ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে দুর্নীতি
১৫০ কোটি টাকা ডিপিডিসির পরিচালক মোস্তফার পেটে!
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ১২:৫০ অপরাহ্ন, ১৭ই জুলাই ২০২৪

বদলী-নিয়োগ বানিজ্যে ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে আড়ালে ১৫০ কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন ঢাকা পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফা। সম্প্রতি এই বিষয় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুদকে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সম্পদের পাহাড় থাকার অভিযোগ তোলা হয়। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
দুদক ও প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ সূত্রে বলা হয়, ডিপিডিসির দাপটে নিবাহী পরিচালক মোস্তফা, পরিচালক (অর্থ) দীর্ঘ ৯ বছরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। তিনি টাকা দিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে কখনো হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত এমডি, কখনো হয়েছেন অতিরক্ত পরিচালক (এইচ আর) আবার কখনো হয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক (আইসিটি)। দীর্ঘদিন পরিচালক। এইচ আর এর পর শুন্য থাকা অবস্থায় তিনি পরিচালক (এইচ আর এ অতিরক্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিয়োগ, বদলী, প্রমোশন, সিএসএস ও ঠিকাদারের জনবল নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ১২০ কোটি টাকা। পরিচালক এইচআর এর পদটি শূন্য থাকায় তিনি তার সম্বব্যবহার করেছেন। শূন্য পদটিতে কেউ যাতে আসতে না পারেন তার জন্য তৈরি করা হয় একটি সিন্ডিকেট। ২০২৩ সালে সিকিউরিটি নিয়োগে দুর্নীতির টাকার ভাগভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হলে সাবেক এমডি’র হস্তক্ষেপে তা মিটমাট হয়। তিনি চীফ ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে লাইনম্যানসহ সকলের বদলী ও প্রমোশনের ব্যবস্থা করে থাকেন।
দীর্ঘ এক বছর যাবত একই দপ্তরে কর্মরত থাকায় এবং পরিচালক (এইচআর) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে অসংখ্য নিয়োগ, বদলী, প্রমোশন, সিএসএস ও ঠিকাদারের জনবল নিয়োগে করেছেন ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। যা পাচার করেছেন আমেরিকায়।
এ ছাড়া তিনি বেনামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে আড়ালে ১৫০ কোটি হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলা হয়, গোলাম মোস্তফা এনআরবিসি ব্যাংকে ডিপিডিসির ৪০ কোটি টাকার এফডিআর করে কোটি টাকা সুবিধা নিয়েছেন। বড় ছেলেকে দিয়েছেন ওই ব্যাংকে চাকরি। ছেলের পদন্নতি পেতে ওই ব্যাংকের এমডি কাছে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। পদন্নতি দিতে অনিহা ব্যাংকের এমডির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআরবিসি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার বলেন, ডিপিডিসির টাকা কোটি টাকার সুবিধা নিয়েছেন গোলাম মোস্তাফা। তিনি এখন ছেলে চাকরি দিয়ে পদন্নতির জন্য এমডিকে বিভিন্ন লোক দিয়ে তদবির করেন। এমনকি আবারো এফডিআর করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ব্যাংকের এমডি কোনো ভাবে রাজি হচ্ছে না। এমডি পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন, নিয়মের বাইরে কিছু করা যাবে না।
দুদক সূত্র বলছে, পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন ডিপিডিসির পরিচালকদের গাড়ি ব্যবহার করেন। রাজধানীর বনশ্রীতে তার ৩ টি বাড়ি রয়েছে। তার একটিতে তিনি বসসবা করেন। স্ত্রীর নামে পূর্বাচলে আছে ৫ কাঠার প্লট রয়েছে। যমুনা ফিউচার পার্কে ৫টি দোকান ও তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় বিপুল সম্পত্তি খোঁজ মিলেছে। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্মকর্তা কর্মচারীদের হয়রানী, দীর্ঘ দিন একই পদে থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। তিনি ক্ষমতার অপব্যহার করে অধীনস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বদলী করেন। বদলী পদোন্নতির জন্য টাকা লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপপরিচালক বলেন, ‘অভিযোগ জমা হয়েছে। কমিশন সেটা আমলে নিয়ে প্রাক অনুসন্ধান করছে। প্রাক অনুসন্ধান প্রতিবেদনের আলোকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।’
ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) গোলাম মোস্তাফা মুঠো ফোন কল করে পাওয়া যায়নি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্তার পাওয়া যায়নি।
জেবি/এসবি