হাত-পা বেঁধে কাতুকুতু দিয়ে হত্যা!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


হাত-পা বেঁধে কাতুকুতু দিয়ে হত্যা!

হাসি না এলেও হাসতে হবে! স্বরচিত গল্প শোনানোর জন্য এমন জোরজুলুম ছিল এক কাতুকুতু বুড়োর। হাত-পা বেঁধে ‘কাতুকুতু’ দিয়ে অভিনব এক নির্যাতন-হত্যার গল্প রয়েছে আজ!

জোর করে হাসাতে লম্বাএকটি পালক দিয়ে গায়ে সুড়সু়ড়িও দিতেন সেই সর্বনেশে বুড়ো। তবে সে তো সুকুমার রায়ের কল্পনাতেই মানায়। বাস্তবেও এমন অত্যাচার কখনও হয় নাকি? তবে সত্যিই হয়েছে।

এই অত্যাচার রক্তপাতহীন এক অত্যাচার। শুধু তাই নয়, অত্যাচারের চিহ্ন পর্যন্ত থাকে না দেহে। সুকুমার রায়ের দুনিয়ার বাইরেও নানা দেশেই যুগ যুগ ধরে বন্দিদের উপর অত্যাচারে নির্বিচারে ব্যবহার করা হয়েছে এমন চীনা শাস্তি। জেরার সময় বন্দিদের হাত-পা বেঁধে তাদের উপর কাতুকাতুর অত্যাচার চালানো হতো। তার জেরে মৃত্যুও ঘটেছে বন্দিদের।

শারীরিক হয়রানি কিংবা অপমান করা বা দমিয়ে রাখার জন্যও এককালে অভিজাত ব্যক্তিরা কাতুকুতুর দাওয়াই দিয়েছেন তাদের প্রজাদের মধ্যে। চীনের হান বংশের রাজত্বকালে এই পন্থা নেওয়া হলেও কালে কালে তা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানিসহ অনেক দেশেই।

মার্কিন লেখক ক্যারোলিন হাস্ক লিখেছিলেন যে, কাতুকুতু মোটেও হাসির কোনো বিষয় নয়। অর্থাৎ যথার্থই বলেছেন ক্যারোলিন। অত্যাচার পর্যায়ে পৌঁছে গেলে তখন কাতুকুতু মোটেও হাসিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। জোর করে কাতুকুতু দেওয়া হলে বমি করা কিংবা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়তে পারেন অনেকেই। নাৎসি জার্মানিতে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে কাতুকুতুর অত্যাচারে বন্দিমৃত্যুও ঘটেছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

২০৬ খ্রিস্টপূর্বে চীনের হান সাম্রাজ্যে কাতুকুতুকে হাতিয়ার করে প্রজাদের ওপর অত্যাচার করতেন অভিজাত ব্যক্তিরা। কারণ হলো এই অত্যাচারের চিহ্ন ধরা পড়ে না প্রজাদের দেহে। অপরদিকে, অত্যাচারের পর খুব সহজেই তার প্রভাবমুক্ত হতে পারতেন বন্দিরা।

চীনের গণ্ডি পেরিয়ে এই দাওয়াই কীভাবে অন্য দেশে পৌঁছে গেলো, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার ফায়দা তুলেছিলো নাৎসিরা। সমকামী হওয়ার ‘অপরাধে’ জোসেফ কহোয়াট নামে এক অস্ট্রিয়ানকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি করেন তারা।

জোসেফের দাবি হলো, ফ্লোসেনবার্গের শিবিরে থাকাকালীন তিনি দেখেছিলেন কীভাবে বন্দিদের ওপর কাতুকুতুর অত্যাচার চালাতেন সেখানকার রক্ষীরা। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য মেন উইথ দ্য পিঙ্ক ট্রায়াঙ্গল’-এ জোসেফের কাহিনী তুলে ধরেন হান্স নিউম্যান। হাইঞ্জ হেগার নামে ছদ্মনামে লেখা ওই বইয়েও জোসেফের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা উঠে এসেছে।

ইউরোপের অনেক দেশও এই চীনা দাওয়াই ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে তার খুঁটিনাটি তথ্যও পাওয়া যায়। ইতালিতে জেলবন্দিদের হাত-পা বেঁধে তাদের পায়ে লবণ-পানি মাখিয়ে দিতেন সেখানকার কর্মকর্তারা। তারপর বন্দিদের উল্টো করে শুইয়ে তাদের সামনে ছেড়ে দেওয়া হতো একটি ছাগল।

বন্দিদের পায়ে মাখানো সেই লবণ-পানি ছাগল চেটে খেতে শুরু করলে প্রথমে কাতুকুতুর অনুভূত হতো। তবে ক্রমাগত পা চাটতে থাকায় এক সময় সেই পা শুকিয়ে যেতো। এরপর বন্দিদের পায়ে আবার এক প্রস্থ লবণ-পানি মাখানো হতো। আর তখন অস্বস্তিতে পড়তেন বন্দিরা। বারবার এই পদ্ধতিতে বন্দিদের ওপর অত্যাচার চালানো হতো।

প্রাচীন জাপানেও পৌঁছে যায় চীনের ওই দাওয়াই। ‘শিকেই’ নামে ওই দাওয়াইয়ের অঙ্গ হিসেবে অপরাধীদের নির্দয়ভাবেই কাতুকুতু দেওয়া হতো।

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অঙ্গ হিসেবে এই দাওয়াই ব্যবহার করা হতো কি না, তার প্রমাণ অবশ্য মেলেনি। তবে প্রাচীন ইংল্যান্ডে ও বিংশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাতুকুতুর অত্যাচারের কয়েকটি ঘটনা জানা যায়।

এসএ/