কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নেপথ্যে যে কারণ


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩:৫২ অপরাহ্ন, ১৯শে মে ২০২৪


কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নেপথ্যে যে কারণ
ছবি: সংগহীত

কিরগিজস্তানের বিশকেকে শনিবার (১৮ মে) স্থানীয়দের সহিংসতায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সেখানে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আতঙ্কে রয়েছেন দেশটিতে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। 


রবিবার (১৯ মে) টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ মে। এদিন কিরগিজস্তানের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় মিসর ও আরবের কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীদের। আহত হন কিরগিজস্তানের এক শিক্ষার্থী। এর জেরে গত ১৬ মে রাত থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু করে স্থানীয়রা। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে শিক্ষার্থীরা বাঁচার আকুতি জানাতে থাকেন। শুক্রবার রাতে এক ভারতীয় দূতাবাসে ফোন করে নিরাপত্তা ও সাহায্য চান। 


আরও পড়ুন: কিরগিজস্তানে কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর হতাহতের খবর মেলেনি


এর আগে শনিবার (১৮ মে) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দূতাবাসের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখার জোর পরামর্শ দেন তিনি।


কিরগিজস্তানের ভারতীয় দূতাবাস এক্স বার্তায় জানায়, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। তবে এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি ও শিক্ষার্থীদের বলছি যেকোনো পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। 


অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তায় যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশ দিয়েছেন।


এক্স বার্তায় তিনি লেখেন, প্রয়োজনীয় সব সহায়তার জন্য আমি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশ দিয়েছি। আমার অফিসও দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।


আরও পড়ুন: আমি হাওয়া ভবনের মতো কোনো ‘খাওয়া ভবন’ করিনি: প্রধানমন্ত্রী


পাকিস্তানের দূতাবাস জানিয়েছে, কিরগিজস্তানের মেডিকেল কলেজের কয়েকটি হাসপাতাল ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বাড়িতেও হামলা হয়েছে। আবাসিক হলে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা থাকে। হামলায় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। 


এদিকে কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 


কিরগিজস্তানে পড়তে যাওয়া একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ১৩ মে বিশকেক শহরে স্থানীয় দুই-তিন বাসিন্দাদের সঙ্গে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত মিশরীয় কয়েকজন নাগরিকদের সংঘর্ষ হয়। পরে গত ১৬ মে রাত থেকে বিশকেক শহরে থাকা সব বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু করে স্থানীয়রা। সেখানে থাকা পাকিস্তানি, বাংলাদেশি এবং ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ওপর একাধারে আক্রমণ চালাচ্ছে। পুরো শহরজুড়ে যেসব বসতবাড়িতে বিদেশিরা থাকে, সেখানে তাদের খুঁজে বের করে বাসায় ভাঙচুর চালানোসহ নারী পুরুষ নির্বিচারে মারধর করা হচ্ছে। এমনকি মেডিকেল কলেজগুলোর হোস্টেলে তারা ঢুকে পড়েছে। শহরজুড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ।


রয়েল মেট্রোপলিটন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ রাকিবুল ইসলাম বলেন, দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রুমের বাইরে নিষেধ করেছে। হঠাৎ করেই সহিংসতা শুরু হয়েছে। ফলে সবাই যে নিজ নিজ রুমে ফেরত আসতে পেরেছে বিষয়টি এমন নয়। যে যেখানে পেরেছে, আত্মগোপন করেছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আমি দেশে ফেরত যেতে চাই, আমাকে উদ্ধার করেন।


বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যোগযোগ করা হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ দেশে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। যার কারণে আমরা বাংলাদেশিরা কোনো সহায়তা পাই না। দুই দিন পার হয়ে গেলেও কোনো সহায়তা বা কোনো বার্তা আমাদের দেওয়া হয়নি। আমি নিজে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি।

 

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশের কোনো আবাসিক দূতাবাস নেই। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস কিরগিজস্তানে অনাবাসী দূতাবাসের দায়িত্ব পালন করে। 


আরও পড়ুন: যুবকদের চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


কিরগিজস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। এছাড়া দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। কিরগিজস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া কোনো বাংলাদেশির আহত বা নিহত হওয়ার কোনো তথ্য এখনও নেই। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বাসা থেকে না বের হতে। তবে একটি আতঙ্ক রয়েছে- আবারও সহিংসতা হয় কি না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।


দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।


এদিকে শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উজবেকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস একই সঙ্গে কিরগিজস্তানের জন্যও দায়িত্বপ্রাপ্ত। বিশকেকে সম্প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর দূতাবাস পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। দূতাবাস এ বিষয়ে কিরগিজস্তান সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে।


জেবি/এজে