৩ মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, ১লা জুন ২০২৪


৩ মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ার কারনে শনিবার (১ জুন) থেকে আগামী (৩১ আগস্ট) পর্যন্ত তিন মাস বন্ধ থাকবে বিশ্ব ঐহিত্য সুন্দরবন। এ সময় সুন্দরবনে পর্যটক, জেলে-বাওয়ালীসহ সাধারণ মানুষের চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত কাটিয়ে ঘুড়ে দাড়াবে সুন্দরবন এমনটাই দাবী বন বিভাগের।  


ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হরিণসহ শতাধিক বণ্যপ্রাণীর মরদেহ। নষ্ট হয়ে গেছে সুন্দরবনের মিঠাপানির উৎস। এরই মধ্যে সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ার কারণে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনবিভাগ। বন বিভাগের দাবী নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত কাটিয়ে আবারও ঘুড়ে দাঁড়াবে বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বন। কোলাহল মুক্ত সুন্দরবনে বন্যপ্রানীরা অবাধ বিচারনের পাশাপাশি নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পারবে। এর ফলে সুন্দরবনের বন্যপ্রানী ও মৎস্য সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য আরও সমৃদ্ধ হবে দাবী করছে বনবিভাগ।   


সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সকল নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকতো। এর মধ্যে ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞা সময় আরও এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে করা হয়। সেই থেকে সুন্দরবনে প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। তবে নিষেধাজ্ঞার এ সময় চড়ম বিপাকে পরেন সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে, বাওয়ালী ও পর্যাটন খাতের সাথে জড়িতরা। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সরকারি সহায়তার দাবী তাদের।


আরও পড়ুন: সুন্দরবনে হরিণসহ একশ প্রাণির মৃতদেহ উদ্ধার


সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক এক পাঁচ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে।


খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, জুন থেকে আগস্ট- এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ ছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীরও প্রজনন মৌসুম। এই তিন মাস বনে পর্যটক ও জেলে না গেলে বনের জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী নিরাপদে থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে।


আরও পড়ুন: রেমালের প্রভাবে তলিয়ে গেল সুন্দরবন


পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র এবং পর্যটনকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির জানান, সরকার তার রাজস্বের দিকে না তাকিয়ে সুন্দরবন ও এতে বিচরণকারী প্রাণী ও বিভিন্ন খালের মাছ রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য আগামী তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।


মোংলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মোংলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ৮ হাজার ৪০০ জন। অবশ্য স্থানীয় বনজীবীরা বলছেন, মোংলায় জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। ভৌগোলিক কারণেই সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ–অধ্যুষিত। মোংলায় অনেক জেলে পরিবারের বসবাস, যারা বংশপরম্পরায় বনজীবী। তারা সারা বছর সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।


ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত ও তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বৃদ্ধি পাশাপাশি জীববৈচিত্র আরও সমৃদ্ধ হবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।


জেবি/এসবি