নয়নকাড়া শ্রীমঙ্গল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নয়নকাড়া শ্রীমঙ্গল

শীতের শুরুতেই পর্যটকরা ভিড় করতে শুরু করেছে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। পাহাড়ের কোলঘেঁষা সবুজময় শতবর্ষী চা বাগান যেনো প্রকৃতির অনন্য রূপ।

ছোট বড় উঁচু-নিচু টিলা আর হরেক রকম গাছ-গাছালি। টিলার পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা সড়ক। সড়কের কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। যেনো দেশের ভেতর অন্যরকম এক দেশ। চায়ের দেশ, মেঘের দেশ, বন-বনানী, টিলা আর হাওরের দেশ এ শ্রীমঙ্গল। যেখানে বাস করে অনেকগুলো নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ।

শ্রীমঙ্গলের বৈচিত্র্যময় এসব স্থান দেখতে দূরদেশ থেকেও পর্যটকরা ছুটে আসেন। দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি ছড়া, চা বাগান, বনাঞ্চল, নীল জলরাশির হাওর সমৃদ্ধ শহর শ্রীমঙ্গল অপরূপ সৌন্দর্যেরই লীলাভূমি। এখানে চাবাগানই সাধারণ ভ্রমনার্থীদের কাছে সবচে’ বড় আকর্ষণ। ছোট-বড় মিলিয়ে এ উপজেলায় চা-বাগান ৩৮টি।এর মাঝে অনেকগুলোই শতবর্ষী।

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল যাবেন অথচ সাত রং চায়ের স্বাদ নেবেন না, তা কী করে হয়! একই গ্লাসের মধ্যে স্তরে স্তরে সাজানো সাত রং চা! তরল পানীয়কে কীভাবে সাত স্তরে সাজানো সম্ভব! ব্যাপারটি বিস্ময়েরই বটে। অর্ডার করলে গোপন ঘরে প্রস্তুত তৈরির পর সেই চা আপনাকে পরিবেশন করা হবে। প্রতি কাপের মূল্য ৭০-৯০ টাকা।

নয়নাভিরাম এ শহর দেখতে আসা মানুষ মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। শ্রীমঙ্গল শুধু পর্যটন শহরই না, এখনকার চা শিল্প, রাবার, বাঁশ-বেত, লেবু, আনারস, কাঠাঁল, মূল্যবান কাঠ, তাঁতশিল্প ও খনিজ সম্পদের জন্যও বিখ্যাত। শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাস। তারা হচ্ছে-ত্রিপুরা, খাসিয়া, মণিপুরী, সাঁওতাল, গারো, মুরা, খারিয়া, উড়াং। এছাড়া উপজেলার চা বাগানগুলোতে বিভিন্ন সম্প্রদায় রয়েছে। সেই আদিকাল থেকেই বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে দৃঢ় সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাস করে আসছে নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীরা। এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, জীবনাচার, পোষাকের ভিন্নতাসহ আদিবাসী গ্রাম ও পাড়ার বিচিত্র দৃশ্যও উপভোগ করেন পর্যটকরা।

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এ পাহাড়ি উপজেলা শ্রীমঙ্গল প্রধানত হাওর, চা-বাগান, আর উঁচু নিচু টিলাবেষ্টিত। নানা বৈচিত্র্যময় জংলী জীব-জন্তুর বিচরণ, পাহাড়ি ছড়ায় অবিরাম পানি প্রবাহ, পাখির অভয়ারণ্য এ উপজেলাকে করেছে বৈচিত্র্যভান্ডার। বিচিত্র এ শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বেশ কিছু পর্যটন স্পট রয়েছে। প্রধানত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা, রাবার, লেবু, আনারস বাগান, বাইক্কা বিল, টি রিসোর্ট, চা জাদুঘর, ডিনস্টন সিমেট্রি, নির্মাই শিববাড়ি, গলফ ফিল্ড, লালমাটি পাহাড়, বার্ণিশ টিলা, বন্যপ্রাণী সেবাশ্রম, চা বাগানের লেক, চা-কন্যা ভাস্কর্য, হাইল হাওর, বধ্যভূমি ৭১, বিটিআরআই, খাসিয়া পানপুঞ্জি, গারোপল্লী, মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১ প্রভৃতি এ জনপদকে করেছে নজরকাড়া।

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করতে আসছেন নেদারল্যান্ডের পর্যটকরাও। চা বাগানের ছোট-বড় উঁচু-নিচু টিলা আর হরেক রকমের গাছ দেখে অভিভূত তারা

শ্রীমঙ্গলে এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসছেন। কমিউনিটি ইকো-ট্যুরিজম’র অপারেশন ম্যানেজার ও শ্রীমঙ্গল ইকো-ট্যুর গাইড রাসেল আলম জানান, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও স্পেন এর নাগরিকরা শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে আসছেন। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গলো ১বছরে প্রায় ৩হাজার বিদেশি পর্যটক শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করেছেন।

বিদেশি পর্যটকদের পদচারণয় শ্রীমঙ্গলের পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন মুখর।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যাওয়া সবচ’ বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক। জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস এবং সুরমা মেইল কমলাপুর থেকে সিলেট নিয়মিত যাতায়াত করে। আপনাকে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে। এ ছাড়াও সায়দাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে সারাদিনই বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে হলে অন্তত ৩-৪ দিন সময় নিয়ে যাবেন।

জি আই/