রাজউক হবে দুর্নীতিমুক্ত সেবামুলক প্রতিষ্ঠান
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:৩৮ অপরাহ্ন, ১৫ই জুলাই ২০২৪

মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকারের সৎ, আন্তরিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বে রাজউকের কার্যক্রম ও উন্নয়ন ব্যবস্থায় সাফল্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে কাজ করছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান। তার টার্গেট দুর্নীতিকে দূর করে গ্রহক ভোগান্তি নামবে শূন্যের কোটায়, চালু করা হবে স্মার্ট সেবা ব্যবস্থা। রাজউকের উন্নয়ন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে দরুণ বদলে যাবে ঢাকা মহানগরীর চিত্র।
রাজউককে আটটি জোনে ভাগ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সরকার। তিনি বলেন, গ্রহক ভোগান্তি থাকবে না। খুব শিগরিই স্বাচ্ছন্দ্য ঘরে বসে পাবে রাজউকের অনলাইন সেবা। প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট উদ্যোগের কারণে তিন সিটি করপোরেশন পাবে ‘স্মার্ট’ সিটি’র খেতাব। ইতোমধ্যে গ্রহক সেবা ডিজিটাল করার কাজ শুরু হয়েছে এবং সামগ্রিক অগ্রগতিও বেশ সন্তোষজনক। প্রতিষ্ঠানটি একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্মার্ট সেবামুলক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে বহুবিদ পরিকল্পনা নিয়ে দিনভর কাজ করে যাচ্ছেন রাজউক চেয়ারম্যান। রাজউককে সরকারের একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে।
সম্প্রতি রাজউকে তার কার্যালয়ে দৈনিক জনবাণী’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে কথা বলেন প্রতিষ্ঠাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার।
দৈনিক জনবাণী: আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর রাজউককে আটটি জোনে ভাগ করার কথা বলেছিলেন। এটা করলে কি সেবা বিকেন্দ্রীকরন হবে? সেবাগ্রহীতা কিভাবে উপকৃত হবে?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: আসলে এই প্লান আগেই করা ছিলো। শুধু বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। সেটি শুরু হয়েছে। পুরো ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে এই রাজউক ভবনে আসতে হয়। এখানে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা হয়, দালাল চক্র চলে আসে। আটটা জোনে বিকেন্দ্রীকরন করে ওইসব অফিস থেকে সার্ভিস দেয়া হবে। এতে সবার এখানে আসার প্রয়োজন হবে না। এটা থাকবে হেডকোয়ার্টার। আমরা সেবাটা নগরবাসীর দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একটা অফিস ইতিমধ্যে চলে গেছে। একটা অফিস চলে যাচ্ছে কারওয়ান বাজারে, আরেকটা চলে মতিঝিলে, আরেকটা বিসিআইসি ভবনে। অন্য একটা অফিস মহাখালীতে আছে। আমরা নারায়নগঞ্জে একটা করবো। অর্থাৎ জনগণ যাতে নিরিবিচ্ছিন্ন সেবাটা পায়। সেবাটা যাতে সে সহজেই পায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
দৈনিক জনবাণী: অনেক সময় দেখা যায়, অনেক বছরের পুরোনো ফাইল পাওয়া যায় না। এতে নজরদারি করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে। এর আগে সার্ভার থেকে ৩০ হাজার ফাইল গায়েব হওয়ার ঘটনাও ঘটেছিলো, যেটা হাইকোর্ট অব্দি পৌঁছেছিলো। পুরোনো ফাইলসহ সব ধরনের ফাইলের সুরক্ষিত ডাটাবেজ করা, তথা ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে রাজউকের পদক্ষেপ কি?