে সারি সারি লাউ, শিম, মরিচ, করলা, মুলা, বেগুন, কুমড়া, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গোলআলু, মিস্টি আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজিতে ভরে উঠেছে ক্ষেত।‌ মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষানীরা। কাক ডাকা ভোরে কৃষকেরা কোদাল, নিড়ানি, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। আবার নারী শ্রমিকরা সবজি তুলছেন আর পুরুষ শ্রমিকরা বস্তায় করে গাড়িতে তুলছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে এ কর্মযজ্ঞ।


সওদাগর পাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, এক সময় এই গ্রামের নারীরা কাজ করত না। তখন শুধু ধান চাষ হতো। সে সময় প্রায় ঘরেই ছিলো অভাব। এখন এই গ্রামে বছরজুড়ে সবজি চাষ করার কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে কাজ করে। এতে অভাব ঘুচে গেছে এ গ্রামের  বাসিন্দাদের।


সওদাগর পাড়া গ্রামের কৃষক মো. আল আমীন বলেন, আগে এই জমিতে ধান চাষ করতাম লবণাক্ততার কারণে তেমন লাভবান না হওয়ায় এখন সবজি চাষ করছি। এ মৌসুমে ১ একর জমিতে সবজি চাষ করছি তাতে ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বিক্রি করেছি ৫ লাখ টাকা।


আরও পড়ুন: তালতলীতে সরিষা চাষ বেড়েছে তিনগুণ


সবজি চাষী ইসমাইল মাতুব্বর বলেন, এই মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি তাতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। সার, কীটনাশক ও বীজের দাম আগে থেকে  অনেক বেশি। এতে করে আমাদের চাষের খরচ বেড়ে গেছে। তবে বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।


সওদাগর পাড়া আদর্শ কৃষি সমিতির সভাপতি মো. শাহদাত হোসেন মাতুব্বর বলেন, এই গ্রাম থেকে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ মন সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর কারণে পাইকাররা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন দেশের বড় বড় পাইকারী বাজারে। গত বছর এ গ্রাম থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। এবছর বাজারদর ও ফলন ভালো হওয়ায় ৬ কোটি টাকার বেশি সবজি বিক্রয় হবে।


আরও পড়ুন: ছাতকে ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় কৃষি উপকরণ বিতরণ


তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ আমাদের সবজিগুলো বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ করে দিলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতাম।


তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মোঃ ইলিয়াস বলেন, এবছর তালতলীতে ৮০৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। সবজি চাষে প্রদর্শনী ও প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সবজি থেকে এ বছর কৃষকরা ভালো মুনাফা অর্জন করবে। ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।


জেবি/এসবি