নিম্নচাপ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে, আঘাত হানতে পারে যেসব অঞ্চলে


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৪৮ অপরাহ্ন, ২৪শে মে ২০২৪


নিম্নচাপ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে, আঘাত হানতে পারে যেসব অঞ্চলে
ফাইল ছবি

দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি শক্তিশালী নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে।নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হলে এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া এবং সুন্দরবন এলাকায় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।


যা আরও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে শনিবার (২৫ মে) নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এ পরিণত হতে পারে। আর শুক্রবারের মধ্যেই এটি আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপটি যদি সত্যিই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে।


বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হলে এর শক্তিমত্তা ও ল্যান্ডফল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বলতে পারব। তবে ইতোমধ্যে এর গতিবিধি পর্যালোচনা করে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা হলো, ইতোমধ্যে এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রমের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ভারতের উড়িস্যা রাজ্য থেকে শুরু করে মায়ানমারের সিত্তিই, এই রেঞ্জের যেকোনও স্থান থেকে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকতে পারে সাতক্ষীরা থেকে চট্রগ্রামের উপকূলভাগ।


তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এটি অনেক বেশি তীব্রতাসম্পন্ন বা সুপার সাইক্লোনের আকার ধারণ করতে পারবে না। এর পরিবর্তে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৫ থেকে ১৩৫ কি.মি. প্রতি ঘণ্টায় থাকতে পারে। এর সর্বোচ্চ শক্তি উপকূলভাগ অতিক্রম করার সময় পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।


আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রেমাল সতর্কতায় উপকূলে প্রচার মাইকিং


রেমাল আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে, সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার এ সম্ভাবনা থাকবে শতকরা ৬৫ ভাগ, উড়িস্যা উত্তর থেকে পশ্চিম বঙ্গ পর্যন্ত সম্ভাবনা ২৫ ভাগ এবং মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শতকরা ১০ ভাগ 


যদি এটি বাংলাদেশের পশ্চিমে তথা কলকাতা থেকে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে তবে খুলনা ও বরিশালের উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েকফুট জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। এবং প্রায় সারাদেশেই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে।


আবার যদি এটি উড়িস্যা থেকে কলকাতার আশেপাশে ল্যান্ডফল করে তবে এর একটা আউটার কনভারজেন্স জোন হিসেবে চট্টগ্রাম ও বরিশালে বেশ বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। অপরদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারণে একটা দুর্বল প্রভাব সারা দেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে। যার ফলে বর্ষাকালের মত টিপ টিপ বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে।


যদি এটি বরিশাল-চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে ল্যান্ডফল করে তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি সারাদেশেই বৃষ্টিপাত হতে পারে। শুধু ব্যতিক্রম হিসেবে রংপুর বিভাগেই বৃষ্টি কিছুটা কম হবে।


আরও পড়ুন: নিম্নচাপে রুপ নিলো লঘুচাপ, সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত


যদি চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করে তবে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হতে পারে। আর যদি এটি মায়ানমারে যায় তবে একমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল ব্যতীত আর কোথাও বৃষ্টিপাত হবে না।


এই আবহাওয়া গবেষক আরও মনে করেন, সিস্টেম যত বেশি শক্তিশালী হয় তত এটি কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হয়। ফলে আশপাশে মেঘের ব্যাসার্ধ অনেক কমে যায়। অপরদিকে যত কম শক্তিশালী হয় মেঘ তত দূরে ছড়ানো ছিটানো থাকে যা একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে।


সকাল ৬টায় যে অবস্থায় ছিল লঘুচাপটি


শুক্রবার (২৪ মে) দুপুরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে।


আরও পড়ুন: ১২০ কি.মি গতিতে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল


আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের স্বাক্ষর করা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঘনীভূত হয়েছে। বর্তমানে এটি পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৫.১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।


এটি শুক্রবার (২৪ মে) সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।


দুপুর ১২টায় যে অবস্থায় ছিল লঘুচাপটি


শুক্রবার বিকেল ৫টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়ার বিশেষ দ্বিতীয় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে: আবহাওয়া অধিদপ্তর


আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমানের সই করা ওই বার্তায় জানানো হয়েছে, নিম্নচাপটি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। যা আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।


জারি করা হয়েছে সতর্কতা সংকেত


চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসাথে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। এই অবস্থায় গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।


এমএল/