ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল সেই মতিউর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেরও পরিচালক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন, ২২শে জুন ২০২৪
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে বলে দাবি করা হচ্ছে। যদিও তা অস্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।
কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ইফাতের বাবা মতিউর রহমানই। এবার কোরবানির ঈদে ইফাত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার অন্তত সাতটি খামার ও একটি হাট থেকে সর্বমোট ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। আর গত বছরও কিনেছেন ৬০ লাখ টাকার পশু।
আর স্বাভাবিক ভাবেই আলোচনা এখন মতিউর রহমানের সম্পদের দিকে গড়িয়েছে। তার ঠিক কত সম্পদ রয়েছে, সেটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের তথ্য বেরিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহে রয়েছে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিংস্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি।
আরও পড়ুন: আবারও অবস্থার অবনতি, মধ্যরাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া
ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা হলেও শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী তিনি। মতিউর ইতোমধ্যে নিজেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া (১৯ জুন প্রচারিত) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ওই কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পরে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে বড় অঙ্কের অর্থ প্রফিট করেছেন।
আলোচনায় উঠে আসে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমান রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদেও রয়েছেন। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুবাদে শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় সুযোগ সুবিধা নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়।
এদিকে মতিউর রহমান ইফাতকে ছেলে হিসেবে অস্বীকার করলেও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাতের মা শাম্মী আখতার শিভলী ওরফে শিবু মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাম্মী আখতারের বাবার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। শাম্মী আখতার ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (ফেনী-২) নিজাম উদ্দিন হাজারীর আত্মীয়।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠকে গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয়
বাবার অঢেল সম্পদে বিলাসী জীবনযাপন করেন ১৯ বছরের ইফাত। তার ব্যবহার করা মোবাইল ফোনে যে সিমকার্ড ব্যবহার করছেন, সেটি তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তোলা। ইফাতের স্বজনও বলছেন, মতিউর রহমান তার বাবা। মতিউর রহমান সম্পর্কে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো বোন-জামাই।
নিজাম উদ্দিন হাজারী বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে জানান, ইফাত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে, এটাই সত্য। কেন নিজের সন্তানকে অস্বীকার করছেন, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমার মামাতো বোন শাম্মী আখতার শিবলীর সঙ্গে মতিউরের বৈবাহিক বিচ্ছেদও হয়নি।
জানা যায়, মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। মতিউর দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর নাম লাইলা কানিজ। যিনি বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মতিউর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন বসুন্ধরায়। দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তারের সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাত। থাকেন ধানমন্ডির বাসায়। আর তার মা থাকেন কাকরাইলের একটি ফ্ল্যাটে। ইফাতের আরেক বোন ফারজানা রহমান ইস্পিতা থাকেন কানাডায়।
এমএল/