সাগরে ফিরেছে ৭৫০ কাছিম ছানা
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৪৩ অপরাহ্ন, ২০শে এপ্রিল ২০২৪
সামুদ্রিক কাছিমের দেয়া ডিম থেকে জন্ম নেয়া ৭৫০ টি কাছিমের ছানা সাগরে ফিরেছে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের বিভিন্ন সাগর উপকূলে এসব কাছিমের ছানা অবমুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রামু উপজলোর পেঁচার দ্বীপে ৩৫০ টি, মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে ২৫০টি, টেকনাফ উপজেলার মাদারবুনিয়ায় ১৫০টিসহ কাছিম ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুম নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০ হাজারের মতো কাছিমের ডিম সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৫ হাজার কাছিমের ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এটা চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে সংগ্রহ করা সর্বোচ্চ সংখ্যক সামুদ্রিক কাছিম ডিম।
নেকমের ইকোলাইফ প্রকল্পের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মী আবদুল লতিফ জানান, রামু উপকূলের পেঁচারদ্বীপ সমুদ্রসৈকতের ঝাউবিথীর বালুচরে রয়েছে সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র। যেখানে সংরক্ষণ দুটি পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে কাছিমের ডিম। একদিন-দু’দিন করে ৬৫ দিন পর বালুচর থেকে বেরিয়ে আসছে কাছিম ছানা। পেঁচার দ্বীপ সৈকতের ৪ কিলোমিটার এলাকা থেকে কাছিমের ডিম সংগ্রহ করা হয়। চলতি মৌসুমে প্রায় ২৭’শ কাছিমের ডিম সংগ্রহ করেছি। তারপর এগুলো কাছিম সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্রে বালুচরে গর্ত করে রাখা হয়। এখন ৬০ দিন, ৭০ দিন বা ৮০ দিনে বালুচরের গর্ত থেকে ডিমগুলো ফুটে কাছিমের বাচ্চা বের হয়ে আসছে। এরই মধ্যে ৮’শ ১৪টি কাছিমের বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এই কাজ করতে খুবই আনন্দ লাগে।
নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কাছিম এখন হুমকির মুখে। একদিকে সাগরে ট্রলিং জাহাজের কারণে কাছিম মারা পড়ছে আর অন্যদিকে মা কাছিম যখন উপকূলে ডিম পাড়তে আসছে তখন জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়াও কুকুরের কামড়েও কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে। এক্ষেত্রে দিন দিন সামুদ্রিক কাছিম ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
নেকমের ইকোলাইফ প্রকল্পের ডিপিডি ড. শফিকুর রহমান বলেন, গত তিন বছরে ২৯,৪৫০ টি ডিম সংগ্রহ করে যা থেকে ৮৫% বাচ্চা ফুটিয়ে সাগরে অবমুক্ত করা হয়। এ ধরনের প্রদ্ধতিকে এক্স-সিট্যু সংরক্ষণ বলা হয়। এছাড়া গত তিন বছরে ১০ টি সংস্থান বা ইন-সিট্যু পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে বচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়। ইউএসএইড ও সামিট এর অর্থায়নে, পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরের দিক নির্দেশনায় নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) কাছিম সংরক্ষণের এ কাজ প্রায় ২০ বছর যাবত করে আসছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারের ৩ উপজেলায় ৩২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল
“সমুদ্রের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, আগাছা পরিষ্কার এবং মাছের পোনা খাদক জেলিফিশ খেয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে অনন্য ভূমিকা রাখে এই কাছিম। কক্সবাজার সৈকতের মাত্র ৩৪টি স্পটে সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়তে আসছে যা এক দর্শক আগেও ছিল ৫২টি অর্থাৎ হুমকির মুখে সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানসমূহ। তাই পরিবেশ বন্ধু কাছিম সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারিভাবে সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. শফিকুর রহমান।”
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন, কাছিম প্রকৃতির সুইপার। সমুদ্রের আবর্জনাগুলো ভক্ষণ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে কচ্ছপ। কিন্তু আমাদের অসচেতনতায় নিজের আবাসস্থল হারাচ্ছে এ উপকারী প্রাণীটি। নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকারকালে আটকা পড়ে মারা যায় কচ্ছপ। পর্যটন বিকাশের কারণে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে অতিরিক্ত আলোকায়নে কূলে ফিরে কুকুরের আক্রমণেও মরছে কচ্ছপ।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারের রাখাইনদের ‘সাংগ্রেং’ উৎসব চলছে
মো. সারওয়ার আলম বলেন, কাছিমসহ সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আশা করি, সামুদ্রিক কাছিমের জন্য উপকূলকে নিরাপদ করা হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মা কাছিমের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। গেলো ৩ মাসে মৃত্যু হয়েছে ১০৩ টি মা কাছিমের। এর জন্য ট্রলিং জাহাজ ও জেলেদেরকে দায়ী করা হলেও কাছিম রক্ষায় স্বদিচ্ছার অভাব দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেবি/এসবি