তৃতীয় হত্যা মামলা
হেলিকপ্টার থেকে গুলি, শেখ হাসিনার নামে শিশু হত্যা মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৯ অপরাহ্ন, ১৫ই আগস্ট ২০২৪
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দারুন্নাজাত ইসলামিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র যোবায়িত হোসেন ইমন (১২) র্যাবের সাজোয়া হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রট রাজেশ চৌধুরির আদালতে এ মামলা করেন নিহত ইমনের মামা আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ ভুইয়া এ মামলা করেন।আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানাকে এজহার হিসাবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার ও পল্লীউন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাম মহিউদ্দিন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহা পরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) ড. খ মহিউদ্দিন, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন আর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এবং হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাতনামা সদস্যগণ।
আরও পড়ুন: টুকু, পলক ও সৈকতকে ১০ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে আসামীদের নির্দেশে র্যাব সদস্যরা আকাশ থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এসময় ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমনের (১২) বাম কানের উপর দিয়ে গুলি প্রবেশ করে ডান কানের নীচ দিয়ে চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। গুলির আঘাতে ঘটনাস্থলেই ভিকটিম জোবাইদ হোসেন ইমন মাটিতে পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন, মামলার বাদী ও অন্যান্য সাক্ষীগণ তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ধানমণ্ডিস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু জোবাইদ হোসেন ইমনকে মৃত ঘোষণা করে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামীগণ শেখ হাসিনার অবৈধ স্বৈরশাসনকে নিরঙ্কুশ ও দীর্ঘয়ীত করার প্রয়াসে পরস্পরের সাথে পরামর্শক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে নির্মূল ও হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনার সর্বময় কর্তত্ব ও নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীগণ তাদের অধস্তন পুলিশ, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সহ অন্যন্য বাহিনীকে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের সংঘটনের মাধ্যমে আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র- জনতাকে নির্মূল করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সেই আলোকে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যগণ নীল নকশা বাস্তবায়নের নিমিত্তে পৈশাচিক হত্যাকান্ড শুরু করে। এতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য ছাত্র, শিশু, সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষকে হত্যা ও আহত করে।
এছাড়াও বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাঁদে অবস্থান নিয়ে আসামীগণের অনুগত বাহিনীর সদস্যরা স্নাইপার রাইফেলের মাধ্যমে দূর থেকে গুলি করে অনেক ছাত্র এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। আসামীগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপরে ভূমি থেকে, উঁচু ভবনের ছাঁদ থেকে এবং আকাশ পথে উন্নত মারণাস্ত্রের মাধ্যমে অবিরাম গুলি বর্ষনের মাধ্যমে নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালিয়ে অজস্র মানুষকে খুন ও আহত করা হয়। হত্যাকারী বাহিনীগুলো খুন এবং আহত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং আহতদের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালসমূহে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বাধা দেয় এবং হাসপাতালে ডাক্তারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
এছাড়াও আসামীদের নির্দেশে হত্যাকারী বাহিনীগুলো হাসপাতালগুলোতে ঢুকে নিহতদের অনেকের মৃতদেহ জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলে। ফলে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। অনেক মৃতদেহকে পুলিশ জোরপূর্বক নিয়ে কোন রকম পোস্টমর্টেম ছাড়াই অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ হিসেবে বিভিন্ন কবরস্থানে গোপনে দাফন করে হত্যাকান্ডের প্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। একইভাবে তারা আমার ভাগ্নে জোবাইদ হোসেন ইমন এর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করে।
আরও পড়ুন: গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনা-আসাদুজ্জামানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্র হত্যা মামলা:
রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ঢাকা মডেল ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজন (১৮) গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে গত বুধবার (১৪ আগস্ট)
মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মইনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক ঢাকা উত্তরের আওয়ামীলিগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি গাজি মেজবাউল হক সাচ্ছু, সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহম্মেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মানুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহা পরিচালক হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন আর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, স্থানীয় আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ নেতা সালামত উল্লাহ সাগর, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সদস্য দীপংকর বাছার দিপ্ত ছাড়াও আওয়ামীলীগের আরো ৫০০-৬০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে আদালতের নির্দেশ
মুদি দোকানী হত্যা মামলা:
এর আগে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মুদি দোকানদার আবু সায়েদকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এস এম আমীর হামজা নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে গত ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুর থানাধীন বছিলায় ৪০ ফিট চৌরাস্তায় আবু সায়েদ নিহত হন।
গুম ও অপহরনের মামলা:
এছাড়াও গুম ও অপহরনের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা থেকে এক আইনজীবীকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। আদালতে মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা-পশ্চিম থানাকে এজহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন-সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। এছাড়া র্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।