দেশের একমাত্র মসলা গ্রামে চাষ হচ্ছে ১৪ জাতের মসলা
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ০৫:২২ অপরাহ্ন, ১৩ই জুলাই ২০২৪
আমদানিনির্ভরতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রণোদনায় দেশে একমাত্র মসলা গ্রাম গড়ে উঠেছে কুষ্টিয়া জেলায়। জেলার সদর উপজেলার বড়িয়া গ্রাম এখন সবাই চেনে মসলা গ্রাম হিসেবে। মডেল মাসলা গ্রামে রাস্তার দু’ধারে খাঁচা পদ্ধতিতে দারুচিনি, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মসলার ৬ হাজার চারা লাগানো হয়েছে। বাড়ির উঠান, আঙিনা, পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন পতিত জমিতে জিও ব্যাগে চাষ করা হচ্ছে আদা ও হলুদ। এছাড়াও আধুনিক পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম, গোলমরিচ, জিরা, চুইঝালসহ মোট ১৪ পদের মসলা চাষ করছে বড়িয়া গ্রামের কৃষকেরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০৯ প্রকার মসলা জাতীয় ফসলের চাষাবাদ হয়। আমাদের দেশে ব্যবহার হয় ৫০ প্রকার মসলা। আর চাষাবাদ হয় মাত্র ১৭ প্রকার মসলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু, আবহাওয়া মসলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। দেশে মসলা গবেষণা কেন্দ্রও রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র ১৯ প্রকার মসলার ৩৮টি জাত অবমুক্ত করেছে।
দেশের চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মসলা আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মসলা চাষের উপর গবেষণা বৃদ্ধি করে উৎপাদন ও সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে মধ্যে একটি গ্রামকেই মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছে। সরকারি প্রণোদনায় মডেল মসলা গ্রামে মসলার আবাদ হচ্ছে। এতে যুক্ত হয়েছে ১০০ কৃষক।
আরও পড়ুন: কৃষি তথ্য সার্ভিসে কর্মশালা অনুষ্ঠিত
কৃষক রাশিদুল ইসলাম বলেন, কৃষি অফিসের তদারকিতে রাস্তার দুই ধারে তেজপাতা ও দারুচিনি গাছ লাগানো হয়েছে। আমার বাড়িসহ এই গ্রামের অনেক বাড়ির আশপাশের পড়ে থাকা খালি জমিতে আদা, হলুদসহ বিভিন্ন মসলার চাষ হচ্ছে।
এই মডেল মসলা গ্রামের কৃষক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বাড়ির পাশের পতিত জমি পরিষ্কার করে জিও ব্যাগে আদা ও হলুদ চাষ করেছি। আমাদের কোন খরচ নেই সব খরচ সরকার দিয়েছে। গ্রামের রাস্তার পাশে মসলার গাছ লাগানো হয়েছে, মসলার ফলন ভালো হলে আমাদের এলাকার চাহিদা মিটবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রধান মসলা (মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদ) অন্তত ৩৮ গ্রাম খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দেশে উৎপাদিত ও আমদানি মিলে দৈনিক মাথাপিছু মাত্র ৮ গ্রাম মসলার চাহিদা পূরণ হয়। এ হিসেবে চাহিদা পূরণে বড় ধরনের ঘাটতি থেকে রয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ধরনের মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন আগের থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মসলার উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: বিএডিসিতে এসএসিপি প্রকল্পের কর্মশালা অনুষ্ঠিত
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গৌতম কুমার শীল জনবাণীকে বলেন, মডেল মসলা গ্রামের জন্য কুষ্টিয়ায় পাঁচটি স্থান নির্বাচন করার পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসে বড়িয়া গ্রামকে নির্ধারণ করে। আমরা সেখানে কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার মসলার চারা দিয়েছি। মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে মসলার বীজ সংরক্ষনের লক্ষ্যে মসলা গ্রামে গ্রীন হাউজ স্থাপন করা হবে।
মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রাসেল আহমেদ জনবাণীকে বলেন, মডেল মসলা গ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার বড়িয়া গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়। এখানে মোট ১৪ ধরনের মসলার জাত চাষ করা হচ্ছে। মডেল গ্রামে বসত বাড়ির আঙিনাসহ রাস্তার দুই ধারে পড়ে থাকা ফাঁকা স্থানে মসলার চাষ হচ্ছে। গ্রামটিতে বস্তা পদ্ধতিতে আদা ও হলুদ চাষসহ পরিপূর্ণ একটি মডেল গ্রাম তৈরি করতে পেরেছি। এর সুফল আগামীতে কৃষকেরা পাবেন। মডেল মসলা গ্রামে মসলা চাষের পাশাপাশি মসলার বীজ ও চারা বিক্রি করতে পারবে কৃষকেরা। আগামীতে সারাদেশে আরও অনেক মডেল মসলা গ্রাম তৈরি হবে এবং আমাদের প্রধান লক্ষ্য মসলার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
জেবি/এসবি