রাবিতে ❝আগামীর বাংলাদেশে: তারুণ্যের ভাবনা❞ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, ৩১শে আগস্ট ২০২৪


রাবিতে ❝আগামীর বাংলাদেশে: তারুণ্যের ভাবনা❞ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
ছবি: প্রতিনিধি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃক ❝আগামীর বাংলাদেশে: তারুণ্যের ভাবনা❞ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। 


শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকাল ৪টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় সেমিনারের মধ্যমণি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও আইনজীবী মাঞ্জুর আল মতিন ও বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের অন্যতম সদস্য সারা আহমেদ সাবন্তি।


মাঞ্জুর আল মতিন বলেন, আমরা দেখেছি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যম ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রুখে দাঁড়িয়েছে। এই লড়াই যেমন ঢাকার, তেমনি এটা গোটা বাংলাদেশেরও। এটা ভুলে গেলে চলবে না। রাজশাহীতে মানুষ জীবন দিয়েছে, রংপুরে আবু সাঈদ জীবন দিয়েছে। ঢাকায় আমার ছোটো ভাই ফারহানসহ অনেকে জীবন দিয়েছে। শুধু ঢাকা নিয়ে থাকলে এই বিপ্লব সম্ভব হতো না। 


আরও পড়ুন: শুধু ঢাকা নিয়ে থাকলে আমাদের বিপ্লব সম্ভব হতো না: মাঞ্জুর আল মতীন


তিনি বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় বসেছেন, তাদের বুঝতে হবে, শুধু কেন্দ্রে বসে শাসন করলে চলবে না। আপনাদের রাজশাহীতে আসতে হবে। আপনাদের শুনতে হবে এদেশের প্রান্তিক মানুষের কথা। অটোচালক-রিকশাচালকদের কথাও শুনতে হবে। সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। আমার বাড়ির কাছে দেখেছি যখন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে গেছে, তখন শ্রমজীবি মানুষরা নেমে এসেছে। ধর্মভীরু, হিন্দু-মুসলিম, বাম-নাস্তিক সবাই মিলেই বাংলাদেশ। সবাই আমরা একসাথে হয়েছি বলেই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে পারছি। 


পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমার কাছে এ সময়টা অসম্ভব আনন্দ, বেদনা, আশংকা এবং আশার সময়। এ সব কিছু নিয়েই আমি বেঁচে আছি। আজকের এ সমাবেশটা হলো আনন্দ। আর বেদনার হলো সম্ভবত আজকেও আমরা একজন তরুণকে হারিয়েছি এবং শত শত সন্তান তারা তাদের চোখ হারিয়েছে। জানি না তারা কখনো পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে কিনা। আশঙ্কা হলো গত ১৫ গত বছরে যেই অশুভ শক্তি ও স্বৈরাশাসক জন্ম হয়েছে এবং তাদেরকে মদদ দিয়ে যারা মাথায় তুলে রেখেছে তাদের জন্য।


স্বৈরশাসক কখনো একা একা টিকেনা। কেউ ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় ভূমিকা পালন করে। ইচ্ছায় যারা ভূমিকা পালন করেছে তারা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যাদেরকে কথিত বুদ্ধিজীবী বলা হয়। একজন পুলিশ বলতে পারে সে হুকুমের চাকর, যাকে বললে সে গুলি ছুড়তে বাধ্য। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোন হুকুমের চাকর না। আমরা জানি একটা পশুকে গলায় দড়ি বাঁধলে যেমন সে চলে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আমাদের সাথে তেমন আচরণ করেছে।


আরও পড়ুন: বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে গবাদিপশুর পাশে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা 


আরেকটি শ্রেণি আছে যারা সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছে তারা হলো সাংবাদিক। কোনো পশুও স্বেচ্ছায় গলায় দড়ি পরতে চায়না। কিন্তু সাংবাদিক স্বেচ্ছায় তাদের গলায় দড়ি পরেছে। এখনো অনেক শহীদ পরিবার আছে যারা অসহায়। আহত সন্তানরা এখনো ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না। তোমাদের কাছে আমার একটি দাবি, কোনো শহীদ পরিবার যদি অবহেলিত থাকে আমি বলব এর বিপ্লব ব্যর্থ। একটি সন্তান যদি চিকিৎসা যতোটুকু পাওয়া উচিত, ততটুকু না পায়, তাহলে তোমাদের বিপ্লব ব্যর্থ। তোমাদের অঙ্গীকার করতে হবে কোন মানুষের কাছ থেকে সরে যাব না।


সেমিনারে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম সালমান সাব্বিরের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের সদস্য সারা আহমেদ সাবন্তী, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় রাবিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। 


এমএল/