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: এটা রাজউকে বেশ কয়েকবার ঘটেছে। আমি এসে দেখলাম, পূর্বাচলের ৫/৭টা ফাইলের মালিকানা নিয়ে সমস্যা আছে। আমরা একটা কমিটি করেছি। যাতে কে কোন প্লটের মালিক, সেগুলো নিরুপন করা যায়। ফাইলগুলো ডিজিটাইলজড করার জন্য কাজ করছি। বিষয়টি আরো তরান্বিত করার জন্য আমাদের এমএসটিআইকে আমরা সংযুক্তি করছি। এমএসটিআইয়ের একটি বড় টিম দিনরাত কাজ করছে এই বিষয়ে। আগামী এক, দুই মাসের মধ্যে আমাদের সমস্ত প্লট, গুলশান থেকে শুরু করে ঝিলমিল, পুর্বাচল, উত্তরা আপনারা যে কোনো জায়গায় বসে মোবাইলে বলতে পারবেন কে কোন প্লটের মালিক। যাকে আমরা বলছি স্মার্ট সেবা। এনআইডি এবং তার ঠিকানাসহ যে মালিককে পেয়ে যাবেন। এতে স্বচ্ছতাও আসবে। এছাড়া যদি ট্রান্সফার করতে হয় এবং সেজন্য যে ফি দেবে, সেই ফি বাড়িতে বসে দিতে পারবে। তথ্য চলে আসবে আমাদের কাছে, এখান থেকে তা পরিবর্তন করে দেবো। তিনমাসের মতো সময় লাগতে পারে।
দৈনিক জনবাণী: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এবারের ইশতেহারেও দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রাজউকে দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির বিরোধী অভিযানের দাবি জোরালো হচ্ছে। রাজউকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে আপনার ভূমিকা কি থাকবে?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: রাজউকে যদি কারো এমন অভিযোগ প্রমানিত হয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের। কাজের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবো রাজউকে। যে কোনো বিষয় যদি প্রকাশ পায় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে। অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স নীতি, সেই নীতিতে রাজউককে দুর্নীতিমুক্ত একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে আমি অবিচল।
দৈনিক জনবাণী: অনেক সময় দেখা যায়, প্লান ছাড়াই বহুতল ভবন উঠে গেছে। আবার প্লানে আছে একরকম, নির্মাণ হয়েছে অন্যরকম। কিংবা প্লান অনুযায়ী ভবনের কিছু অংশ করার পর কয়েক বছর পর তা বর্ধিতকরনের সময়ে প্লান মানা হয় না। বিষয়গুলোতে রাজউকের নজরদারির নেই বলে অভিযোগ আছে। আবার অনেকক্ষেত্রে যারা নজরদারি করবেন তাদের ম্যানেজ করে সব হয়। বিষয়টিতে আপনি কিভাবে দেখছেন?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: এই বিষয়ে আমি একমত। এমন হচ্ছে। তবে বিষয়টি আমরা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনবো। বিশেষ করে এটা হয় ঢাকার বাইরে। বিশেষত সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় অনেকগুলো এমন ভবন প্লান ছাড়া বিল্ডিং করে ফেলেছে। এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশেন এবং স্থানীয় সাংসদ এবং যে কাউন্সিলর আছেন; তাদের সঙ্গে বসে ফয়সালা করা যায়। এছাড়া নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, খেলার মাঠ, স্কুল-কলেজ কিভাবে কি করা যায়, আমরা একটা সমন্বিতভাবে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিল্ডিংয়ে ভায়োলেশন করে কিছু কাজ হয়। এগুলো আমরা শক্ত হাতে দমন করবো। আমাদের নগর উন্নয়ণ কমিটি একটা আছে। এবং দ্রুত একটি নতুন আইন আছে। যে আইনে যদি কেউ এমন করে এবং সীমিত অনিয়ম হলে ফাইন করা হবে। বড় ধরনের অনিয়ম হলে বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হবে। এই বিষয়ে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না।
