ইসলামের দৃষ্টিতে কর্মস্থলে ফাঁকি দিলে যে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে
ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, ১২ই মে ২০২৪
দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। এই ধরণের মানুষকে সকলেই পছন্দ ও প্রশংসা করে থাকেন। ব্যক্তি,পরিবার ও সমাজজীবনে যা কিছু সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সব কিছুতেই অবদান রয়েছে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের। অসুন্দর ও অনিয়মের পেছনে থাকে দায়িত্বহীনতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব। জীবনের সর্বক্ষেত্রে যদি ইসলামের নিয়মকানুন মেনে চলা যায় তাহলে জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত। সকল বিষয়ে আছে ইসলামী বিধিবিধান তেমনি ইসলাম কর্মক্ষেত্রের কাজেও উৎসাহিত করেছে। উদাসীনতা, অবহেলা ও অবৈধ পন্থা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
কর্মস্থলে কাজে অবহেলা বড় গুনাহ
দায়িত্ববান, সৎনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সঠিক সময়ে অফিসে আসেন। তারা কোনো কাজে ফাঁকি দেন না। অবহেলা করেন না কর্তব্য পালনে, নেন না অলসতার আশ্রয়ও। প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, দুর্নীতি, কাজে ফাঁকি দেওয়া ও মিথ্যা বলা— এসব দোষ-ত্রুটি থেকে অনেকটাই দূরে থাকেন। সঠিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সর্বদা মনোযোগ দেন।
আরও পড়ুন: আত্নহত্যাকারীর জানাজা পড়া যাবে কিনা, যা বলছে ইসলাম
ইসলাম নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রয়োগ করে কাজের মান নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন প্রত্যেক মুমিনের একান্ত কর্তব্য। দায়িত্বের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলাই করা যাবে না। প্রতিটি ব্যক্তিকে তার কর্ম-পেশা ও দায়িত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন মালিকের কাছে তার আমানত প্রত্যর্পণ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন-
সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম কর্মী, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল।
(সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)
প্রচলিত নিয়মানুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগ দেওয়া মানে সে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে মেধা, চিন্তা ও শ্রম ব্যয় করা। মাসিক বেতনের বিনিময়ে তাদের প্রতিশ্রুত দায়িত্ব আদায় করা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০১)
দায়িত্বশীলতা বড় আমানত
সঠিকভাবে ও যথাযথ মাধ্যমে দায়িত্ব পালন অত্যাবশ্যকীয়। এটি পবিত্র আমানত হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম আমানত রক্ষায় ব্যপক তাগিদ দিয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন মানুষের বিচার-মীমাংসা করবে, তখন ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা করো। আল্লাহ তোমাদের সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
আরও পড়ুন: বজ্রপাত থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবী (সা.)
আমানত পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় না করা বা খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা করা মারাত্মক গুনাহ। রাসুল (সা.) এটাকে মুনাফিক বা বিশ্বাসঘাতকের চিহ্ন-দাগ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি; তা হলো- মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা ও আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলমান মনে করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৮/১; ৫৯)
আনাস (রা.) বলেন, ‘এমন খুব কম হয়েছে যে, মহানবী (সা.) ভাষণ দিয়েছেন— অথচ তাতে এ কথা বলেননি, যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ইমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার ধর্ম নেই।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৪০৬)
আমানতের পরিধি ও সীমা ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চাকরিজীবী ও কর্মীদের কাজের সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। সে সময় কাজ রেখে গল্প-গুজব-আড্ডা সময় নষ্ট করা কিংবা কাজে ফাঁকি দেওয়া খেয়ানতের মধ্যে পড়ে। অফিসের জিনিসপত্র ও কাজে ব্যবহৃত সবকিছু একজন কর্মীর কাছে আমানত। ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করা বা নষ্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এটা শরিয়তে সমর্থন করে না। তাই এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।
দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন
দায়িত্বশীলতা ও পূর্ণাঙ্গভাবে আমানত রক্ষা প্রত্যেকের আবশ্যিক কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। কর্মীর কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ বুঝে না পেলে পরকালে অপরাধী হিসেবে শাস্তি পেতে হবে। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৪৪; তিরমিজি, হাদিস: ১২৪)
জেবি/আজুবা