ডিজিটাল যুগেও অ্যানালগে চলছে নোবিপ্রবির ব্যাংকিং কার্যক্রম
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:২২ অপরাহ্ন, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪
অনলাইন ডাটাবেজ আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যুগেও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের হয়রানির যেন শেষ নেই। সেকেলে পদ্ধতিতে চলছে নোবিপ্রবির ব্যাংকিং কার্যক্রম। ভর্তি, পরীক্ষার ফরম ফিলাপ,সনদ পত্র ও নম্বর পত্র উত্তোলন কিংবা অন্যান্য কাজের জন্য লম্বা লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয় সেবা গ্রহীতাদের।
এ অবস্থায় নানা বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অথচ পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে হাতের নাগালেই সব সুবিধা পাওয়া যেতো। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগকে আমলেই নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেক বছর কর্তৃপক্ষ আশার বাণী শুনিয়ে গেলেও তাদের দায়সারা ভাব সবসময়।
আরও পড়ুন: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা এবং হলের সিট বৈধতার কারণে নম্বর পত্র উত্তোলনের প্রয়োজন হয়। এছাড়া অন্যান্য বিভাগগুলোও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। একইসঙ্গে চলছে ফরম ফিলাপ, নম্বর নম্বর পত্র উত্তোলন এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার কাজ। এসব কাজে বিভাগের দফতরে সৃষ্টি হচ্ছে জটলা, ব্যাংকে দীর্ঘ সারি।
নোবিপ্রবির অগ্রণী ব্যাংকের শাখায় সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা অগণী ব্যাংক শাখায় টাকা জমা দিতে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছে। দুইটি কাউন্টার থাকা সত্ত্বেও টাকা জমা নেয়া হয় একটিতে। ফলে দীর্ঘ লাইনে একই সাথে দাঁড়াতে হয় পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা একটু আশ্রয় খুঁজছেন যাতে ব্যাংকের রশিদ রেখে তা পূরণ করা যায়। শিক্ষার্থীদের এই চাপ এক বুথে সামাল দেওয়া দুষ্কর হয়ে পরেছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাংক ব্যবস্থা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে সেকেলে পদ্ধতিতে। ফলে সকল প্রকার ফি জমা দেওয়া, সনদ ও নম্বর পত্র উত্তোলনসহ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় বিভিন্ন দপ্তরে উপস্থিত হয়ে লাইনে দাড়িয়ে। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অন্ত নেই।
এনালগ সিস্টেমের কারনে প্রথমে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হয় ফর্ম ও রশিদ। সেগুলো পূরণ করে ভবঘুরের মত ঘুরতে হয় বিভাগ থেকে আবাসিক হল, হল থেকে ব্যাংক, ব্যাংক থেকে আবার নির্দিষ্ট স্বাক্ষরকারীর কক্ষে। কখনো নির্দিষ্ট অফিসে স্বাক্ষরকারিকে না পেলে বিভিন্ন ভবনে হন্যে হয়ে খু্ঁজতে হয় একটি স্বাক্ষরের জন্য।
এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে রসিদ সংগ্রহ, প্রতিটি খাতে আলাদা অর্থ জমাদান, ধীরস্থির কার্যক্রম, ব্যাংকে দীর্ঘ লাইন সবমিলিয়ে যেন এক জগাখিচুড়ি অবস্থা । এনালগ সিস্টেমের জটিল এই প্রক্রিয়ার কারনে অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে ।
শিক্ষার্থীরা জানায়,' ব্যাংকে দুইটি কাউন্টার থাকার পরেও একটি সবসময় বন্ধ থাকে। ফলশ্রুতিতে একজনের পক্ষে এত ছাত্রছাত্রীদের কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠে না।যার ফলে লম্বা লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় ক্লাস মিস দিয়ে ব্যাংক সেবা নিতে হয়।বিশেষ করে টাকা জমা দেওয়ার শেষ সময় গুলোতে বিড়ম্বনা বেশি থাকে।অপর্যাপ্ত জায়গা, অপর্যাপ্ত স্টাফের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রতি নিয়ত ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়।'
ভুক্তভোগী কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান বলেন, ' ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ তার মধ্যে আমরা আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমাদের যে হয়রানির শিকার হতে হয় তা মধ্যযুগের অত্যাচারকেও হার মানায়। এই অবস্থার পরিবর্তন সময়ের দাবি। ব্যাংকিং এর সব সেবা অনলাইন এর আওতায় আনা হোক। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট প্রোফাইল তৈরী করা হোক।'
আরও পড়ুন: নোবিপ্রবির তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নতুন কমিটি গঠন
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে নোবিপ্রবি আগ্রণী ব্যাংক শাখার সহকারী পরিচালক সুব্রত দাস বলেন, 'পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় আমরা একই সাথে দুইটি কাউন্টার চালাতে পারছি না। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানোর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে প্রয়োজন মাফিক জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, 'আমরা অগ্রণী ব্যাংকের সাথে কথা বলে আরেকটি কাউন্টার চালুর ব্যবস্থা করব। ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ যৌথ উদ্যোগে আলাদা ভবন করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমও দ্রুত চালু হলে আশাকরি এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।'