ইউক্রেন যুদ্ধে দ্বিধা বিভক্ত বিশ্ব


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ইউক্রেন যুদ্ধে দ্বিধা বিভক্ত বিশ্ব

গত শতাব্দী থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি হলো স্বচ্ছ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক মুক্তি, যুদ্ধ না বাধানো ও পারস্পরিক আর্থসামাজিক সম্পর্কের বিকাশ। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি সার্বভৌম রাষ্ট্র কায়েম হলেও বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো ছাড়া সর্বত্র বা খোদ রাশিয়াতেই স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের বা ব্যক্তিস্বাধীনতার চর্চা গড়ে ওঠেনি। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনে রাশিয়া যে যুদ্ধ চালাচ্ছে, তার মধ্যে ক্রেমলিনের ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা দেশটির জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার সাত হাজারের বেশি বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্পী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ, সুশীল সমাজ ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনের ওপর আক্রমণের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন।নিজেরা যুদ্ধে নামবে না জেনেও, আটলান্টিকের অপর পাড় থেকে মার্কিনরা ন্যাটো জোট সম্প্রসারণের নামে ইউরোপের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলছে। ইউরোপে ন্যাটো জোটের শক্তিশালী শরিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মার্কিনরা একরকম জোর করেই তাদের সামরিকায়ন নীতি বজায় রেখেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তরে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিয়ে আরও অস্ত্র রপ্তানি বাণিজ্য মার্কিনদের পুরোনো কৌশল। রাশিয়া আক্রমণ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এই শরণার্থীর ঢলে এবার কেবলই নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা নিজ মহাদেশে ইউরোপের মানুষ বহুদিন এমন যুদ্ধ দেখেনি। এখন প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা আর টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে আসছে যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদ, হতাহত মানুষ কিংবা লাখ লাখ শরণার্থীর প্রাণ বাঁচানোর আকুতির ছবি। এর মধ্যে ইউরোপের অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপজুড়ে একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এই মুহূর্তে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপজুড়ে একটা ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। ন্যাটো জোট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা রাশিয়া ও তাকে সমর্থনকারীরা এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী কেউ শেষ পর্যন্ত এই মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে পারেনি। এই সময়ের মধ্যে ইউরোপের অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ-আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতে মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৮০ বছর পর ইউরোপীয় দেশগুলোর ‘যুদ্ধ নয় শান্তি ও সংহতি’র হিসাব আচমকাই পাল্টে গেছে। নিজ মহাদেশে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় থাকলেও এ দেশগুলো দূর দেশে অস্ত্রের জোগান দিয়েছে বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধপ্রিয় দেশ মার্কিনদের সঙ্গে যুদ্ধে শরিক হয়েছে। তবে মার্কিন-নির্ভরতা কমাতে এবং ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকাতে জার্মানি ও ফ্রান্স বেশ কিছুদিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের চোখে ভালো ঠেকছিল না। এর মধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ ইউরোপীয় নেতাদের ভবিষ্যতের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এতে করে ইউরোপীয় দেশগুলোর মার্কিন-নির্ভরশীলতা আবারও বেড়ে গেল। ১৮ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রসারিত করতে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো অর্থ সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ব রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পাশাপাশি জেলেনস্কি সরকারকে মানবিক ও সামরিক সহায়তা তারা দিচ্ছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধাপরাধ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইউক্রেনে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। ইউক্রেনের জনগণের বীরত্ব ও সংহতি ইউরোপ ও বিশ্বের বেশির ভাগ অংশের মানুষের সম্মিলিত চেতনাকে আলোড়িত করছে। ফলে পুতিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অপরাধের বিচারের দাবি জোরালো হচ্ছে।এই দাবি বৈশ্বিক। 

