এমপিওতে স্বপ্ন এবং হুইল চেয়ারে থমকে গেছে কবিতার জীবন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


এমপিওতে স্বপ্ন এবং হুইল চেয়ারে থমকে গেছে কবিতার জীবন

হুইল চেয়ারে থমকে গেছে কবিতার জীবন। ভাগ্যের চাকা আটকে গেছে লাল ফিতায় বাঁধা এমপিও নামক ফাইল। একমাত্র সন্তানটিও নির্মম বাস্তবতায় ছিন্ন করেছে মাতৃত্বের বন্ধন। আপন জনের ব্যাসার্ধটা সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু থেকে ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবেশীর অবহেলা আর অবজ্ঞায় কবিতার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।  হুইল চেয়ারের চাকা গড়িয়ে স্বামী বিদ্যুৎ সরকার এখনও সরে দাঁড়ায়নি কবিতার পাশ থেকে।

কবিতা এক সাহসী বাঙালি নারী। প্রতিবন্ধী স্বামীর পরিয়ে দেয়া সিঁথের সিঁদুর সূর্যোদয়ের আলোয় শক্তি সঞ্চয় করে। সংসারের কাজ শেষে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে অভাবের চিহ্ন ঢাকে কবিতা। অন্ধকার সমাজকে আলোকিত করে যে বিদ্যামন্দির, কবিতা সে মন্দিরেই আলো জ্বালায়। ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দিরের কলেজ শাখায় তার আয়া হিসেবে যোগদান ১০ বছর আগে। ঐতিহ্য, সাফল্য আর সম্পদে ঠাসা এই প্রতিষ্ঠানে অগোছালো জীবনকে একটু সাজাতে এই কাজে যোগ দেয় কবিতা। দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর। কবিতার প্রতি রাতের রঙিন স্বপ্ন ভোরের আলোয় ম্লান হচ্ছে দশটি বছর। শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ, শতভাগ সাফল্য এমনকি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তির অভিভাবকের ছায়া তলে থেকেও আজও লাল ফিতায় বাঁধা এমপিও ফাইল থেকে মুক্ত হয়নি কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির স্কুল এন্ড কলেজ। শুধু কবিতা নয় এক যাঁক প্রতিভাবান শিক্ষক-কর্মচারীর ভিন্ন ভিন্ন মানবেতর জীবন কাহিনীর স্বাক্ষী এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন কোন না কোন শিক্ষক -কর্মচারীর বেদনার অশ্রুতে সিক্ত হয় এই প্রতিষ্ঠানের আঙিনা। প্রতিদিন কঠিন দীর্ঘশ্বাসে ভারি হচ্ছে এই বিদ্যাপীঠের বাতাস। একই আঙ্গিনায় ভর্ৎসনা আর অবজ্ঞার বাক্যবানে ডুকরে কাঁদে অনেকে। 

জানা
গেছে সরকারের নতুন শিক্ষানীতির আলোকে মাধ্যমিক স্তরকে একদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি খোলার বিধান অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক যশোর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ২৬-০৮-২০১২ খ্রিঃ ক/খ/৫৯২ স্মারক পত্র মোতাবেক অত্র বিদ্যালয়ে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির এবং পাঠদানের অনুমতি প্রদান করেন। ২০১৩-২০১৪শিক্ষাবর্ষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অত্র প্রতিষ্ঠানের কলেজ পর্যায় থেকে নিয়মিত ভাবে শিক্ষার্থীরা এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে সফলতা অর্জন করেছে। সর্বশেষ ২০২১সালে এইচ এস সি পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ। প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করেছে পত্র নং ক/অ/৪৯৬, তাং-২১-০৬-২০১৭ খ্রি ও সর্বশেষ স্বীকৃতি নবায়নের তারিখ ০১-০৭-২০২০ খ্রিঃ, স্মারক নং ৩৭.১১.৪০৪১.৪৪১.২১.০০১.২০.১১০। কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির স্কুল এন্ড কলেজের বিধি মোতাবেক ও এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত কলেজ পর্যায়ে ১১জন ও ৩জন কর্মচারী রয়েছে। 

কবিতার ভাগ্যের চাকা গড়ায়নি তবে গতকাল বিকেলে প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে হুইল চেয়ারের চাকা গড়ি এসেছিল কপিলমুনি বাজারে। সূর্যোদয়ের আলোয় আলোকিত হওয়া কবিতার সিঁথের সিঁদুর যেন ফিকে হয়ে গেছে। অযুত বেদনায় ক্লান্ত কবিতার জরাজীর্ণ ঘরে ফেরার তাড়া ছিল প্রবল। ততক্ষণে প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতার মুহুর্তেই কবিতার শব্দ চয়নের ভারী কালো মেঘ গলতে শুরু করেছে। অজান্তে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতেই ভাঁজে ভাঁজে আগলে রাখা অভাবের ছাঁয়া নির্লজ্জের মত হেসে ওঠে। কবিতা তার শ্রমের মর্যদা চায়। চাকরীজীবী হিসেবে আত্মমর্যাদার সাথে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চায়। কবিতাকে আটকে রাখা আর সাধ্যকার। শক্ত মুঠোয় হুইল চেয়ারের হাতল ধরে সাঁত পাঁকে বাঁধা মানুষটিকে আপন কুঠিরে ফেরাতে ধাক্কা দেয়। কবিতার ধাক্কায় হুইল চেয়ারের চাকা ঘোরে কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘোরে না। তাইতো এভাবে লাল ফিতায় বাঁধা কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির স্কুল এন্ড কলেজের এমপিও ফাইলে কবিতার রাতের স্বপ্ন এবারও যেন ভোরের আলোয় ম্লান না হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে এমন দাবী স্থানীয়দের।

এসএ/