নাক ডাকার অভ্যাসে সতর্ক না হলেই মৃত্যু!


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫:১৪ অপরাহ্ন, ১৩ই মে ২০২৪


নাক ডাকার অভ্যাসে সতর্ক না হলেই মৃত্যু!
ছবি: সংগৃহীত

শারীরিক নানা জটিলতার কারণে অনেক ব্যক্তিই ঘুমের মধ্যে নাক ডেকে থাকেন। এ সমস্যায় রোগী নিজে যেমন বিপদের ঝুঁকিতে থাকেন তেমনি আশপাশে থাকা ব্যক্তিরদেরও তীব্র ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অনেকেই ভেবে থাকেন ‘নাক ডাকা স্বাভাবিক’ বিষয় তবে এটিকে স্বাভাবিক বিষয় বলতে রাজি নয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি বলছে , বর্তমান জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের অনিয়মের কারণে ঘুমের মধ্যে মানুষের মৃত্যুঝুঁকির প্রবণতা বাড়ছে। 


চিকিৎসকরা বলছেন, যাদের শ্বাসনালির সমস্যা রয়েছে তাদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি বেশি। আবার এ মৃত্যুঝুঁকি আরও বেড়ে যায় যদি মদ কিংবা ধূমপানের অভ্যাস থাকে।


কলকাতার পিজি হাসপাতালের ইএনটি (নাক, কান, গলা) বিভাগের চিকিৎসক ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. অরিন্দম দাস বলছেন, নাক ডাকা শব্দটা সম্পূর্ণই ভুল। বেশিরভাগ সময়ই নাক দিয়ে এ আওয়াজ হয় না। হয় গলা বা নাকের পশ্চাৎ অংশ থেকে। সূত্র ভারতীয় গণমাধ্যমের।


আরও পড়ুন: গরমে পান্তা ভাত খাওয়া নিয়ে অজানা তথ্য দিল পুষ্টিবিদরা


কারণ হিসেবে ডা. অরিন্দম বলেন,


সাধারণত বায়ু নাক দিয়ে প্রবেশ করে শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুসে পৌঁছায়। কোনো কারণে যদি এই বায়ু চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হয়, তাহলে টার্বুলেন্ট এয়ার তৈরি হয়। তখন এই আওয়াজটা শোনা যায়, যা অধিকাংশ মানুষেরই জানা নেই। তাই নাক ডাকার সমস্যা নিয়ে সচেতনতা জরুরি। 

 

নাক ডাকার যেসব কারণ দেখা গেছে-

 

 নাক ডাকার সমস্যা নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই। সাধারণত নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়-

১. ওবেসিটি বা ওজন বেশি হলে;

২. গলায় কোথাও মাংসপেশি স্ফীত হলে;

৩. নাকের হাড় বাঁকা হলে;

৪. জিহ্বার নিচের অংশ স্ফীত হয়েছে ইত্যাদি।

 

নাক ডাকা বন্ধের সমাধান-


আরও পড়ুন: দ্রুত ওজন কমাতে ওয়াটার ফাস্টিংয়ের যত উপকারিতা


তবে যে কারণেই নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিক না কেন এর সমাধানে ঘরেই কিছু নিয়ম মেনেই চলতে পারেন বলেন মনে করেন ডাক্তার অরিন্দম। যেমন-

 

১। এক পাশ ফিরে ঘুমান: যারা প্রচুর নাক ডাকেন তারা চিৎ হয়ে ঘুমালে নাক ডাকার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। এক পাশ ফিরে ঘুমালে কিছুটা হলেও সমস্যা কমে। পাশ ফিরে ঘুমা্লে বাতাস চলাচলের পথটি খুলে যায়। তাই শব্দ কমে যায়।

 

২। উঁচু বালিশে ঘুমান: উঁচু বালিশে মাথা রাখলেও অনেক সময় নাক ডাকার সমস্যা কমে। চার ইঞ্চিমতো উঁচু বালিশ ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

 

৩। বেশি করে পানি খান: শরীরে পানির ঘাটতি হলেও নাক ডাকার সমস্যা বাড়ে। তাই নিজেকে সবসময় হাইড্রেটেড রাখুন, উপকার পাবেন।


৪। মাত্রারিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার অন্যতম কারণ হতে পারে। ওজন যত বাড়বে, নাক ডাকার সম্ভবনাও তত বাড়বে। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।


৫। ধূমপান ছাড়ুন: ধূমপানের ফলে শ্বাসনালীতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। স্ফীত হয়ে যেতে পারে কিছু কিছু নাসিকাপেশি। ধূমপান বন্ধ করতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা দূর হয়, ফলে নাক ডাকার প্রবণতা কমে।


৬। ভেষজ উপাদানে কুলকুচি: পুদিনা, দারুচিনি ও রসুন মেশানো পানিতে কুলকুচি: পুদিনা, দারুচিনি ও রসুন হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে কুলকুচি করুন। ভাল ফল পাবেন।

 

৭। অলিভ অয়েল: ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে মাত্র কয়েক দিন এক ফোঁটা করে অলিভ অয়েল নাকে দিন। দেখবেন নাক ডাকার সমস্যা কমছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল নাকের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করে দেয়।

 

উল্লেখ্য, অধিকাংশ মানুষই এই সমস্যাকে প্রথমে গুরুত্ব দেন না। তবে পরে দেখা যায়, জটিলতা বেড়ে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার দিকে চলে যায়। এই রোগীদের ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে যায়। তখন বেড়ে যেতে পারে হার্ট রেট। এমনকি  অস্বাভাবিক হয়ে যায় ব্লাড প্রেশার। প্রতিদিন এমন হতে থাকলে একটা সময়ে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবল সম্ভবনা আশঙ্কাও থাকে। 

 

এজন্য ঘরোয়া উপায়ে নাক ডাকা সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করুন। তবে যদি ঘরোয়া উপায়ে সমাধান না মিলে দ্রুত ডাক্তারের নিকটবর্তী হয়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. অরিন্দম।


জেবি/আজুবা