ভাবছেন বেশি বয়সে মা হবেন! যা বলছে বিশেষজ্ঞরা
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:৩৯ অপরাহ্ন, ২৯শে মে ২০২৪
বর্তমানে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, মানসিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমান সময়ে অধিকাংশ নারীই দেরিতে মা হচ্ছেন। আবার অনেকে বিয়ে করে দেরিতে সন্তান নিতে চান। দেরিতে মা হওয়া দিন দিন একটি ট্রেন্ডিংয়ে পরিণত হয়েছে। তবে দেরিতে মা হওয়া প্রসঙ্গে কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
ভারতীয় এক স্ত্রী বিশেষ বলেছেন, মেয়েরা গর্ভধারণ করতে পারে ১২ বছর থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। সুতরাং এই বয়সে মা হওয়া সম্ভব। কিন্তু ৩৫ বা তারও বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে হবু মা ও গর্ভস্থ শিশু দু’জনেরই নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। স্ত্রী ও ধাত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম বার মা হওয়ার আদর্শ বয়স ২৫ থেকে ৩০.৫ বছর। ৩৫ বছরের পর যাঁরা প্রথম বার মা হতে চলেছেন তাঁদের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় বাঙালি মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয় অনেক আগে। অর্থাৎ তারা ঋতুমতী হয় ১০-১১ বছর বয়সেই। স্বাভাবিকভাবেই ফার্টাইল সময়টাও এগিয়ে আসে। ৩৫-এর পর গর্ভধারণকে সাধারণত ‘হাইরিস্ক প্রেগন্যান্সি’ হিসাবে গণ্য করা হয়। এই সময় গর্ভধারণের চান্স কমতে থাকে। আইভিএফের মতো চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়। বয়স বাড়লে অ্যাবরশনের চান্সও বেড়ে যায়। হাইপার টেনশনের মতো একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। নরমাল ডেলিভারি কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ভরসা সেই সিজার। পরে যা নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: দাঁত দিয়ে নখ কাটা অভ্যাস নিয়ে যা জানাল বিশেষজ্ঞরা
তিনি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন-
১। মা হওয়ার পরিকল্পনা করার সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম করে ফলিক অ্যাসিড ওষুধ খাওয়া জরুরী।
২) সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে ‘প্রি প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিং’ করিয়ে নিলে ভাল হয়। এ ক্ষেত্রে হবু সন্তান ও মায়ের অসুস্থ হয়ে পড়া ও অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি কমে যায়।
৩) সম্প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশন’-এর ‘সারক্যুলেশন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, যে সন্তান ধারণের আগে হবু মায়ের হৃদ্যন্ত্র পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার।
৪) বেশি বয়সে মা হওয়া ‘হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি’ গ্রুপে পড়ে। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ফিটাল মেডিসিন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরী। এতে ভবিষ্যতের অনেক জটিলতা ও সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।
৭) অনেক সময়ে হবু মায়ের সুগার বা থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সাধারণ পরীক্ষা অর্থাৎ ফাস্টিং বা পিপি সুগার টেস্ট করিয়ে ধরা নাও যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এইচবিএ১সি টেষ্ট ও গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা প্রয়োজন।
৯) হবু মায়ের রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা (ক্লটিং ডিসর্ডার) থাকলেও মিসক্যারেজের ঝুঁকি বাড়ে। তাই মধ্য তিরিশে যাঁরা মা হতে চান তাঁদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগানো উচিত।
আরও পড়ুন: সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে গিয়ে পুরুষ হারাচ্ছেন বাবা হওয়ার ক্ষমতা
শুধু তাই নয়, সন্তান আসার জন্য মাসের কোন সময় বা কতদিন অন্তর যৌন মিলন করা উচিত, সেটাও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার। কারণ, চাইলেই কয়েক মাসের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং তাড়াহুড়ো করা চলবে না। কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে একমাসে গর্ভধারণের চান্স ৮%। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ধীরে সুস্থে এগোনোই ভালো।
স্ট্রেস গর্ভধারণের অন্যতম বাধা। ৪০-৪২ বছরে মা হতে চাইলে নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রি প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিং করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গর্ভধারণের আগে মানসিকভাবে মা হয়ে ওঠা দরকার। প্রি প্রেগন্যান্সি ডিপ্রেশন থাকলে পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন আসা স্বাভাবিক। তবে তা চিকিৎসার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শারীরিক সমস্যা আছে কি না জানা, কাউন্সেলিং, ফার্টাইল টাইম জানা, প্রয়োজনে ওষুধ, শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সবটাই হয় চিকিৎসকের পরামর্শে। বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে তার দেখভালটা হয় অন্যরকম। ডবল মার্কার, এনটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা প্রয়োজন। সন্তানের কোনো জিনগত, জন্মগত ত্রুটি আছে কি না জানা দরকার। ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত কি না পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া দরকার। মা সম্পূর্ণ সুস্থ কি না দেখে নিতে হবে। মায়ের হার্টের অবস্থা জেনে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পরামর্শ নিয়ে এগোলে গোটা জার্নিটা মসৃণ ও সমস্যাহীন হয়।
জেবি/আজুবা