জাবিতে লেকের পাড়ে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:২৯ অপরাহ্ন, ৩১শে মার্চ ২০২৪


জাবিতে লেকের পাড়ে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা
ছবি: প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আল বেরুণী হলের বর্ধিতাংশের লেকের পাড়ে গাছ কেটে নতুন করে ছয়তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উক্ত স্থানে ভবনটি নির্মাণ করা হলে দুই শতাধিক গাছ কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর শীতে জাবির লেকে আসা পরিযায়ী পাখির বিচরণ হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীরা।


প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে অনুষদে রূপান্তরিত করতে চান বিভাগীয় শিক্ষকরা। এ লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের  যৌথ অর্থায়নে অনুষদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যার জন্য আল বেরুণী হলের বর্ধিতাংশের স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য  ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকী ৫০ কোটি টাকা ভারত সরকার অর্থায়ন করবে।


আরও পড়ুন: জাবিতে ‘শিক্ষার্থী কল্যাণ ফি’ বাতিলের দাবি শিক্ষার্থীদের


মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া গাছ কেটে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম. এম. ময়েজউদ্দীন বলেন, ভবন নির্মাণে নির্ধারিত জায়গায় তেমন কোন প্রয়োজনীয় গাছ নেই। মেহগনি সহ কিছু ডালপালা বিহীন গাছ আছে। ভবন নির্মাণের সময়  কিছু গাছ কাটা পড়লেও পরিবেশের তেমন ক্ষতি হবে না । আমরা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী কমিটির সাথে কথা বলেছি, মাস্টারপ্ল্যান এর সাথে সমন্বয় করেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।


আরও পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, জানা যাবে যেভাবে


কবে নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ছাত্র, শিক্ষক ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী কমিটির মতামতের উপর ভিত্তি করে ঈদের বন্ধে কাজ শুরু হবে না।


এদিকে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া গাছ কেটে নতুন ভবন চান না বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, প্রায় পাঁচ বছর যাবত একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন তারা। মাস্টারপ্ল্যান ব্যতীত নির্মাণ কাজের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। চারুকলা ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানটির পাশেই রয়েছে একটি লেক। প্রতিবছর শীতের সময়ে দেশ-বিদেশ থেকে পরীযায়ী পাখিরা এই লেকেও আসে। উক্ত স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। পাশাপাশি ভবন নির্মাণ কাজ চলাকালীন ও শ্রেণীকার্যক্রম শুরু হলে ভবন থেকে সৃষ্ট শব্দে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পরিযায়ী পাখির বিচরণ। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবনটিকে অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত। এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবন নির্মাণ করলে ভবন ও আশেপাশের জায়গায় ছোট-বড় মিলিয়ে দুইশত গাছ কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।


ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমরা কখনো চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা হোক। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অপরিকল্পিত নগরায়ণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে এখানে পড়াশোনার পরিবেশ থাকবে না। তাই আমরা চাই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ হোক।’


জেবি/এসবি