বৈষম্যের অবসান চান পেট্রোবাংলার অধীনস্থ অস্থায়ী কর্মচারীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২০ অপরাহ্ন, ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

পেট্রোবাংলা ও পেট্রোবাংলার আওতাধীন ১৩টি স্বায়ত্বশাসিত কোম্পানীর চাকরিতে বৈষম্য দূর করতে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে অস্থায়ী কর্মচারীরা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জতীয় প্রেসক্লাবে পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন সকল কোম্পানির অস্থায়ী কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পেট্রোবাংলা ও পেট্রোবাংলার আওতাধীন ১৩টি স্বায়িত্বশাসিত কোম্পানীর চাকরিতে বৈষম্য দূর করার এক দফা দাবি জানিয়েছে অস্থায়ী কর্মচারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত আউটসোর্সিং, মাষ্টাররোল, চুক্তিভিত্তিক, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের সকলকে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে বয়স শিথিল করে স্থায়ীকরণ করার দাবি তুলে ধরেন প্রধান সমন্বয়ক মো. রফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: পেট্রোবাংলায় হামলা, সাময়িক বরখাস্ত হচ্ছেন তিতাসের ৫ কর্মকর্তা
এ সময় বক্তারা বলেন, স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকারী গ্রেডে বেতন, প্রফিট বোনাস, উৎসব বোনাস, চিত্তবিনোদন ভাতা, এক্সজেসিয়া বোনাস, ইনসেনটিভ বোনাস, পোশাক ভাতা, সন্তানদের জন্য চিকিৎসা ভাতা, বৈশাখী ভাতা, ইনক্রিমেন্ট ও সকল প্রকার ছুটিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেলেও অস্থায়ী কর্মচারীরা শুধুমাত্র মাসিক বেতন পেয়ে থাকে। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট বৈষম্য, এর অবসান হওয়া দরকার।
আউটসোর্সিং নীতিমালা ২০১৮ বলবৎ থাকলে এই বৈষম্য অব্যাহত থাকবে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য অন্তরায়। স্থায়ী কর্মচারীদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা থাকলে এই নীতিমালার অনুযায়ী আমাদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা নেই। ফলে আমরা বছরের পর বছর একই বেতন কাজ করে যাচ্ছি। ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা, ২০১৮’ প্রণয়ন করার ফলে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একই পদের স্থায়ী ও আউটসোর্সিং-এর মধ্যে বেতন বৈষম্য তৈরী হয়েছে। এছাড়া বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বছরের দু’টি ঈদ, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এবং বাংলা নববর্ষ বৈশাখ উপলক্ষ্যে আমাদের কোনোপ্রকার ভাতা দেওয়া হয় না।
আরও পড়ুন: পেট্রোবাংলায় তিতাসের কর্মীদের হামলা-ভাঙচুর
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর নবম অধ্যায়ের ‘কর্মঘন্টা ও ছুটি’ এর ১০৮ নাম্বার ধারায় অধিকাল কর্মের জন্য অতিরিক্ত ভাতা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের নাম করে আমাদের অতিরিক্ত কাজের জন্য অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা অস্থায়ী কর্মচারী হওয়ার কারণে আমাদের কোনো প্রকার ছুটি দেওয়া হয় না।
সোহেল নামে এক কর্মচারী বলেন, আমাদের স্ব স্ব কোম্পানীতে জনবল নিয়োগ দিলেও অমরা সেখানে আউটসোসিং বলে অবহেলিত। এমন দেখা যায়, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক যথেষ্ঠ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা থাকা সত্বেও আমাদের কে সেখানে সুযোগ দেওয়া হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আমরা স্ব স্ব কোম্পানীর জনবল চাহিদার নিয়োগে দরখাস্তরে মাধ্যমে লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও, মৌখিক পরিক্ষায় আমাদের কে সাটাই করা হয়, এর একমাত্র কারণ আমরা আউটসোসিং হিসেবে কর্মরত ও তাদের নিয়োগ বাণিজ্য। আমরা এই অভিশপ্ত দাসপ্রথা থেকে মুক্তি চাই।
আরও পড়ুন: এডিসের লার্ভা পাওয়ায় পেট্রোবাংলাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা
আমাদের মধ্যে যারা নারী কর্মচারী রয়েছেন তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে চাকরী বাঁচাতে সন্তানকে কোরবানী দিতে হয় অথবা সন্তান বাঁচাতে নিজের উপার্জন আয়ের একমাত্র পথ চাকরী হারাতে হয়। পক্ষান্তরে একজন স্থায়ী নারী কর্মচারীর ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাসের ছুটিসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।
কোম্পানির স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী হওয়ার কারণে চিত্ত বিনোদনের জন্য স্বপরিবারে ৭ দিন প্রমোদ ভ্রমণ, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ প্রাপ্ত বেসিকের ১ বেসিক সমপরিমাণ টাকা পেয়ে থাকেন যা আমাদের দেওয়া হয় না। আউটসোর্সিং-এর নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের কোনো ভবিষ্যত নেই। চাকরী শেষে বৃদ্ধ অবস্থায় খালি হাতে ফিরে পরিবারের বোঝা হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
এসময় দেশের সংবিধানের আলোকে পেট্রোবাংলা ও এর আওতাধীন সকল স্বায়ত্বশাসিত কোম্পানিকে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত করতে ‘অস্থায়ী কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ’ জোর দাবি জানায়।
আরএক্স/