বিতর্কিত পোস্ট করে সমালোচনার মুখে কুবি শিক্ষক


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বিতর্কিত পোস্ট করে সমালোচনার মুখে কুবি শিক্ষক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু  ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতি নিহত হওয়ার  ঘটনা নিয়য়ে পোস্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কাজী এম. আনিছুল ইসলাম।

জানা যায়, নিহত কলেজ ছাত্রী প্রীতি ও তার পরিবারকে উদ্দেশ্য করে গত ২৬ মার্চ বেলা ১২টা১০ মিনিটে কাজী আনিছুল তার ফেসবুকে লিখেন, যে প্রশ্নের উত্তর কেউ খুঁজেনি। আমি পাইনি। হয়তো প্রাসঙ্গিক নয়। টিপু খুনের সঙ্গে যে মেয়েটি খুন হলো, রিপোর্ট বলছে, বাসায় মেহমান আসায় তাকে থাকার জন্য বান্ধবীর বাসায় যেতে হয়। মেহমান কী এসেছিল? আসলে কতজন আসছিল? বাসা কি এতই ছোট যে মেয়েটাকে অন্য কোথাও যেতে হলো থাকতে...আত্মীয়ের বাসা নেই? বান্ধবীর বাসায় কেন? মেহমান আসার কারণে মেয়েকে অন্য কোথাও পাঠানোর কালচার আমি এ অঞ্চলের বাবা-মায়ের মধ্যে খুব একটা দেখিনি...এসব জিজ্ঞাসা অবান্তর নয়...হয়তো অনেকেই বলবেন, মেয়েটি খুন হয়েছে এটাই বড় কথা, আমিও তা-ই বলি...আর এ কারণে কী কী 'সোশ্যাল ফ্যাক্টর' মেয়েটিকে খুনের দিকে ঠেলে দিল...।

আজ সকালে পোস্টটি ডিলেট করে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে ফের পোস্ট করেন তিনি, টিপু হত্যার ঘটনায় যে মেয়েটি খুন হয়েছে, সে সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছিলাম গতকাল। এ নিয়ে সচেতন নাগরিকবৃন্দ কষ্ট পেয়েছেন, আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করি। তবে কোনোভাবেই মেয়েটির পরিবার ও অন্য কোনো বিষয় মীন করিনি। যাতে বিচার পেতে মেয়েটির পরিবার সবাইকে পাশে পায়, সবার মতো আমারই তা চাওয়া। সাংবাদিকতা পেশালব্ধ আমার আস্থা ও বিশ্বাস, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নিষ্ঠার সংগে এ ঘটনার তদন্তে কাজ করছে এবং হত্যায় জড়িতদের আইনের মুখোমুখি করবে।আমি আমার পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছি। আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি ও ক্ষমা চাচ্ছি। আশা করি, আপনারা আমার সীমাবদ্ধতাকে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। আমিও একজন মেয়ের বাবা। মেয়েটির মৃত্যু সবার মতো আমাকেও যারপরনাই ব্যথিত করেছে...। আমি ক্ষমাপ্রার্থী...

এ পোস্টের বিরোধীতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন মোহাম্মদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, এই ভদ্রলোক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পদ, অর্থাৎ পায়ের মাপে 'সহকারী অধ্যাপক'। বঙ্গবন্ধু বিষয়ক একটি সংগঠনও চালান। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ভার আমরা কাদের হাতে দিয়ে রেখেছি, তা এই ভদ্রলোকের মগজের কবর থেকে টের পাওয়া যেতে পারে।
অনেকেই আমাকে আমার বইটির প্রচ্ছদের ব্যাপারে জিগ্যেস করেন। এমন প্রচ্ছদের কারণ কী— তা তারা জানতে চান। আমার মনে হয় তারা এ সহজ বিষয়টি বুঝেও না বুঝার ভান করেন।

একটি মেয়ে, যে এক সপ্তাহ আগেও ফুলের মতো ফুটে ছিলো আমাদের গোবরস্থানে, যার বাঁচার কথা ছিলো আরও অনেক বছর, যার চুলের ঘ্রাণ এখনো মিইয়ে যায় নি ঢাকার বাতাস থেকে, যে একেবারেই বিনা কারণে পৃথিবী থেকে আকাশে চলে গেলো, যে শুধুমাত্র বাংলাদেশে জন্মগ্রহণের কারণে এভাবে অসময়ে বাবা-মা'র বুকে আসমানের তারা হয়ে গেলো, যার কোনো দোষ শয়তানও খুঁজে পায় নি, তার দিকে এরকম একটি কুৎসিত ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য ছুঁড়ে দিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক? 

