মায়ের সাথে বন্ধুত্ব, ছেলের অশ্লীল ভিডিও ছড়ানোর হুমকি দিয়ে মেয়েক একাধিকবার ধর্ষণ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মায়ের সাথে বন্ধুত্ব, ছেলের অশ্লীল ভিডিও ছড়ানোর হুমকি দিয়ে মেয়েক একাধিকবার ধর্ষণ

কুমিল্লা প্রতিনিধি: মায়ের সাথে বন্ধুত্বের পর ছেলের অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে এ্যাডভোকেট জাহিদ চৌধুরীকে (৪১) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেছেন।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায়। সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে অভিযুক্তকে র‌্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর ৫০১নং বাসার সাততলা থেকে। তিনি ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। এর আগে গত ২ জানুয়ারি র‌্যাব বরাবর দুই সন্তান নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন তাদের মা।

র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লার উপ-পরিচালক, কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩ জানুয়ারি রাতে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীও তার ভাই এবং বুড়িচংয়ের শোভারামের আরো এক নারীকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত আসামির প্রাথমিক স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, নিখোঁজ মেয়ের মায়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো অভিযুক্তের। সেই সুবাদে তিনি ওই ভুক্তভোগীর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তাদের দুই ভাই-বোনকে মামা-ভাগ্নি সম্বোধন করতেন।

এক পর্যায়ে জাহিদ চৌধুরী ভুক্তভোগীকে জানান, তিনি নানান ইউটিউব তারকার ঘনিষ্ঠ এবং অনেক তারকা তৈরি করেছেন। ভুক্তভোগীকে তিনি ইউটিউব তারকা বানিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখান। তারা বিভিন্ন স্থানে শর্টফ্লিম এবং ভিডিও তৈরি করে তার ইউটিউব চ্যানেলের প্রচার করা শুরু করে।

গত বছরের ২৫ নভেম্বর ১১টার সময় জাহিদ স্কুলছাত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় এবং জেলার সদর দক্ষিণ থানাধীন মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায় নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।

এরপর ওই ছাত্রীকে ইউটিউব সেলিব্রেটি, পড়াশোনা করানো, পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে আরো একাধিকবার ধর্ষণ করে।

বিষয়টি ছাত্রী তার মাকে জানালে মা আসামীর সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেন এবং স্কুলছাত্রীকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে তার স্থায়ী ঠিকানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসেন। কিন্তু গোপনে ওই ছাত্রীর সাথে জাহিদের যোগাযোগ চলতে থাকে।

র‍্যাব জানায়, এমন বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে আরও অনেককেই তার জালে জড়িয়েছেন জাহিদ। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর ভাইকে সাথে নিয়ে ওই স্কুলছাত্রী জাহিদের সাথে দেখা করতে গেলে জাহিদ পার্শ্ববর্তী এলাকার এমনই এক নারীকে আনেন। এবং ওই স্কুলছাত্রীর ভাইয়ের সাথে একটি রুমে আবদ্ধ করে তাদের ভিডিও ধারণ করেন। এরপর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে স্কুলছাত্রীকে আবারো ধর্ষণ করেন।

র‌্যাব ১১, কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

অভিযুক্ত জাহিদ একজন বিবাহিত ব্যক্তি এবং তার দুইটি সন্তান রয়েছে। সে তার পরিবার নিয়ে কুমিল্লার কোতয়ালি থানার দৌলতপুর রেলগেট এলাকায় বসবাস করে।

এ বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ (১) ধারায় র‌্যাবের সহযোগিতায় স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।