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং পশ্চিমের অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়াকে শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী যুগের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হিসেবে দেখা যেতে পারে। এ যুদ্ধ এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যা নতুন একটি বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মঞ্চ তৈরি করে ফেলছে। যে কেউ এ নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে এভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন: শক্তিধরেরা যা ইচ্ছা তা-ই করতে থাকবে এবং দুর্বলদের তার ফল ভোগ করতে হবে।এটা সত্য যে সারা বিশ্বের নেতা ও পর্যবেক্ষকেরা প্রায়ই ‘আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’কে শক্তিশালী বা রক্ষা করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু সে ব্যবস্থা সব সময়ই বাস্তব অবস্থার তুলনায় অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী চাওয়া ছিল।বাস্তবতা হলো, যে দেশগুলো সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তির অধিকারী, তারা এ নিয়মগুলো কেবল তৈরি ও প্রয়োগ করার অধিকার সংরক্ষণই করে না, সেগুলো তাদের মর্জিমতো ভঙ্গ করারও অধিকার রাখে।যাঁরা নিয়ম বানান, তাঁরাই যখন নিয়ম ভঙ্গ করেন, তখনই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি দেখা দেয়। শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পরাশক্তিগুলোর প্রথম সংঘাত একে অপরের বিরুদ্ধে শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামিয়ে সে অবস্থা তৈরি করেছে। শক্তিধর দেশগুলো তাদেরই বানানো আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। ইউক্রেনের ওপর নৃশংস প্রথাগত সামরিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বাস করেন, ইউক্রেন তাঁর দেশেরই অংশ এবং দেশটিকে ক্রেমলিনের আওতায় ফিরিয়ে আনার অধিকার রাশিয়ার রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক হাইব্রিড যুদ্ধ চালাচ্ছে।যুদ্ধে ইউক্রেনের বাহিনীকে পশ্চিমারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাই ১৩৫ কোটি ডলারের প্রাণঘাতী অস্ত্র ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন। ইউক্রেনে এসব অস্ত্রের কিছু চালান গেছে। কিছু যেতে বাকি রয়েছে। 

এসব প্রেক্ষাপটে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। তারা কার্যত পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আর্থিক ব্যবস্থা থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করেছে এবং অনেক ধনী রাশিয়ানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। পশ্চিমারা একটি আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের চেষ্টা করেছে। অনেক দেশ এখন রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করেছে।
এটি সম্ভবত বিশ্ব অর্থনীতির বিস্তৃত বিভাজনের সূচনা। বাস্তবতা হলো অর্থনৈতিক শক্তি পূর্ব দিকে সরে গেছে, কিন্তু পশ্চিম এখনো বিশ্বের আর্থিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ এবং নেতৃস্থানীয় ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। ডলার ভিত্তিক অর্থব্যবস্থার প্রতিপক্ষ হিসেবে চীনা মুদ্রাভিত্তিক উদীয়মান অর্থব্যবস্থা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এতে সমান্তরালে চলা দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা আসন্ন বলে মনে হচ্ছে।একটি আইনকানুন ব্যবস্থার পক্ষে অহোরাত্র সাফাই গাওয়া বৈশ্বিক নিয়ম-নির্মাতারা কোনো রকম দ্বিধা না করেই একতরফাভাবে একেবারে উল্টো অবস্থায় চলে গেছে।বিশ্ব এখন পাহাড়সমান ঝুঁকির মুখে পড়েছে। দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং ব্যাপক দুর্নীতির দীর্ঘ ইতিহাসসংবলিত দেশ ইউক্রেনে পশ্চিমারা বানের পানির মতো অস্ত্র পাঠাচ্ছে। এ অস্ত্র অবশেষে পশ্চিম দিকেই ফের প্রবাহিত হতে পারে, যা ইউরোপজুড়ে অপরাধ, মাদক পাচার ও সন্ত্রাস-সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে। ওই লৌহপর্দার পুনরুজ্জীবন সামরিকভাবে শক্তিশালী ও নব্য সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার উত্থানকে ত্বরান্বিত করতে পারে পুতিন ইতিমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে একটি ট্র্যাজেডি ও ঐতিহাসিক রাশিয়ার সমাপ্তি বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং রাশিয়ার বিগত গৌরব ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

