অন্তর্বর্তী সরকারকে ১২ দলীয় জোটের ১৪ প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫১ অপরাহ্ন, ১৬ই অক্টোবর ২০২৪
রাজনৈতিক দল ও সব সামাজিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন, বিডিআর বিদ্রোহ ও প্রশাসন সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন ১২ দলীয় জোট।
মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি ও জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তুলে ধরেন জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।
প্রস্তাবগুলো হল-
>>প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের যে সমস্ত দোসর কর্মরত আছেন তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল ও ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
>> অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দু-একজন বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট ব্যাহত করছে, তাদের সরাতে হবে এবং গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।
>> পিলখানা ও শাপলা চত্বরের গণহত্যার পৃথক বিচার কমিশন গঠন এবং বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও নির্দোষ জওয়ানদের মুক্তি দিতে হবে। ৪. ছাত্র-জনতার অপরিসীম ত্যাগ, রক্তদান ও জীবনের বিনিময়ে যে স্বপ্ন ও অর্জন তাকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না এবং অন্তবর্তী সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কাজের অগ্রগতি জাতির সম্মুখে তুলে ধরতে হবে, নিজ নিজ সম্পদের হিসাব দেয়ার ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে।
>> নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন, এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করার আইন অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল, নির্বাচন সংস্কার কমিশনে জেসমিন তুলিসহ দুই-একজন বিতর্কিত বা ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগীদের নিয়োগ বাতিল এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কালো আইন বাতিল করতে হবে।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা রবির পদ স্থগিত
>> ২০০৭ সালে থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতার সৃষ্টি পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের করতে হবে।
>> জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, আইন ও স্বাস্থ্যসহ যেসব মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় সেখানে দায়িত্ব রদবদল বা নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে কার্যকর গতিশীল করতে হবে এবং প্রয়োজনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সহকারী উপদেষ্টা নিয়োগ করা।
>> অবিলম্বে গণতদন্ত কমিশন গঠন করে জুলাই-আগস্টে সংগঠিত সব নৃশংসতার ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরা এবং প্রতিটি শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং আহত ও পঙ্গু ছাত্র-জনতার চিকিৎসা কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সিভিল প্রশাসন ও সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তা ও সিপাহিদের মধ্যে যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদেরকে কমিশনের মাধ্যমে চাকরিতে সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: বিকালে হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া
>> ফ্যাসিবাদের দোসর, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী ব্যক্তি, সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের বিচারের জন্য 'মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল'-এর পাশাপাশি 'ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন' গঠন করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করা।
>> রাষ্ট্র সংস্কারের ৬টি কমিশনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে একটি জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠন এবং সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনীর সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্যও পৃথক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
>> দ্রব্যমূল্য সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ, চাঁদাবাজি-ছিনতাই-দুর্নীতি বন্ধ করা, ফুটপাত জনগণের চলাচলের জন্য হকারমুক্ত করা, অসহনীয় যানজট নিরসনসহ সব জনভোগান্তি দূর করার জন্য প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও পরিবর্তন-প্রত্যাশী ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কমিউনিটি মনিটরিং টিম গঠন করা।
>> ফ্যাসিবাদী সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে যে সকল দেশবিরোধী চুক্তি করেছে তা পর্যালোচনা করে অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে এবং স্বার্থবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে যারা অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছে এবং বিদেশে টাকা পাচার করে তাদের সম্পত্তি জব্দসহ দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
>> রাজনৈতিক দল ও সব সামাজিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় এবং যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে কার্যকর সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
জেবি/এসবি