ঘুরতে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে স্ত্রীকে হত্যা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, ২২শে মে ২০২৪


ঘুরতে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে স্ত্রীকে হত্যা
ছবি: সংগৃহীত

স্ত্রী বিলকিসকে দুনিয়া থেকে শেষ করে দিতে পূর্বাচল এলাকায় ট্যাক্সিক্যাবে ঘুরতে যেতেন এবং সুযোগ খুঁজতেন মিজানুর রহমান ওরফে সুমন। আর একদিন মিলেও যায় সেই সুযোগ। এদিন পূর্বাচলের ২৪ নম্বর সেক্টরের একটি নিরিবিলি জায়গা দেখে গাড়ি থামান স্বামী সুমন। এরপর স্ত্রীকে বসিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পাইপ থেকে পেট্রল বের করে একটি বোতলে ভরে নেন তিনি। এরপর স্ত্রীর গায়ে পেট্রল ছিটিয়ে দেশলাই জ্বালিয়ে ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে পালিয়ে যান ঘাতক স্বামী সুমন। পরে বিলকিসের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে পরের দিন মারা যান তিনি।


মঙ্গলবার (২১ মে) গাজীপুরের বাসন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমান ওরফে সুমনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ।


আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে


তিনি জানান, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্যাক্সিক্যাবচালক মিজানুর রহমান ওরফে সুমন। কয়েক বছর ধরে প্রথম স্ত্রী শিমু, দেড় বছরের মেয়ে, মা–সহ রাজধানীর তুরাগ থানার রানাভোলায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। এ অবস্থায় দুই বছর আগে কাউকে না জানিয়ে বিলকিস বেগমকে (২৬) বিয়ে করে রানাভোলার প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া নামক স্থানে অন্য একটি ভাড়া বাসায় রাখেন। তার স্বল্প আয়েই দুটি সংসার চালাতে হতো। গত তিন-চার মাস ধরে বিলকিস মিজানুরের কাছে একটু বেশি টাকা দাবি করলে তাদের মধ্যে তিক্ততার শুরু হয়। একপর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন স্বামী সুমন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি মাঝেমধ্যে বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যেতেন এবং সুযোগের অপেক্ষা করতেন।’


মোস্তাক আহমেদ জানান, ‘রবিবার (১৯ মে) দুপুরের পর হত্যার উদ্দেশ্যে সুমন বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যায়। পথে চা পান করে জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকে। বিকাল ৪টার পর গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার পূর্বাচল ২৪নং সেক্টরের নিরিবিলি এলাকায় জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাড়ি থামিয়ে স্ত্রীকে ভেতরে বসিয়ে রেখে সুমন গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি স্টার্ট অবস্থায় পাইপ দিয়ে পেট্রোল বের করে বোতলে ভরে। কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে নেমে আসলে সুমন বোতলে রাখা পেট্রোল বিলকিসের গায়ে ছিটিয়ে দেয় এবং ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে গায়ে ছুড়ে মারে। বিলকিস গায়ে আগুন লাগলে বাঁচার জন্য চিৎকার শুরু করেন। তখন ঘাতক স্বামী হত্যাকারী সুমন গাড়ি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বিলকিসের ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে একটি ড্রেন থেকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাকে শেখ হাসিনা বার্ন হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সোমবার (২০ মে) সকাল ৯টায় বিলকিস মৃত্যুর কোরে ঢুলে পড়েন। এ ঘটনার পর থেকেই ঘাতক স্বামী সুমন আত্মগোপনে চলে যান। পরে র‌্যাব-১ আসামি সুমনকে গ্রেফতারে অভিযান চালায় এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে আসামি পাষণ্ড স্বামী সুমনকে গাজীপুরের বাসন থানার নাওজোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।’


আরও পড়ুন: রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল লরি


র‍্যাবের পরিচালক জানান, ‘ঘটনার পর মিজানুর আত্মগোপনে চলে যান। পরে তাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের বাসন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‍্যাব-১। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’


এমএল/