গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনা-আসাদুজ্জামানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:৩৬ অপরাহ্ন, ১৪ই আগস্ট ২০২৪


গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনা-আসাদুজ্জামানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ফাইল ছবি

২০১৫ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে এক আইনজীবীকে অপহরণের মাধ্যমে গুম করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনটি এজাহার হিসাবে রেকর্ড করার জন্য উত্তরা পশ্চিম থানাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 


বুধবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালত এ আদেশ দেন। মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ দেন।


মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক র‍্যাব ডিজি বেনজির আহমেদ। এছাড়া  র‍্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যেকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।


মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়,গত ২০১২ সাল হতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকায় নিয়মিত আইন পেশায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় ২০১৫ সালের ১০ফ্রেবুয়ারি ব্যক্তিগত কাজে বাদীর বন্ধু মোঃ আশরাফুল ইসলাম রিংকুর সাথে মোটরসাইকেল যোগে উত্তরার ৫নং সেক্টেরের ০১নং রোডে স্মাইল গ্যাল্যারীর এর সামনে অবস্থানকালে একজন হাতে স্মার্টডিভাইস বহনকারী ব্যক্তি বাদীকে সালাম দিয়ে বাদীর নাম "এডভোকেট মোঃ সোহেল রানা" কিনা জিজ্ঞাসা করে। বাদী হ্যা সূচক উত্তর প্রদান করার সময়ে একটি ছাই কালারের হাইএস গাড়ী বাদীর সম্মুখে এসে দাড়ায় এবং উক্ত সময়ে স্মার্ট ডিভাইস বহনকারী ব্যক্তি বাদীকে বলে বাদীর সাথে জরুরী কথা আছে গাড়িতে উঠুন।


এরপর বাদী এবং বাদীর বন্ধুকেগাড়িতে তোলার সাথে সাথে উক্ত বন্ধুকধারী ব্যক্তিরা বাদী ও বাদীর বন্ধুর চোখ শক্ত করে বেধে পিছমোরা করে হাতে হাতকরা পড়িয়ে বাদীর সঙ্গে থাকা মোবাইলসহ সীম ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয় এবং বাদীর পরিধেয় কোমরের বেল্ট এবং প্যান্ট খোলে বাদীর পুরুষাঙ্গে ক্লিপ জাতীয় কিছু লাগিয়ে কারেন্টের শক দিতে থাকে এবং বাদীর আত্মচিৎকার যেন বাইরে থেকে শোনা না যায় সে জন্য গাড়িতে উচ্চ ভলিয়মে ডিজে টাইপের গান চালিয়ে রাখে।


আরও পড়ুন: শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৪ বিচারপতি


মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, মামলার বাদীকে ওদরে মধ্যে একজন প্রশ্ন করে "বড় নেতা হয়ে গেছিস" 'আমি রাজনীতি করি কেনো?" এবং উত্তরে বাদী যাই বলে না কেন, প্রত্যেকবারই কারেন্টের শট দিতে থাকে। একপর্যায়ে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে গাড়ির গতি খানিক কমিয়ে বাদীর বন্ধুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং বলে পিছনে তাকাইলে বাদীর বন্ধুকে গুলি করিয়া মেরে ফেলবে। ঘন্টা খানেক গাড়িতে নির্যাতন চালানো অবস্থায় বাদী বুঝতে পারে হাইএস গাড়িটি বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়াঘোরির পর কোন একটা বিল্ডিং এর আন্ডার গ্রাউন্ডে প্রবেশ করেছে এবং বাদীকে চোখ বাধা অবস্থায়ই গাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে নামানো হয়।


মামলার অভিযোগে বলা হয়,চরিত্রহীণ মহিলার দল করছ আর তোরা সরকার উৎখাত করবি" এই বলে সেই আগের মতনই বাদীকে উত্তর প্রদানের সাথে সাথেই আরো উচ্চ মাত্রার বৈদ্যুতিক শক বাদীর পুরুষাঙ্গে এবং কানের লতিতে লাগানো ক্লিপের মাধ্যমে দেওয়া শুরু করে। তারও ঘন্টা-দুই পর একজন ব্যক্তির নির্দেশে অন্য আরো তিন থেকে চারজন ব্যক্তি বাদীর দুই হাত রশির সাহায্যে বেধে উপরের দিকে ঝুলিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত লাঠি অথবা শক্ত কোন বস্তু ধারা বারংবার আঘাত করিতে থাকিলে বাদী সাময়িক সময়ের জন্য অজ্ঞান হইয়া পড়ে। যখন জ্ঞান ফিরে তখন বাদী বুঝিতে পারে তখনও বাদীর চোখ বাধা এবং হাত পিছমোরা করে হাতে হাতকরা লাগানো অবস্থায় বাদী মেঝের উপর পড়ে আছে।


আরও পড়ুন: পদত্যাগ করলেন আপিল বিভাগের ২ বিচারপতি


বাদী ঐ অবস্থায় ফুটন্ত গরম পানির আওয়াজ শুনিতে পাচ্ছিল এবং একজন ব্যক্তি অন্য একজন ব্যক্তিকে বলিতেছে যে, যদি বাদী কোন উত্তর সঠিকভাবে প্রদান না কওে তাহলে বাদীর পায়ুপথে যেন গরম পাথর প্রবেশ করানো হয়। এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তি বাদীকে বারংবার জিজ্ঞাসা করে "আমার নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে আগুন দেয়া হয়েছে কি না?" এরপর ঐ ব্যক্তি বাদীর ফেইসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয় এবং পুনরায় বাদীকে পূর্বের ন্যায় কারেন্টের শক প্রদান করিতে থাকে এবং বলিতে থাকে তোকে মেরে ফেলার নির্দেশ আছে। বাদী আর সহ্য করিতে না পারিয়া পুনরায় অজ্ঞান হইয়া পড়ে এবং যখন জ্ঞান ফিরে তখন তৃতীয় বারের মত বাদীকে একজন ব্যক্তি বাদীর পরিবারের কেউ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কিনা, সামরিক বাহিনীতে কোন আত্মীয়-স্বজন কর্মরত আছেন কিনা জিজ্ঞাসা করিয়া চলে যায়।


মামলার অভিযোগে বলা হয়,বিনা বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এবং বাদী নিজেই উক্ত নিপীড়ণের শিকার। উক্ত বিষয়ে সরকার প্রধানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগনের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকায় বিগত সরকারের আমলে মামলা দায়েরে বাদীর প্রাণ নাশের হুমকি থাকায় মামলা দায়ের করতে পারেন নাই বিধায় এই মামলা দায়ের করিতে বিলম্ব হল।গত ১২ আগস্ট উত্তরা পশ্চিম থানায় এজাহার দায়ের করিতে গেলে কর্তব্যরত অফিসার-ইনচার্জ  আদালতে মামলা দায়ের করতে বলয় আসামীদের দন্ডবিধি ১৮৬০ এর দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৪৪/৩৬৪/৩৬৮/৩৪/১০৯ ধারার অপরাধ আমলে গ্রহণ করিয়া নিয়া আসামীর প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুসহ সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করিয়া ন্যায় বিচার করিতে হুজুর আদালতের সদয় মর্জি হয়।


জেবি/এসবি