আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়াকে ‘ভুড়ি বের করার’ হুমকি,
সাংবাদিককে ‘গুলির’ হুংকার এএসআইয়ের
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৫৫ অপরাহ্ন, ১লা জুন ২০২৪
সাভারের আশুলিয়ায় বাড়ির ভাড়াটিয়াকে পেটে লাথি দিয়ে ভুড়ি বের করার হুমকি ও এক সাংবাদিককে ‘গুলির’ করার হুংকার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (৩১ মে) দুপুরের দিকে আশুলিয়া থানার অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. দুলাল। তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সশস্ত্র হিসেবে কর্মরত বলে নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া মো. শামীম মিয়া রংপুরের পীরগঞ্জের ভগবানপুরের বাসিন্দা। তিনি আশুলিয়ার মুসলিমটেক নামাপাড়া এলাকার মো. দুলালের স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
মো. শামীম মিয়া অভিযোগ করে জানান, ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর বাড়িতে পরিবারসহ ভাড়া থাকতেন। মে মাসের শুরুতেই বাড়িওয়ালী শাহনাজ পারভীনকে জানান মাস শেষে বাসা ছেড়ে দেবেন তারা। সে অনুযায়ী শনিবার বাসা ছাড়বেন বলে বাড়িওয়ালীকে জানান। শুক্রবার সকালে বাসার মালামাল গোছানো শুরু করেন। এরমধ্যেই সকালের দিকে এসে বাড়িওয়ালী শুক্রবারই দুপুর ১২ টার ভিতর তাদের বাসা ছেড়ে দিতে বলেন। এ নিয়ে তর্কের জেরে ভাড়াটিয়াকে মারধর করেন শাহনাজ পারভীন।
মো. শামীম মিয়া অভিযোগ করে আরও বলেন, মারধরের একপর্যায়ে তার স্ত্রীর হাতে বটি দিয়ে কোপ দেন বাড়িওয়ালা শাহনাজ পারভীন। মারধর করা হয় তার কন্যাকেও। আহত অবস্থায় তার স্ত্রীকে ধামরাইয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তার হাতে পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করতে আশুলিয়া থানায় যান তারা। সেখানে সেই সময় উপস্থিত হন বাড়ির মালিকের স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা মো. দুলাল। তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। বিষয়টি দেখে সেখানে এগিয়ে যান সাভারে কর্মরত বার্তা টুয়েন্টিফোর ডট কমের সাংবাদিক মো. কামরুজ্জামান। তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আইন তো সবার জন্য বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং রাগারাগি করে সেখান থেকে সরে যান।
আরও পড়ুন: আশুলিয়া নয়, টঙ্গী পর্যন্ত যাবে মেট্রোরেল
থানায় উপস্থিত উভয়পক্ষ ও থানা সূত্র জানায়, বিষয়টি সমাধানে উভয় পক্ষকে নিয়ে থানার দ্বিতীয় তলায় আলোচনায় বসেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোতালেব। এতে ওই পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ভাড়াটিয়ারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেন না ও বাসায় অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেশি হয়। এক পর্যায়ে ভাড়াটিয়া শামীম কথা বলতে গেলে দুলাল তাকে পেটে লাথি দিয়ে ভুড়ি বের করার হুমকি দেন। এছাড়া সাংবাদিক মো. কামরুজ্জামান ভাড়াটিয়ারা বাসা ভাড়া ঠিকমতো না দিলে ৫ বছর ধরে কিভাবে বাসায় থাকলেন জিজ্ঞেস করলে দুলাল তাকে গুলি করে শেষ করে দেয়ার হুমকি দেন। এসময় উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোতালেব ধমক দিয়ে দুলালকে থামিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক মো. কামরুজ্জামান বলেন, থানার সামনে দুইজনকে বাগবিতন্ডা করতে দেখি। একজন অন্যজনকে বলছিলেন, থানা তোদের জন্য নয়। এটা শুনে সেখানে গিয়ে আইন সবার জন্য সমান বলার সঙ্গে সঙ্গেই ওই ব্যক্তি ক্ষেপে যান। একপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে থানায় দ্বিতীয় তলায় গিয়েও ওই ব্যক্তিকে ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বলতে দেখি। তিনি বলছিলেন, ভাড়াটিয়া নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেন না। তখন আমি তার কাছে জানতে চাই, ভাড়া ঠিকমতো না দিলে পাঁচ বছর বাসায় কেন থাকতে দিয়েছেন? এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাকে গুলি করার হুমকি দেন। পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এবং তিনি গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ লাইনে কর্মরত আছেন।
এব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সশস্ত্র মো. দুলাল বলেন, 'বাসার ভাড়াটিয়ার সঙ্গে আমার স্ত্রীর সমস্যা হয়েছিল। তেমন কিছু হয়নি। সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো জানতাম না তিনি সাংবাদিক। জানার পর আমি তাকে সরি বলেছি'
এবিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, এই বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। অভিযোগ পেলে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেবি/এসবি