টেকনাফে থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ, আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, ৬ই এপ্রিল ২০২৪
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) চলমান সংঘাত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ওপার থেকে ভেসে আসা গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্কে রয়েছে সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
সর্বশেষ শনিবার (৩০ মার্চ) ওপার থেকে এপারে বিস্ফোরণের শব্দে ভেসে এসেছিল। এরপর টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকে শনিবার (০৬ এপ্রিল) পর্যন্ত এপারের সীমান্তে আবারও বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সীমান্তের কিছু কিছু জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের বাসিন্দারা নিজ বাড়িতে অবস্থান করলেও তাদের আতঙ্ক কাটেনি।
সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা যায়, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্বদিকে মিয়ানমারের মংডু শহরের উত্তরে বলিবাজার, শিলখালী, নাকপুরা, হাস্যুরাতা ও নাখ্যংদিয়া থেকে মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। নতুন করে ওইসব এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এসব এলাকায় আরাকান আর্মি ও সে দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘাত হয়। সীমান্তের এসব এলাকায় শনিবার ভোররাত পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে।
আরও পড়ুন: চকরিয়ায় একজনের পা কেটে হত্যা, অন্যজনের হাত কর্তন
বিশেষ করে সাবরাং ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন, শাহপরীরদ্বীপ, হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালী, ঝিমংখালী, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, পুরানবাজার, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, টেকনাফ সদরের আলীখালি, লেদা, মুচনী, জাদীমুড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যং পাড়া, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়া, জালিয়াপাড়া সহ অন্তত ৩০টি গ্রামে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।
হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা দিন মজুর আব্দুল লতিফ বলেন, কি এক অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসে, বাড়িতে ঘুমাইতে পারি না। ক্ষেতে কাজ করতে গেলে ভয়ে ভয়ে কাজ করি। কোন সময় যেন এসে গায়ে লাগে সেই ভয়ে ভয়ে থাকি।
টেকনাফের নাজির পাড়ার বাসিন্দা সালাম মিয়া ইজিবাইক চালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, আজকে ভোরে ইজিবাইক চালাতে বের হলে আমি হঠাৎ চমকে উঠি। মনে হচ্ছে ভূমিকম্পে সব উল্টে যাইতেছে।
টেকনাফ সদরের জালিয়া পাড়ার রহমতুল্লাহ নামের এক বাসিন্দা বলেন, ঘুমের বাচ্চা উঠে যাচ্ছে, মিয়ানমারের গুলির শব্দে।
আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে স্পিডবোট ডুবি, ৩ শিশুসহ ১৯ যাত্রী উদ্ধার
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. খোরশেদ আলম বলেন, গোলাগুলির শব্দ কিছুদিন তেমন শুনা না গেলেও এখন আবার থেমে থেমে বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মিয়ানমারে দুই পক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রচুর গোলাগুলি হচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদের অপারেশন আরও বেশি ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। এছাড়াও গোপন সূত্রে জানতে পারলাম ট্রলারে করে কিছু রোহিঙ্গা সীমান্তে ডুকে যাচ্ছে। তবে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি, কারো বাসা-বাড়িতে অবস্থান করতেছে কিনা। যদি আমরা খবর পাই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, আমার ইউনিয়নের দিকে আজকে বিস্ফোরণের শব্দ অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কমছে।
সীমান্তের এ পরিস্থিতিতে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
এমএল/