সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, ২রা অক্টোবর ২০২৪
বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তিত করার। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে হবে তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। বর্তমান এই সময়টা খুব ভালো সময়, এমন সময় দেশে আর আসবে কিনা জানিনা। সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা অবহেলার শিকার। আমাদের চিন্তা-ভাবনা করে এ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
বুধবার (২ অক্টোবর) ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে "৭ কলেজের শিক্ষা সংকট সমাধান কোন পথে?" শীর্ষক শিক্ষার্থী-শিক্ষক সংলাপে এ মন্তব্য করেন অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।
আরও পড়ুন: হলে কম সিট পেয়ে শিক্ষককে হেনস্তা করল ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতা
কামরুল হাসান মামুন বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভালো থাকলে দেশের সবাই ভালো থাকবে। সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের যা চাওয়া, আমারও একই চাওয়া। আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ না। আমি ছয়-সাত বছর ধরে ভেবেছি সাত কলেজের সমস্যার বিষয়ে। সমস্যা সমাধান আলোচনা স্বাপেক্ষ। সাত কলেজ সৃষ্টির পেছনে তোমাদের মঙ্গলের কথা বিবেচনা না করে, সব পক্ষের সাথে আলোচনা না করে, একজন বা দুইজন মানুষের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এটি করা হয়েছে। রাষ্ট্র তোমাদের কথা কখনও ভাবে নাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে ক্লাসরুম, শিক্ষক কতজন? দুইটা রুমে অনার্স, মাস্টার্স, এইচএসসি সবকিছু হয়। শিক্ষকদের বসার জায়গার পর্যন্ত সংকট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নির্ধারণ করে শিক্ষকের মান, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা ইত্যাদি বিষয়ের উপরে। তোমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবহেলা করা হয়।আমাদের যেকোন সিদ্ধান্তের পেছনে কোন ভাবনা নেই, অনেক গ্রুপের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।বিশ্ববিদ্যালয় করায় যায় কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কনসেপ্ট। ঢাবি এখনো পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পোস্টডক, পিএইচডি লাগবে। পোস্টডক নেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পোস্টডক, পিএইচডি মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান তৈরি হয়। আমাদের জ্ঞান তৈরির বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
সাত কলেজের বিষয়ে কামরুল হাসান মামুন বলেন, সাত কলেজের এটা কোন সিস্টেম হতে পারে না। অতিদ্রুত এটা বন্ধ করা উচিত। যেকোন স্থায়ী পরিবর্তন চিন্তাভবনা করে আস্তে আস্তে করতে হবে। সবকিছুর মূলে শিক্ষার বরাদ্দ, প্রতিবছর আমাদের শিক্ষায় বরাদ্দ কমছে। তাহলে শিক্ষার মান কিভাবে ভালো হবে। শিক্ষার মান বজায় রেখে কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব এটা নিয়ে ভাবা হয়নি। আমাদের সবাইকে মিলে চাপ দিতে হবে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ইউনেস্ক পরামর্শ দিয়েছে শিক্ষায় বরাদ্দ মোট জিডিপির ৬ % করতে হবে।
আরও পড়ুন: দুই হলে একইদিনে ৩ ফোন চুরি, নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা
সাত কলেজ সমস্যার বিষয়ে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলন করেছিল সফল হয়নি। শিক্ষার্থীরা ১৫ দিনে সফল হয়েছে। সাত কলেজের সমস্যার সমাধান শিক্ষার্থীদের কাছেই আছে। শিক্ষার্থীরা চাইলে খুব শিগগিরই সাত কলেজের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
সংলাপ সভায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, সাত কলেজের জন্য কোন একাডেমিক ক্যালেন্ডার নেই। সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র তুলতে গেলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কলেজগুলোতে ক্লাসরুমের সংকট। স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র সাত কলেজের কোথাও নেই। ফলাফলে প্রকাশে বিলম্ব হয়। যার ফলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। কলেজগুলোতে ২০ হাজার শিক্ষার্থী নতুন করে ভর্তি হয় কিন্তু পর্যাপ্ত আবাসন নেই। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই ইত্যাদি সমস্যার কথা তুলে ধরেন তারা। ঢাবির সাথে আমাদের সম্পর্ক শোষিতের উল্লেখ করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সংলাপ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল সাহাসহ সাত কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এমএল/