কুয়াকাটাতে হোটেলের শেয়ার নিয়ে সৈয়দ আবেদ আলীর প্রতারণার ফাঁদ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৫২ অপরাহ্ন, ৯ই জুলাই ২০২৪


কুয়াকাটাতে হোটেলের শেয়ার নিয়ে  সৈয়দ আবেদ আলীর প্রতারণার ফাঁদ
ছবি: প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এর মাঝে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি হোটেলের শেয়ার বিক্রি নিয়ে গত ১৮ মে সৈয়দ আবেদ আলীর দেওয়া প্রতারনামূলক পোস্ট নিয়ে চাঞ্চল্যতার সৃষ্টি হয়েছে এলাকা জুড়ে। 


সোমবার (৮ জুলাই) সারাদেশে প্রতারক সৈয়দ আবেদ আলী আলোচনায় আসার পর, কুয়াকাটার হোটেল নিয়ে তার দেওয়া মিথ্যা পোস্ট নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে হোটেল কতৃপক্ষ।  


এর আগে (১৮ মে) ফেসবুক পোস্টে (হোটেল সান মেরিনার) প্রস্তাবিত তারকা মানের হোটেলের সাইনবোর্ডের ছবি দিয়ে শেয়ার কিনতে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন আবেদ আলী। সেখানে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন এমন দাবিও করেন।


তার নিজের ফেইসবুক  আইডিতে দেওয়া পোস্টটি হল ‘আমাদের নতুন হোটেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা। সমুদ্রকন্যার পারে আজীবন নিজের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা ও একই সাথে একটা হোটেলের মালিকানা অর্জন করতে আপনিও শেয়ার কিনতে পারেন। শেয়ার কিনতে যোগাযোগ করুন।’


বিভিন্ন তথ্যসূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বেতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জবেদ আলী কৃষিকাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এখনো এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের ভাই আবেদ আলী জীবন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে।


সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন আবেদ আলী। আবেদ আলী সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত চলাফেরা করতেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও উঠবস করতেন।


ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি, মানুষকে সাহায্য করে সেই ভিডিও প্রচার করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়েছেন মানবতার ফেরিওয়ালা। 


আরও পড়ুন: প্রশ্নফাঁস: আবেদপুত্র সিয়ামসহ ১০ আসামি কারাগারে


মঙ্গলবার (৯জুলাই) সরেজমিনে হোটেল সান মেরিনার জায়গাটি ঘুরে দেখা যায়, সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটার রাখাইন মহিলা  মার্কেট রোডে অবস্থিত কথিত ওই জমিতে এখনও কোনো হোটেল  নির্মিত হয়নি।চল্লিশ ( ৪০) শতক জমির চারদিকে ইট দিয়ে তৈরী  সীমানা প্রাচীর রয়েছে, যার সঙ্গে সাইনবোর্ডটি টাঙানো রয়েছে। একপাশে একটি টিনশেডের লম্বা ঘরে বেশ কয়েকটি রুম রয়েছে, যেখানে ওই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক থাকেন। 



প্রস্তাবিত হোটেল সান মেরিনা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. ফারুক হোসেন রুবেল জানান, আমি গত ৮ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি করি। আবেদ আলী নামের এই লোককে কখনও আমাদের মালিকের সঙ্গে দেখিনি। এটার মালিক মোশাররফ হোসেন নামের একজন ঠিকাদার ব্যবসায়ীর। তবে আবেদ আলি নামে যে লোকটি মালিকানা দাবি করছে এটা সম্পূর্ণ ভুয়া। 


আরও পড়ুন: কুলি থেকে যেভাবে শতকোটি টাকার মালিক গাড়িচালক আবেদ আলী


হোটেল সান মেরিনার (প্রস্তাবিত) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি ২০১০ সালে জমিটা ক্রয় করি। এখন পর্যন্ত আমি একা এই জমির মালিক, কোনো পার্টনার নেই। আমরা শেয়ার বিক্রির জন্য সাইনবোর্ড লাগিয়েছি তবে এখন পর্যন্ত কোনো শেয়ার বিক্রি হয়নি। আবেদ আলী নামের এই লোককে আমি চিনি না। আমার টাঙানো ছবি দিয়ে দিয়ে তিনি শেয়ারের মালিকানা দাবি করে প্রতারণা করেছেন। উনি সম্পূর্ণ একজন প্রতারক।আমি এ জন্য ঢাকার গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করব।


এর আগে বিভিন্ন সময় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় আলোচনায় এসে গ্রেফতার হয়েছেন সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সোহানুর রহমান সিয়াম। এরই মধ্যে এই দুইজনসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।


জেবি/এসবি