অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার পল্লী চিকিৎসকসহ ২
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৫১ অপরাহ্ন, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪
কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের ২৬ ঘন্টা পর ‘পুলিশের অভিযানের মুখে’ পল্লী চিকিৎসকসহ দুইজনকে দুর্বৃত্তরা ছেড়েছে দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে স্বজনরা মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, অন্তত ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে দুর্বৃত্তরা অপহৃতদের ছেড়ে দিয়েছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ১১ টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালীর পাহাড়ী এলাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান, টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি।
মুক্তিপ্রাপ্তরা হলো, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম থাইংখালী এলাকার জাকের হোসাইনের ছেলে পল্লী চিকিৎসক মো. জহির উদ্দিন (৫১) এবং টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর নয়াপাড়ার মৃত মো. শফির ছেলে মোহাম্মদ রফিক (৩২)।
পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া দুইজনই শারীরিকভাবে অক্ষত রয়েছেন। তাদের শরীরে নির্যাতনের কোন ধরণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রবিবার (২১ এপ্রিল) রাত ৯ টায় টেকনাফের বাহারছড়া স্টেশনে চেম্বার শেষ করে অন্য যাত্রীদের সাথে অটোরিকশা যোগে বাড়ী যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারি গাড়ীটি শামলাপুর-হোয়াইক্যং সড়কের হোয়াইক্যং ঢালা নামক এলাকায় পৌঁছলে যাত্রী বেশী তিনজন অস্ত্রের মুখে চালককে জিন্মি করে। পরে পল্লী চিকিৎসক জহির উদ্দিনসহ দুইজনকে পাহাড়ী এলাকার দিকে তুলে নিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই অপহৃত জহির উদ্দিনের ভাই ও স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ কমরুদ্দিন গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছিলেন, “ ঘটনার ঘন্টা দেড়েক পর তার ভাইয়ের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তি ছয় লাখ মুক্তিপণ দাবি করেছিল। “
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, অপহরণ ঘটনাটি পুলিশ অবহিত হওয়ার পর থেকে অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু করে। পুলিশের একাধিক দল রাত থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখে। তবে সকাল ১০ টার পর থেকে বাহারছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ের সম্ভাব্য অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে পুলিশ সাড়াশী অভিযান চালায়।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে টেকনাফের ২ জেলে আহত
“এতে সোমবার রাত ১১ টার দিকে শিলখালী পাহাড়ী এলাকায় অভিযানের মুখে সম্ভাব্য গ্রেপ্তার এড়াতে অপরাধীরা অপহৃত দুইজনকে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের শরীরের নির্যাতনে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।”
তবে স্বজনরা মুক্তিপণ দিয়েছে কিনা তা পুলিশ অবহিত নয় এবং উদ্ধার হওয়াদের জিজ্ঞাসাবাদের নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান ওসি।
অপহৃত জহিরের ছোট ভাই মোহাম্মদ কমরুদ্দিন বলেন, রাতে দূর্বত্তরা তার ভাইসহ দুইজনকে ছেড়ে দিয়েছে। পরে খবর পেয়ে শিলখালী পাহাড়ী এলাকা পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে। তার ভাইকে আনতে তিনি বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
মুক্তিপণ ছাড়াই তার ভাইসহ দুইজন ছাড়া পেয়েছেন তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “তার ভাইসহ অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করেছে।”
আরও পড়ুন: টেকনাফে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ, আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের
তবে স্থানীয় বাসিন্দাসহ ভূক্তভোগী জহির উদ্দিনের কয়েকজন স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্বৃত্তদের কাছে অন্তত ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে মুক্তপণের টাকা কোথায়, কিভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তারা।
ওসমান গণি জানান, উদ্ধার হওয়ারা বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে রয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে জানতে তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে উদ্ধার হওয়াদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান ওসমান গণি।
প্রসঙ্গত, গত এক মাস ধরে টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণের ঘটনা বন্ধ ছিল। এর আগে গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২০ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।
জেবি/এসবি