বেড়িবাঁদ নিয়ে কুতুবদিয়া উপকূলের দুঃখ !


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:১৪ অপরাহ্ন, ১৭ই আগস্ট ২০২৪


বেড়িবাঁদ নিয়ে কুতুবদিয়া উপকূলের দুঃখ !
ছবি: প্রতিনিধি

“জলে ভাসা পদ্ম আমি,শুধুই পেলাম ছলনা” উপকূলের মানুষ ঠিক তেমনটাই প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বানের জলে ভেসেছে,চোখের জলে ভেসেছে, আর শিকার হচ্ছে ছলনার। দূর্যোগ পরবর্তী সাময়িক ত্রাণসামগ্রী পেলেও হয়নি স্থায়ী কোন সমাধান। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সিডর, আইলা, ফনী, আম্ফান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসে বিপর্যস্ত উপকূলবাসী। 


বিগত বছর গুলোর তুলনায় বেড়েছে সমুদ্রের উচ্চতা। মৌসুমী বর্ষায়, এমনকি জোয়ার বাটায়ও নিয়মিত প্লাবিত হচ্ছে। দূর্যোগপূর্ণ পরিবেশে বেড়িবাঁধই উপকূলের একমাত্র রক্ষাকবচ। অথচ ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ জোড়াতালি দিয়ে এতদিন চলে আসলেও বর্তমান পরিস্থিতি আশংকাজনক। শক্তিশালী বেড়িবাঁধের অভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকে সব মৌসুমেই, বর্ষায় পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করে।

 

আরও পড়ুন: কুতুবদিয়া-মগনামা ঘাট পারাপারের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবোর অধীনে উপকূলের সুরক্ষাবাঁধগুলো। সময়ের পরিক্রমায় যা দুর্বল এবং নিচু হয়ে গেছে। ইঁদুরের গর্তেও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামত সংস্কারে পাউবো কতৃপক্ষের কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার ৭১ পোল্ডারের ৪০কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য বিগত ২০বছরে প্রায়ই ২০০কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কোন কাজে আসেনি। বরং দলীয় লোকজন ঠিকাদার সেজে প্রকল্পের টাকা নয়ছয় ঘটিয়ে হরিলুট করেছে। হয়েছে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয়। 


বিগত অর্থ বছর গুলোতে যতবারই বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে দূর্নীতির মাধ্যমে কোনক্রমে তৈরী করে দূর্বল বাঁধ। ফলে জলোচ্ছ্বাসের সময় পানির চাপে বাঁধ ভেঙে যায়। দূর্যোগকালীন কুতুবদিয়া উপকূলের তাবালেরচর, বায়ুবিদ্যুৎ এলাকা, কাহারপাড়া, আনিচের ডেইল, উত্তর বড়ঘোপ, বিন্দাপাড়া, বাতিঘর এলাকা, কায়ছার বাপের পাড়া, চরধুরুং, পেয়ারাকাটা, ছিদ্দিক হাজির পাড়া, মলমচর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারে   প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ারও সুযোগ থাকে না। তলিয়ে যায় বসতভিটা, ফসলি জমি, শাক-সবজির খেত। বানের পানিতে ভেসে যায় মাছের ঘের। মাছ চাষের পুকুর। 


আরও পড়ুন: কুতুবদিয়ায় পুকুরে ডুবে সহোদর ভাই-বোনের মৃত্যু


মানুষের পাশাপাশি দূর্ভোগ নেমে আসে গবাদি পশুর। ভাঙনের কবলে চোখের সামনে বিলীন হয় শেষ সম্বলটুকু। হাহাকার ছড়িয়ে পরে দিশেহারা অবহেলিত পানিবন্দি লোকালয়ে। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। শেষ মুহুর্তে পাউবো কতৃপক্ষের জরুরীভিত্তিতে জোয়ার ঠেকাতে বাঁধের উপর জিও ব্যাগ, সিনথেটিক ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও দুঃখ লাঘব অসম্ভব। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের লবনাক্ত পানি প্রবেশে তৈরী হয় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। প্লাবিত এলাকায় দেখা দেয় সুপেয় পানির অভাব। এসময় উপকূলের শিক্ষার্থীদের  লেখাপড়ায় ব্যাঘাট ঘটে। মাটি হারায় তার উর্বরতা শক্তি। ছোটখাট গাছ মারা পরে অতিরিক্ত লবনাক্ততায়। খানাখন্দে ভরে উঠে পুরো জনপদ। যাদের মোটমুটি অর্থ বিত্ত হয় তারা হয়তো অন্য এলাকায় সরে পরে। বাধ্য হয়ে নিজ ভিটার পানিবন্দি ভোগান্তিকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয় গরিব অসহায় লোকজন।


পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় শুস্ক মৌসুমে বাজেট পাশ না হওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত সবচেয়ে বড় বাধা। পাশ হলেও দলীয় টেন্ডারবাজির কারণে অনেক সময় বিরম্বিত হয়। ঠিকাদারেরা কাজ না করে দূর্যোগের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন এ রকম অভিযোগ আছে কুতুবদিয়া উপকূলের মানুষের। বিগত দিনে দেখা গেছে নিজেদের জীবন জীবিকা রক্ষায় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে কিন্তু বিল তুলে নেয় কতৃপক্ষ ও ঠিকাদাররা।


উপকূলবাসীর দূর্দশা ঠেকাতে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সময়ের দাবি। পতেঙ্গার আদলে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হউক কুতুবদিয়া উপকূলের ৪০কিলোমিটার বেড়িবাঁধ । বাঁধের দুই পাশে বনায়ন এবং বাঁধের ১০০মিটারের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে কোন ধরণের ঘরবাড়ি ও স্থাপনা তৈরী করা। নিয়মিত মেরামত সংস্কারে তহবিল গঠনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত এবং মনিটরিং অবহেলিত মানুষের থেকে দায়মুক্তির একমাত্র পথ।


আরও পড়ুন: কাল রাতেই কুতুবদিয়ায় ভিড়ছে এমভি আব্দুল্লাহ


দূর্নীতির পাগলা ঘোড়া লাগামহীন ছুটেছে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উপকূল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। বর্তমানে বাঁধ ভাঙনের ফলে ছেড়ে দিতে হচ্ছে পূর্বপুরুষের কবরের জায়গাটুকুও। এই পাগলা ঘোড়া লাগাম টানবে কে?  লাগাম যদি টানা না যায় বানবাসিরা কেন সরকারকে টেক্স দিবে ! তাদের ট্যাক্সের টাকা অপব্যহার হচ্ছে না তো ! নিরুপায় দ্বীপের মানুষগুলো কোথায় যাবে ! 


এছাড়াও কুতুবদিয়া দ্বীপ রক্ষা করলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ উপকূল আনোয়ারা,বাঁশখালী, পেকুয়া, মাতারবাড়ি, মহেশখালী উপজেলা রক্ষা পাবে। এসব উপকূলের সীমানা প্রাচীর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে কুতুবদিয়া দ্বীপ। এ দ্বীপকে যদি সুরক্ষা করা না যায় থাকলে দক্ষিণ পূর্ব উপকূলের পাঁচটি উপজেলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।


এসডি/