দৈনিক জনবাণী: ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটা তালিকা করা হয়েছিলো। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় বহু ঝুকিপূর্ন ভবন আছে। এসব ভবন নিয়ে রাজউকের পরিকল্পনা কি?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিতকরণ হয়ে গেছে। অনেকগুলো ভবন সরকারি প্রতিষ্ঠানের। তাদেরকে ওয়ার্নিং দিয়েছি। এবং আমাদের কাছে ওয়েবসাইটের ম্যাপসহ আছে। আমরা বলেছি, এগুলো ধ্বংস করে ফেলতে অথবা সংস্কার করতে। এই বিষয়ে আমাদের সংশ্লিষ্ট শাখার সঙ্গে জোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
দৈনিক জনবাণী: সম্প্রতি বেইলী রোডের একটি ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বহু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ওই ভবনে ফায়ার এক্সিটসহ ভবনের প্লান যথাযথ ছিলো না। ঢাকার অধিকাংশ বিল্ডিংয়ে এমন হচ্ছে। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে। যখন ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটে তখন এটা সামনে আসে। কয়েকদিন পর আবারো থেমে যায়। হয়তো নতুন কোনো ঘটনা না ঘটা অব্দি। বিষয়টি কেন হয়? রাজউক কেন কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে না?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: দেখুন আমরা বিল্ডিংয়ের অনুমোদন দেই যে, কোনটা আবাসিক হবে আর কোনটা বাণিজ্যিক হবে। আমরা তো বিল্ডিংয়ের অনুমোদন দেই। আর লাইসেন্স দেয় সিটি কর্পোরেশন। আর ব্যবসার অনুমোদন দেয় ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিস। তিতাস গ্যাসের একটা ব্যাপার আছে। ফায়ার সার্ভিসের একটা ব্যাপার আছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে একটা আদেশ আসছে। ওটা আসলে আমরা সবাই মিলে এই যে বিল্ডিংগুলো আছে এক্সস্টিং যেখানে সমস্যা, এটা যদি রাজউকের কমার্সিয়াল না হয় এবং আবাসিক বিল্ডিংয়ে যদি হোটেল থাকে সেটা আমরা বন্ধ করবো। সংশ্লিষ্ট যে অন্য সংস্থাগুলো আছে তারাও যাবে। কোনো সমস্যা থাকলে মালিকের সাথে বসে সমস্যার সমাধান করবো। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চলবে না। এটা আমি একা পারবো না, সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থাকে নিয়ে পদক্ষেপ নেবো। আমরা চাই ব্যবসা চলুক, তবে জনগণের নিরাপত্তা আগে।
দৈনিক জনবাণী: রাজধানীর নতুন শহর পূর্বাচলকে কেন্দ্র করে অনেক তথ্য গণমাধ্যমে আসে। এই প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা কি?
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা একটা ওয়ান স্টেপ সেন্টার করবো। ওখান থেকে আমরা প্রত্যেকের ওয়ানস্টেপ সেন্টার করে তাৎক্ষনিক তিনকাঠা, পাঁচ কাঠা প্লটের প্লান পাশ করে দিবো। বিদ্যুৎও সব সেক্টরে চলে গেছে। একটা, দুটো সেক্টর বোধহয় বাকি আছে। আর পানিও কিন্তু পাঁচটা সেক্টরে চলে যাবে। এরই মধ্যে এক, দুই, তিন সেক্টরের পানি চলে গেছে। সবাইকে যা ফ্যাসিলিটি দেয়া দরকার সব দিব, যাতে সবাই কাজ করতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক ও কমার্শিয়াল প্লটগুলো নিয়ে জটিলতা ছিলো। এটা হাইকোর্টের একটা রুল ছিলো। সেই রায় মেনে আমরা কাজ করবো। প্লটগুলো দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রতিবন্ধকতা ছিলো, সেটিও তারা গুছিয়ে দিচ্ছে; যাতে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক প্লটগুলো বরাদ্দ করতে পারি। প্রাইমারি স্কুলের জন্য এরই মধ্যে আমরা প্রাইমারী মাস এডুকেশনের মিনিস্ট্রি তাদের ১৩টি প্লট আমরা দিয়ে দিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, সবদিক দিয়ে পূর্বাচলকে সচল করা।
দৈনিক জনবাণী: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সিদ্দিকুর রহমান সরকার: দৈনিক জনবাণী’র অগনিত পাঠককেও আমার অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ।
জেবি/এসবি