বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে গবাদিপশুর পাশে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:১৮ অপরাহ্ন, ৩১শে আগস্ট ২০২৪
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ফেনী ও মৌলভীবাজার জেলার গবাদিপশুর জন্য ত্রাণ হিসেবে প্রায় ৬ টন পশুখাদ্য, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩১ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী রাকিব রনি।
রাকিব বলেন, 'গত ২৮ আগস্ট রাতে কিছু শিক্ষার্থী ৩ টন পশুখাদ্য নিয়ে ফেনী জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলায় এবং ৩০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল আড়াই টন পশুখাদ্য নিয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় গিয়েছে। বাকি আধা টন পশুখাদ্য দেশের অন্যান্য বন্যা কবলিত অঞ্চলে দেয়া হবে।'
আরও পড়ুন: প্রশাসক শূন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, স্থবির সকল কার্যক্রম
জরুরী ভিত্তিতে বন্যা কবলিত এলাকায় চারটি সেবা দিবেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা। ১. অসুস্থ প্রাণিগুলোকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া, ২. যেসব প্রাণির ডায়রিয়া, ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি, পুষ্টি সমস্যা তাদের রুচিবর্ধক এবং ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লাই দেয়া ৩. পশুখাদ্য সরবরাহ করা এবং ৪. পরবর্তীতে খামারিদের কোনো সমস্যা হলে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া।
ত্রাণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে রনি বলেন, 'সংগৃহীত পশুখাদ্যের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা সিপি বাংলাদেশ। এছাড়া ইনোভা, মিনার এগ্রো এবং লোকাল কিছু পেট কোম্পানি পশুখাদ্য পাঠিয়েছে। এছাড়া স্কয়ার, একমি, এসিআই, এসকেএফ এবং বায়োল্যাব ঔষধের যোগান দিয়েছে।'
টেলিমেডিসিন সেবা সম্পর্কে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থী মাশশারাত মালিহা বলেন, 'গবাদিপশুগুলো অনেকদিন না খেয়ে থাকায় তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা দেয়া হবে। ওইসব অঞ্চলের খামারিদের ভেটেরিনারিয়ানদের নাম্বার দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে গবাদি পশুগুলো যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় তবে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে খামারিরা আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবে।'
ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক বলেন, 'দেশের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে এবং সেখানে মানুষের পাশাপাশি তাদের গবাদিপশুগুলোও বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রচুর পোলট্রি ফার্ম, এ্যানিমেল ফার্ম ধ্বংস হয়েছে। এর জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এবং পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন 'এ্যানিমেল স্যাভিয়ার্স অব বাউ' তাদের তত্ত্বাবধানে দুর্গত এলাকার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করে এবং তারা জানতে পারে তাদেরও সাহায্য দরকার। তাই আমরা বিভিন্ন ফিড কোম্পানি ও ঔষধ কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে ছয় টন পশুখাদ্য ও ঔষধ সংগ্রহ করেছি ।'
আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ প্রধান সমন্বয়ক নাজমুলের বিরুদ্ধে
ফেনীতে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ফেনীর অন্যতম তিনটি বন্যা দুর্গত এলাকা ফুলগাজী, পশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রায় ৯০০ খামারীদের মাঝে পশুখাদ্য, ঔষধ এবং কয়েকটি খামার পরিদর্শন ও বিভিন্ন টেকনিক্যাল পরামর্শ প্রদান করা হয়। উক্ত এলাকাগুলোর বেশিরভাগ জায়গায় মানুষের খাদ্যের অপর্যাপ্ততা না থাকলেও, পশুখাদ্যের অপর্যাপ্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপস্থিত খামারিগণ ও ফেনীর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
বাকৃবির এই টিমটির আগে কেউ এত বড় পরিসরে পশুখাদ্য দিয়ে খামারিদের সাহায্য করেনি বলেও জানান উপস্থিত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও খামারিরা।
দেশের কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ কৃষি বিদ্যাপীঠ খ্যাত বাকৃবির শিক্ষার্থীরা কেবল মানুষ নয় প্রাণীদের পাশেও দাঁড়ানোর জন্য এই ভিন্নধর্মী আয়োজন করেছে বলে জানান বাকৃবির শিক্ষার্থীরা।
এমএল/