অর্থাৎ ইউক্রেন ও কাজাখস্তানকে তিনি রাশিয়ার অংশ হিসেবেই মনে করেন বলে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন।আর এ যুদ্ধে শুধু রাশিয়াই যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে তা নয়, ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক দশকের বৃহত্তর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাকে।এ কথা অবশ্যই ঠিক, দেশগুলো একে অন্যকে আক্রমণ করার পরিবর্তে সারা জীবন বাণিজ্যই করে যাবে-এ ধারণা কখনোই বাস্তবসম্মত নয়। পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরতা যে আগ্রাসনের অভিলাষ থেকে একেকটি দেশকে একেবারে দূরে সরিয়ে রাখে তা নয়, যেমন চীন পারস্পরিক অর্থনৈতিক নির্ভরতার ব্যবস্থায় সংযুক্ত থেকেও দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগর থেকে হিমালয় পর্যন্ত নিরলসভাবে সম্প্রসারণবাদে জড়িত হয়ে পড়েছে। এথিকে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ। হাঙ্গেরিতে ২ লাখ, স্লোভাকিয়ায় প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার এবং আরও কয়েক লাখ মানুষ রোমানিয়া ও মলদোভাতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব দেশ থেকে পরবর্তী সময়ে এই সব ইউক্রেনীয় শরণার্থী জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে বা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রায় প্রতিদিন জার্মানিতে প্রায় ১০ হাজার শরণার্থী প্রবেশ করছে।ইইউ দেশগুলো ৪ মার্চ ইউক্রেনের শরণার্থীদের গ্রহণ করার বিষয়ে দ্রুত নতুন সিদ্ধান্ত জারি করেছে। সিদ্ধান্তে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শরণার্থীরা ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে। আগত এই শরণার্থীরা আপাতত এক বছর থাকার নিশ্চয়তাসহ বাসস্থান, ভাতা, চিকিৎসা, চাকরি ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। ভৌগোলিকভাবে ইউক্রেন ইইউ দেশগুলোর কাছে হওয়াই, সেখান থেকে আসা শরণার্থীদের গ্রহণ করার সিদ্ধান্তটি অবশ্যই মানবিক। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীদের বিষয়ে ইইউ দেশগুলো এমন মানবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে অনৈক্য ও অনীহা দেখা যায়, তা লজ্জাজনক।

কিন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ইউরোপের মাটিতে ন্যাটো সামরিক জোট বিস্তারের হোতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের গ্রহণ করার বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। অনেকেই মার্কিন ও ন্যাটো জোটের আগ্রাসী আধিপত্য বিস্তারের অযৌক্তিক যুক্তিকে এই যুদ্ধের জন্য দায়ী করছেন বা রাশিয়া একরকম বাধ্য হয়েই যুদ্ধে নেমেছে বলে বলছেন। অপর পক্ষ বলছে, কোনো সার্বভৌম দেশ কোনো জোটে যোগ দেবে বা না দেবে, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার আগ্রাসী হয়ে ইউক্রেনে ওপর হামলার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পেছনে যে কৌশলই থাকুক না কেন, যুদ্ধপীড়িত মানুষের কথা ভাবলে ইউক্রেনের যুদ্ধ বা বিশ্বের অন্য যুদ্ধগুলোর ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ বা যুদ্ধকে বৈধতা দেওয়ার অর্থ মানুষের গভীর মানবিক দিকটাকে অবহেলা করা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউরোপের নানা শহরে লাখ মানুষ যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এই যুদ্ধ আবার আতঙ্কিত করেছে ইউরোপীয় জনপদের মানুষদের।কিন্তু অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরতা আইনকানুন-নির্মাতাদের কিছুটা সংযমী হতে বাধ্য করে। যেমন রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও ইউরোপ রাশিয়ার অর্থনীতির মূল ভিত্তি তেল ও গ্যাস রপ্তানিকে সচল রাখতে বাধ্য হচ্ছে। যেহেতু রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দিলে জ্বালানির দাম বহুগুণ বেড়ে যাবে এবং তার আঁচ পশ্চিমাদের গায়েই বেশি পড়বে, সে জন্য রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি একেবারে বন্ধ হয়নি। অর্থাৎ রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপের দীর্ঘকালের নির্ভরতা অন্তত উভয় পক্ষকে কিছুটা হলেও পরস্পরের