কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪
কক্সবাজারের ইউনিয়ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে এবার ভূল চিকিৎসার অভিযোগ করেছেন এক প্রসূতির মায়ের স্বজনরা। এ প্রসূতি মাকে ২৪ ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরও বাঁচানো যায়নি।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিইউতে এই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া প্রসূতি মা আফসানা হোসেন শীলা, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার মোহাম্মদ হোসেনের কন্যা এবং মোহাম্মদ ইফতেখারের স্ত্রী।
মোহাম্মদ ইফতেখার জানিয়েছেন, তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। আগামি ৬ মে প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু রবিবার (২১ এপ্রিল) তার স্ত্রী হালকা পেটে ব্যাথা অনুভবের কথা জানানোর পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক নীনা জাহানকে দেখান। ডাক্তার নীনা জাহান তাকে কক্সবাজার ইউনিয়ন হাসপাতালে ভর্তি করার পরার্মশ দেন। ডাক্তারের কথা মতো আফসানাকে রাত সাড়ে ১১ টায় ভর্তি করানো হয় ওই হাসপাতালে। ভর্তির পর পর ওই হাসপাতালের ডাক্তার শাহেদ স্ত্রীকে ভর্তির অল্প কিছুক্ষণ পর একটি ইনজেকশন পুশ করে। এর পর পরই তার স্ত্রীর ব্যাথা বাড়তে থাকে।
তিনি বলেন, সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত ২ টায় ডাক্তার শাহেদ আমার স্ত্রীকে ডেলিভারির জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে বলেন। তখন এক ব্যাগ রক্ত চালানোর পর একটি স্যালাইন পুশ করা হয়। রাত ৩ টায় ডাক্তার শাহেদ ডেলিভারি করা হবে জানিয়ে হিমু এবং সোমা নামে দুজন নার্স নিয়ে আমার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। ওখানে আমার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর পর নার্সরা এসে জানান আমার স্ত্রীর অতিরিক্ত রক্তরক্ষণ হচ্ছে। আরও রক্ত লাগবে। এরপর আমি একে-একে ২২ ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করি। এতেও রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয়নি। উল্টো রোগির অবস্থা বেগতিক দেখে ইউনিয়ন হাসপাতাল থেকে বিষয়টি অবগত করা হয় ডাক্তার নীনা জাহানকে। ডাক্তার রোগীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। আমার স্ত্রীকে দ্রুত সদর হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার নীনা জাহান রোগীকে আইসিইউতে প্রেরণ করেন। যেখানেও আরও ২ ব্যাগ রক্ত দেয়া হলেও বুধবার রাতে আমার স্ত্রী মারা যান।
আরও পড়ুন: সাজেকে ডাম্প ট্রাক খাদে, নিহত বেড়ে ৯
আফসানার পিতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই আমার মেয়েকে আগাম প্রসব করানো হয়েছে। ওখানে জরায়ু কেটে ফেলায় রক্ত রক্ষণ হয়। এখন নবজাতক নাতিনীকে পেলেও হারাতে হয়েছে মেয়েকে। এখন ইউনিয়ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উল্টো কোন কথা না বলতে হুমকি দিচ্ছেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে ‘ইউনিয়ন হাসপাতাল’ এসে হতবাক হয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রমের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে বুধবার (১৭ এপ্রিল) ইউনিয়ন হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে আইসিইউ, সিটি স্ক্যানিং, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটার সীলাগালা করে বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণেই সেই অপারেশন থিয়েটার কখন চালু করে তা জানা যায়নি। আর সেই অপারেশন থিয়েটারে এবার প্রসব পরবর্তি মারা গেলেন এক মা।
বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হুদার ফোনে একাধিক ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি ডাক্তার নীনা জাহানও।
তবে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাক্তার আসিফ আহমেদ হাওলাদার জানান, বিষয়টি রোগীর পক্ষে সরাসরি কেউ অভিযোগ করেনি এখনও। তবে রাতেই বিষয়টি জানার পর এব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এমএল/