টেকনাফে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ কর্মহীন

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষগুলোসহ ব্যবসায়ীরাও। পারছেন না ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে, পারছেন না খাদ্য পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় ফ্যামিলির খরচ বহন করতে। যার ফলে ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে দিন দিন।

টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ করিডোর বন্ধ:

টেকনাফ শাহপরীর করিডোরে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু করিডোরে আসলে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু  ২৭/৬/২১ সালের দিকে করিডোর বন্ধ করে দেওয়া কারণে শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন, পারছেন না ভালো করে সংসার চালাতে, পারছেন না ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ বহন করতে। তাই টেকনাফে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ কোন কাজ না পেয়ে দিন দিন অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানান সচেতন মহল।

আরও পড়ুন: চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরের আমদানিকারক সমিতির সভাপতি মো. কাসেম জানান, টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আসা শুরু হয়েছিলো ২০০৩ সালে থেকে, করিডোর চালু হওয়ার পর থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছেন। কিন্তু ২০২১ সালের দিকে এই করিডোর বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ২০ হাজার শ্রমিক এখন বেকার হয়ে পড়েছে।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদক রোধে দীর্ঘদিন ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ, করিডোর বন্ধ, সাধারণ মানুষ কি করবে। শ্রমিকরা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে। এবং বিভিন্ন পন্থায় ঘুমঘুম এর বিভিন্ন জায়গায় থেকে অবৈধভাবে চোরাইপথে গবাদিপশু ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ তাই সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এবং ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে সাধারণ মানুষসহ এবং সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাবে।

টেকনাফ নাফ নদীতে ৩০ হাজার জেলেদের জীবন জীবিকা:

মিয়ানমারের সরকার বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষের কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ মাদকসহ নানা সমস্যার কারণে ২০১৭ সালের দিকে ৩ মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিলো নাফ নদী। কিন্তু ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও নাফ নদী খুলে দেওয়া হয়নি। হাজার হাজার জেলেদের আইয়ের উৎস নাফ নদী এখন বন্ধ।

টেকনাফ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড নাইট্যং পাড়া এলাকায় জেলে আলম জানান, আমার পরিবারে ৪ মেয়ে ৪ ছেলেসহ এক পরিবারে ১০ জন সদস্য রয়েছে, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে নাফ নদী বন্ধ রয়েছে। আমার পরিবার নাফ নদীর উপর নির্ভরশীল। আমি নদীতে মাছ শিকার করতে পারলে চাউল ডাল আনতে পারি, মাছ শিকারে যেতে না পারলে ছেলে মেয়েরা না খেয়ে থাকতে হয়। আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করাতে পারছি না, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে কত কষ্টে দিনযাপন করছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না, রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা অন্য কাজ ও পাচ্ছি না, নাফ নদী খুলে না দেওয়ায় আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ২

জাতীয় মৎস্যজীবী জেলে সমিতির টেকনাফ পৌর শাখার সভাপতি মো. ইব্রাহীম বলেন, তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখা নাফ নদী ৯ টি বছর পেরিয়ে গেলেও নাফ নদী খোলার বিষয়ে এখনো কোন ধরণের সিদ্ধান্ত পাইনি। আমরা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। ৩০ হাজার জেলেদের জীবন যাপন কত কষ্টের বুঝাতে পারছি না, আমরা অনেক মানববন্ধন কর্মসূচি করেছি, এবং বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি, আমাদের জেলেদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে অতিসত্বর খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

টেকনাফ দমদমিয়া জাহাজ ঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ:

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের কারণে ১০ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

জাহাজ ঘাটে স্থানীয়সহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কাজ করে সংসার চালাতেন, এবং অনেকেই এখন অসহায়ত্ব দিনযাপন করছেন। অনেকে পরিবারের ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করাতে পারছেন না। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) উপদেষ্টা দিদার হোসেন বলেন, টেকনাফ সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কষ্টে দিনযাপন করছে। এবং যাত্রীবাহী যানবাহনসহ অনেক নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ কাজ করতেন, আজ অনেক মানুষ একবেলা খেতে পারলেও আরেক বেলা খেতে পারছে না। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে পুলিশে দিলেন স্ত্রী

টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আসা করিডোর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০ হাজার মানুষ বেকারত্ব দিনযাপন করছে। টেকনাফ নাফ নদী বন্ধ প্রায় ২৫ হাজার জেলে কষ্টের দিন কাটাচ্ছে। টেকনাফ দমদমিয়া জাহাজ ঘাট বন্ধ প্রায় ১৫ হাজার বেকারত্ব হয়ে পড়েছে।

টেকনাফের সচেতন মহল জানান, টেকনাফ আইয়ের উৎস যা ছিল সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রায় ৬০ হাজার সাধারণ মানুষসহ শ্রমিকরা অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে,  মানুষ কর্মহীন হওয়ার কারণে দিন দিন অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন সচেতন নাগরিক।

সকলের দাবি মানুষের আইয়ের উৎস গুলো খুলে দেওয়া হলে, শ্রমিকরা সুন্দর জীবনযাপন করে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ বহন করতে পারবে। তখন টেকনাফে আর কর্মহীন মানুষ থাকবে না। শ্রমিকরা জানান, আমাদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সবকিছু খুলে দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এমএল/