ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:০২ অপরাহ্ন, ৩০শে মে ২০২৪


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ
ছবি: প্রতিনিধি

গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রানলয় কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ কর্তৃক প্রশাসনিক ভবনের সামনে জমায়েত হয়ে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢা.বি. কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল মোতালেব এবং সঞ্চালনা করেন ঢা.বি. কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য-সচিব ও ঢা.বি. ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: মোবারক হোসেন। 


বিক্ষোভ মিছিলে প্লাকার্ড সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ঢা.বি. ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হান্নান মিজি, ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সভাপতি মো. শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মিয়া, কারিগরী কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম বাদল, কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন, সভাপতি মো. ছারোয়ার মোর্শেদ, লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ছরোয়ার হোসেন।


এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কর্মচারী সমিতির সোহেল রানা, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, মো. কামরুল ইসলাম, মো. মুসলিম মিঞা, মো. রফিকুল ইসলাম সুজন, অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ চরম বৈষম্যে ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ভিন্ন নীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।


আরও পড়ুন: রাবিতে অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু, অ্যাপে ক্লাসের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ 


এছাড়া স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বায়ত্বশাসন প্রদান করে শিক্ষা ও গবেষণাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন, এরই ধারাবাহিকতায় আরো স্বায়ত্বশাষিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এই প্রজ্ঞাপন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের প্রতি চরম অবমাননা প্রদর্শন এবং ১৯৭৩ এর আদেশ অমান্যকরা হয়েছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ মনে করে। 


শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনেরস্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যাহত হবে। কেননা, এর ফলে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরিতে আসতে আগ্রহী হবে না। এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দুরভিসন্ধি রয়েছে কিনা সেটাও ভেবে দেখা দরকার। 


যে মূহুর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চর্তুথবার ক্ষমতায় এসে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমাজ এই উন্নয়ন যাত্রায় বিপুল উৎসাহ নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছেন, ঠিক সেই মূহুর্তে বিদ্যমান সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের পথে ঠেলে দেওয়ার পুরনো কৌশল শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ অনতিবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা ও অসন্তোষ লাঘব করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।


আরও পড়ুন: কুবির মার্কেটিং বিভাগের নতুন বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ সোলায়মান 


অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে। সমাপনি বক্তব্যে ঢা.বি. কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, দেশের উ”চ শিক্ষা খাত ধ্বংস হলে একটি জাতি, একটি দেশ ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাবে।


১৯৭৫ এর ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ নেতাদের বলেছিলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশেষ মর্যাদা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের চাকুরীর ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেব। কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটে স্বপরিবারে শহিদ হওয়ায় তিনি এই ঘোষনা দিয়ে যেতে পারেননি। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি দাবি জানাই এই নতুন পেনশন স্কীমের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আমাদের বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন বহাল রাখার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করার। 


ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা আন্দোলনে যে ভূমিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্বাধীন দেশ দিয়েছেন, একটা স্বাধীন পতাকা উত্তোলিত হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয় কে কোনো কালো আইন দ্বারা দাবিয়ে রাখা যাবে না। বক্তব্য শেষে তিনি নতুন কর্মসূচি ঘোষনা করেন, আগামী ৪ জুন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হবে। তবে জরুরি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবেন।


আরও পড়ুন: জাবিতে ক্যারিয়ার ক্লাবের নেতৃত্বে অনুপম ও মনোয়ার


ইদুল আযহার পূর্বে সরকার এই দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করলে লাগাতার কর্মবিরতিসহ অর্থমন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ অভিমুখে পদযাত্রার মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।


এমএল/