সাতশত টাকার পুঁজির দোকানে হেরিকেন ধরিয়ে দিল চোর চক্র
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:৪৩ পিএম, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

১০ফুট লম্বার ভাঙ্গাচুরা দোকানে রোজ হয় দুই থেকে তিন’শ টাকা বিক্রিতে লাভ হয় মাত্র পঞ্চাশ টাকা। আর এই পঞ্চাশ টাকা লাভেই চলছে কোনমতে এই বুড়া বুড়ির সংসার, তবে এই বয়স্ক মানুষটার এইটুকু সুখই সইলো না, চোর চক্রের রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে তার নড়বড়ে দোকানটির দরজা ভেঙ্গে সব মালামাল নিয়ে যায় তারা। এমনকি দোকানে থাকা ব্যাটারিটাও নিয়ে গেলে ব্যাটারির অভাবে এখন হেরিকেন জ্বালিয়ে কোনমতে দেখছেন এই বৃদ্ধ।
তারপর ও বৃদ্ধার নেই কোন আক্ষেপ আল্লাহ উপর ভরসা করেই প্রতিদিন চলছে তার কর্মযজ্ঞ। তবে দশ থেকে বিশ হাজার টাকা পুঁজি হলে আবারও তাকে এই কর্মযজ্ঞে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কলাপাড়ার ডালবুগন্জ ইউনিয়নের সুরডুগী সোনখোলা বাদাঘাটে মসজিদের পাশেই ছোট্ট দোকাটি গেলেই দেখা মিলে এই বৃদ্ধার ৮০ বছর ছুঁইছুই এই মানুষটার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে, মেয়ে দুটি বিবাহ দিয়েছেন সেই ৩০ বছর আগেই মেয়েদের অর্থিক সংকটে থাকায় বাবা মায়ের জন্য ভালোবাসা থাকলেও অর্থিক সাহায্য করতে না পাড়ায় তাদেরও অনেক আক্ষেপ। জীবিকার তাগিদে ছেলে যশোরে থাকলেও বছরে একবার আসেন বাবার কাছে তবে করতে পাড়েন না তেমন তার অর্থিক সহায়তা।
আরও পড়ুন: রাঙ্গাবালীতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন
এদিকে পঞ্চাশ টাকা লাভ নিয়েও কোথাও কোন মানুষের মৃত্যু হলেই ছুটে যান তার কবরস্থান তৈরি করতে গোসল জানাজা সব শেষ করেই ক্লান্ত শরীরে আবারও বসেন সেই ছোট দোকানটিতে। এভাবেই জীবন চলছে এই বৃদ্ধের জীবন।
এই বৃদ্ধ জব্বার হোসেন বলেন, গায়ে যখন শক্তি ছিলো তখন মানুষের বদলা দিয়ে সংসার চালাতাম কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের সক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই ছোট দোকানে বসেই জীবিকার সংগ্রাম চলছে। তবে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি মৃত মানুষের কবর খুঁড়বো।
হাজার দশেক টাকা পুজি হলেই মোটামুটি দোকানে কিছু মালামাল নিতে পারতাম কিছুটা হলেও আমার কস্ট লাঘব হতো। আসলে আমার জায়গাজমি নেই রাস্তার পাশে আমরা স্বামী স্ত্রী বসবাস করি বছরে একবার মেয়ে জামাই নিতে পারিনা আমাদের বাড়িতে, এই জন্য খুবই কস্ট হয় তবুও আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্য এতেই সন্তুষ্ট আছি।
আরও পড়ুন: রাঙ্গাবালীতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে নৌবাহিনীর অভিযান
একই এলাকার বাসিন্দা তাওহীদ জানান, তার দোকান খুব ছোট কম মানুষ যায় মূলত তার দোকানে মালামাল নেই তবুও রোজ দোকান খুলছেন। আবার মৃত বাক্তির কবর খোঁড়াসহ সকল কাজ করে থাকেন তিনি খুব ভালো মানুষ। তবে তার দোকানটি চুরির ঘটনা শুনে আমি খুবই হতাশ হয়েছি এমন একটা মানুষের ঘর চুরি করে এত নিম্ন মনের মানুষ আছে এখন আমাদের সমাজে ভাবতেই অবাক লাগে এদেরকে সঠিক বুঝ দিক আল্লাহ।
গ্রামের অপর বাসিন্দা ফেরদৌস জানান, আমরা প্রতিদিনই কমবেশি তার দোকানে চা পান খাই খুব অল্প পুঁজি তার দোকানটি ভেঙ্গে সব নিয়ে গেল তার এই সুখ ও মানুষের সহ্য হলোনা। তিনি চোখে কম দেখেন কানে কম শোনেন আগে তো সোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি চালিত আলো দেখতেন, এখন তো হেরিকেন জ্বালিয়ে কোনমতে দেখছেন।
ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা হেদায়েত উল্লাহ বলেন, আমি বৃদ্ধের দোকানে চুরির ঘটনা আপনার মাধ্যমে শুনলাম আমি আসলেই হতাশ হয়েছি। এমন একটি লোকের ঘর মানুষ চুরি করে যাই হোক আমার পরিষদে এখন বর্তমানে তেমন অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সহায়তা করব পাশাপাশি কোন অসচ্ছল ব্যক্তিদের বরাদ্দ আসলে আমি তাকে সহায়তা করব।
এমএল/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

নেছারাবাদে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

ঝালকাঠির নলছিটিতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

তারেক রহমানের সহযোগিতায় মাথা গোজার ঠাই পেলেন পিরোজপুরের শাহীনুর

পবিপ্রবিতে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে দুই কর্মকর্তা-কর্মচারি বরখাস্ত