মেয়েটি যদি একটি ছেলে হতো, তাহলে কি এরকম মলবাগান তিনি ফেসবুকে রচনা করতে পারতেন? মেয়েটি যদি তার নিজের হতো, তাহলে কি এরকম গবাদি চিন্তার উদগীরণ তার মাথায় ঘটতো? যে-মেয়ের বাবা শোকে পাথর হয়ে কারও কাছে বিচার পর্যন্ত চান নি, তার বুকে এরকম একটি কুৎসিত, নিষ্ঠুর, ও পাশবিক ঢিল তিনি ছুঁড়তে পারলেন?

আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাবো— ভদ্রলোককে অতি শীঘ্রই তাদের খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিতে। তিনি আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে পড়ানোর কোনো যোগ্যতা রাখেন না। ছেলেমেয়েদেরও উচিত, ভদ্রলোকের পদের একটি বিহিত করা। এরকম পদাবনত মানুষ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলে, সেটিকে আর বিশ্ববিদ্যালয় বলা যাবে না। যারা ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, তাদের উচিত নিজেদের সম্ভ্রমের স্বার্থে এ ব্যাপারে মুখ খোলা।

জনাব কাজী আনিস, আপনি (১) পদত্যাগ করুন; (২) নিহত মেয়েটির পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

সমালোচনা করে নাজমুল ফাহাদ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, গেরামের চা স্টলের বুদ্ধিজীবী।

রিয়াজ উদ্দিন অন্তর আরেকজন লিখেছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উনি? কাজী আনিস সাহেব পোস্ট দিয়েছে। অনেকটা কাজী তসলিমা নাসরিন টাইপের।

ইফতেখার হৃদয় লিখেছেন, খুন হয়েছে এটাই তো বড় কথা হওয়া উচিত!! এই ধরনের মাথা মোটা টাইপ কথা-বার্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন্নে কয়?

নেস্টর ওলি লিখেছেন, মানুষিকভাবে বিকারগ্রস্ত আপনে।চিকিৎসা করান দ্রুত।

জিএম ইফতেখার ইফতি লিখেছেন,মঞ্চ নাটকে- নাটক মঞ্চস্থ হবার পরে দর্শকদের সেটিকে ব্যাখ্যা করে বোঝানোর কি সুযোগ আছে? আপনি গণযোগাযোগের শিক্ষক!!! দুঃখজনক। আপনি ছাত্রদের পড়ানোর অধিকার রাখেন না!

এবিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান কাজী আনিছুল ইসলাম বলেন, আমি মূলত ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম প্রীতির দারিদ্র‍্যের বিষয়টি ইঙ্গিত করে। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাইড স্টুরি করা, কিন্তু আমি সেটা কোথাও পাইনি। তাই সাংবাদিকদের  উদ্দেশ্য করে পোস্টটি দেওয়া আমার। 

আপনার পোস্টে অনেকে বাজে কমেন্ট করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হয়ত অনেকে বিষয়টিকে পজিটিভলি নিতে পারে নাই। আমার পোস্টটি এভাবে করাটা ঠিক হয় নি। আমি পোস্টটি করি যে প্রীতির বাবার পক্ষ হয়ে  যেন উনার পক্ষে সাপোর্ট আসে। অনেকে হয়ত বিষয়টি ভালভাবে নিতে পারেনি ভাষাগত অপরিপক্কতার কারণে।  তাই আমি পরে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করেছি। 

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, যেহেতু আমি পোস্টটা দেখিনি, তাই এবিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চে রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরিন প্রীতি নিহত হয়।

এসএ/