যে দেশের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর!


Janobani

জনবাণী ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫:২১ অপরাহ্ন, ৩রা জুন ২০২৪


যে দেশের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর!
ছবি: সংগৃহীত

আপনি জানলে অবাক হবেন যে, পৃথিবীতে এমন একটি দেশ আছে যে দেশের মানুষেরা একশো বছর পর্যন্ত বাঁচেন। এজিয়ান সাগরের পূর্ব অংশের গ্রীকের ছোট দ্বীপটির স্থায়ী বাসিন্দা আট হাজারের কিছু বেশি। দেশটির নাম ইকারিয়া, এটি বিশ্বের পাঁচ ‘ব্লু জোন’ এর একটি। ‘ব্লু জোন’ বলতে সেসব অঞ্চল বোঝায় যেখানকার মানুষদের মধ্যে শতবর্ষী হওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।


সেখানে অন্যান্য অনেক জায়গার তুলনায় ক্রনিক ডিজিজ বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের হার কম। জানা যায়, ইকারিয়ানের এক তৃতীয়াংশ ৯০ বছরের বেশি বেঁচে থাকেন। এছাড়াও দৃঢ় সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং প্রয়োজন মাফিক ঘুম ইত্যাদি এই দ্বীপের বাসিন্দাদের শতবর্ষী হওয়ার কারণ বলে ধারণা করা হয়।


এর মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাদের খাদ্যাভ্যাস। অর্থাৎ, কী ধরনের খাবার গ্রহণ করে তারা।


১। মেডিটারেনিয়ান ডায়েট বা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর হিসেবে সুপরিচিত। এই ডায়েটের সঙ্গে মিল আছে ইকারিয়া ডায়েটের। এতেও স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রচুর আঁশ বা ফাইবার এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই খাদ্যাভ্যাস অধিকভাবে উদ্ভিজ্জ নির্ভর। 


২।সেখানে বাদাম, আলু, লেবু, শাকসবজি, শস্য এবং বীজে আধিক্য থাকে। ফ্যাট বা চর্বির প্রধান উৎস হিসেবে থাকে জলপাই তেল।


৩। দই, পনির, মাছ, পোল্ট্রি এবং রেড ওয়াইন পরিমিত খাওয়া হয়। খুবই সীমিত পরিমাণে লাল মাংস খাওয়া হয়, মাসে কয়েকবার।


আরও পড়ুন: কী কারণে বিরিয়ানির পাতিল লাল কাপড়ে ঢাকা থাকে?


দেখা গেছে, এমন নিয়ম মেনে খাবার নির্বাচনে রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। হ্রাস পায় হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের নেপথ্য কারণগুলো।


ডায়ান কোচিলাস নামে একজন গ্রিক-আমেরিকান শেফ সম্প্রতি ‘দ্য ইকারিয়া ওয়ে’ নামে একটি রান্নার বই লিখেছেন। 


শেফ ডায়ান কোচিলাস তার এই নতুন বইয়ে দ্বীপটির বাসিন্দাদের খাবারের আলোকে একটি ‘প্ল্যান’ দিয়েছেন। যারা নিজেদের পাতে মেডিটারেনিয়ান ঘরানা নিয়ে আসতে চান তাদের জন্য এই পরামর্শ।


বইটি দু’টি প্রশ্নে আলোকপাত করে: কীভাবে ‘মনকে কষ্ট না দিয়েও’ শরীরকে ভালো রাখা যায় এবং রান্নাটা কীভাবে করতে হবে।


প্রশ্নগুলোর উত্তর তিনি খুঁজেছেন প্রশান্তি ও স্বস্তিদায়িনী দ্বীপটির সরল ও মৃদুগতির জীবনের অনুপ্রেরণায়। যেখানে মানুষে মানুষে বন্ধন গড়ে ওঠে খাবার টেবিলকে ঘিরে।


আরও পড়ুন: দাঁত দিয়ে নখ কাটা অভ্যাস নিয়ে যা জানাল বিশেষজ্ঞরা


নানান রকম খাবারের কথা বলা হয়েছে বইয়ে।


এতে দই, শসা এবং আখরোট স্যুপের মতো হালকা খাবার, স্ন্যাকস, বড় বা মাঝারি লোকসমাগমের ডিনারের রেসিপি যেমন মিলবে তেমনি পাওয়া যাবে পনিরে ভাজা পিচ এবং আরগুলা সালাদ; রেড ওয়াইনে ভাজা মশলাদার মটরশুটি; পেস্তা-কিসমিসের পোলাওয়ের মত পদ।


গ্রিসের অন্যান্য অংশের মতো এই দ্বীপেও কিছু মানুষ এখনও গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের দিনপঞ্জি অনুযায়ী উপবাস ব্রত পালন করে থাকে। তাই, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় যেমন লেন্ট(ইস্টারের আগের ৪০ দিনের উপবাস) এর সময় মাংস খায় না।


কোচিলাসের রান্নার বইয়ে যেসব উপাদানের কথা বলা হয়েছে সেগুলো ইকারিয়াতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।


যার মধ্যে রয়েছে দই, বাদাম, মধু, সামুদ্রিক লবণ, জলপাই তেল, বাদাম, টাটকা ভেষজ উপাদান, নানাবিধ শস্য, রসুন এবং বিভিন্ন ধরনের লেবু।


দ্য ইকারিয়া ওয়েতে শিমজাতীয় খাদ্যের জয়জয়কার। যত পদের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে, এগুলোকে কোচিলাস বিশেষ স্থান দিয়েছেন।


উদাহরণ হিসেবে দুয়েকটির কথা বলা যায় – মটরশুটি, তাহিনি(এক ধরনের তিল বাটা) এবং দই; ফাভা বিন(বিশেষ জাতের শিমের বিচি) স্টু; মরিচ দিয়ে কিডনি বিন; হলুদ, মৌরি এবং লেটুসসহ ক্যারামেলাইজড জাম্বো বিন।


কোচিলাস জানান, শিম বা মটরশুটি কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে রাখে। কারণ এগুলো দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ, যা কোলেস্টেরলের কণিকার সাথে মিশে সেগুলোকে শরীর থেকে সরিয়ে নেয়। টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এটি ‘উপশমকারী’। 


জেবি/আজুবা